ঢাকা, শুক্রবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

অবিরাম বর্ষণে প্লাবিত বসতবাড়ি, ঘর ছাড়ছে মানুষ

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪২৭ ঘণ্টা, জুলাই ১২, ২০১৯
অবিরাম বর্ষণে প্লাবিত বসতবাড়ি, ঘর ছাড়ছে মানুষ বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে এলাকার মাঠ-ঘাট ও বসতবাড়ির আঙিনা। ছবি: বাংলানিউজ

নেত্রকোণা: টানা চারদিন ধরে চলছে অবিরাম বর্ষণ। নদীনালা ও খালবিলের পানি উপচে পড়ে নেত্রকোণার বিভিন্ন স্থানে ডুবে যাচ্ছে মাঠঘাট আর মানুষের বসতবাড়ি। পানিতে ছেয়ে যাচ্ছে স্কুল-কলেজ ও অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।

বিশেষত জেলার কলমাকান্দা, দুর্গাপুর ও হাওরখ্যাত খালিয়াজুরী উপজেলায় পাহাড়ি ঢল আর বৃষ্টিতে পানির পরিমাণ বেড়েই চলছে। শান্ত নদী আর টলটলে জলের হাওরগুলো ধরেছে ভিন্ন রূপ; উথাল-পাতাল আর অথৈ-উচ্ছ্বাস।

এসব উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের প্রায় দুই শতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়ে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে স্থানীয়রা। জীবন বাঁচাতে তারা নিজেদের বাড়িঘর ছেড়ে ইউনিয়ন পরিষদে আশ্রয় নিচ্ছেন।

দুর্যোগ কবলিত মানুষদের নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নিতে কাজ করছে জেলা-উপজেলা প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। পৌঁছে দিচ্ছে সকলের হাতে প্রয়োজনীয় সহায়তা।

দুর্গাপুর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফারজানা খানম বাংলানিউজকে জানান, পাহাড়ি ঢল আর অবিরত বর্ষণে উপজেলার প্রধান নদী সোমেশ্বরীসহ অন্যান্য নদীগুলোর পানি বেড়ে গেছে।

গাঁওকান্দিয়া, কুল্লাগড়া, কাকৈরগড়া ও বিরিশিরি ইউনিয়নের ১১ টি গ্রাম ইতোমধ্যে প্লাবিত হয়েছে। এতে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে ৩৮০ টি পরিবার। পরে তাদেরকে ইউনিয়ন পরিষদ ভবনে আশ্রয় দেয়া হয়। বন্যা দুর্গত মানুষদের ১০ মেট্রিক চাল ও ৩০০ প্যাকেট শুকনো খাবার বরাদ্দা দেয়া হয়েছে।

খালিয়াজুরী উপজেলার বাসিন্দা অমিতাভ ও রাশেদুল বাংলানিউজকে বলেন, হাওরে অল্পসময়ে প্রচুর পরিমাণে পানি বেড়েছে। অপেক্ষাকৃত নিচু এলাকার বিভিন্ন গ্রামে পানি ঢুকতে শুরু করেছে। বন্যা আতঙ্কে চরম দুশ্চিন্তায় সময় পার করছেন হাওরবাসী।

কলমাকান্দা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জাকির হোসেন বাংলানিউজকে জানান, উপজেলার সবকটি ইউনিয়নের সিংহভাগ বাড়িঘরসহ হাট-বাজার ও রাস্তাঘাট পানির নিচে তলিয়ে গেছে। পরিস্থিতি মোকাবেলায় আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত করা থেকে শুরু করে, বন্যার্তদের শুকনো খাবার সরবরাহ, মেডিকেল টিম গঠন ও উপজেলায় কন্ট্রোল রুম স্থাপনসহ সবধরনের প্রস্তুতি নিয়েছে প্রশাসন।

বারহাট্টা উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফরিদা ইয়াসমিন বাংলানিউজকে জানান, পানিতে উপজেলার রায়পুর ও বাউসী ইউনিয়নে ১২টি গ্রামের মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। তাদের শুকনো খাবার দেওয়ার পাশাপাশি নিরাপদে রাখার চেষ্টা চলছে।

অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মুহাম্মদ আরিফুল ইসলাম জানান, বন্যা কবলিত হওয়া কলমাকান্দা ও দুর্গাপুর উপজেলায় ২০ মেট্রিকটন চাল, ৬০০ প্যাকেট শুকনো খবার বরাদ্দ হয়েছে। এছাড়াও খবর পাওয়া গেছে, বারহাট্টা উপজেলার ২ টি ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রাম বন্যায় আক্রান্ত হয়েছে। সেখানে ইউএনও মাঠ ঘুরে শুকনো খাবার বিতরণ করবেন। তালিকা করে তাদের সরকারি সহায়তা দেওয়া হবে। সবগুলো উপজেলার ক্ষতিগ্রস্তদের পূর্ণ সংখ্যা বের করে সুবিধা-সহযোগিতার পরিমাণ বাড়ানো হবে।  

জেলার উল্লেখযোগ্য নদী সোমেশ্বরী, কংস ও ধনু নদীর পানি বিপদ সীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে বলেও জানান তিনি।

এদিকে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদফতরের রাডার অপারেটর মো. নাজমুল হক জানান, নেত্রকোণায় চারদিনে (সোম-বৃহস্পতিবার) সন্ধ্যা পর্যন্ত ১৮৬ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। এরমধ্যে সোমবার (০৮ জুলাই) বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ২৮ মি.মি, মঙ্গলবার (০৯ জুলাই) ৫৭ মি.মি, বুধবার (১০ জুলাই) ৪৩ মি.মি ও বৃহস্পতিবার (১১ জুলাই) সন্ধ্যা ৭ টা পর্যন্ত বৃষ্টি হয়েছে ৫৮ মিলিমিটার।

বাংলাদেশ সময়: ১০২৬, জুলাই ১২, ২০১৯
এমএমইউ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।