ঢাকা, বুধবার, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

বরিশাল-ভোলায় পদ্মার চেয়েও বড় সেতু, অর্থের খোঁজে সরকার

মফিজুল সাদিক, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩২৫ ঘণ্টা, জুলাই ১২, ২০১৯
বরিশাল-ভোলায় পদ্মার চেয়েও বড় সেতু, অর্থের খোঁজে সরকার

ঢাকা: ভোলার সঙ্গে বরিশালসহ অন্য জেলাগুলোর যোগাযোগ সহজ করতে নির্মিত হবে দেশের দীর্ঘতম সেতু। এর দৈর্ঘ্য হবে ৮ দশমিক ৬৪ কিলোমিটার, যা নির্মাণাধীন পদ্মা সেতুর চেয়েও দীর্ঘ। ইতোমধ্যেই সেতুটি নির্মাণের জন্য সেতু বিভাগ প্রাথমিক উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা (পিডিপিপি) পরিকল্পনা কমিশনে পাঠিয়েছে। বিশাল দৈর্ঘ্যের এ সেতুটির নির্মাণব্যয়ও হবে বিশাল। প্রাথমিকভাবে অর্থের সন্ধানে পরিকল্পনা কমিশন এ পিডিপিপি অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগে (ইআরডি) পাঠিয়েছে।

ইআরডি সূত্র জানায়, প্রাথমিকভাবে প্রকল্পের প্রস্তাবিত ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে ১২ হাজার ৯১৬ কোটি টাকা। ইআরডি এ অর্থ সংগ্রহে কয়েকটি দেশ ও সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করছে।

এর মধ্যে অন্যতম জাপান সরকারের উন্নয়ন সংস্থা (জাইকা), এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি), ইসলামী উন্নয়ন ব্যাংক (আইডিবি) ও চীন।
 
ইআরডির এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বাংলানিউজকে বলেন, বরিশাল ও ভোলাকে সংযুক্ত করতে দেশের সবচেয়ে বড় সেতু নির্মাণ করা হবে। এটা সরকারের অন্যতম মেগা প্রকল্প। সেতুটি নির্মাণের জন্য আমরা উন্নয়ন সহযোগী খুঁজছি। ইতোমধেই কয়েকটি দেশ ও সংস্থাকে চিঠি দিয়েছি। বাংলাদেশ এখন ঋণ পরিশোধে অন্যতম। আশা করছি, খুব শিগগরিই এ কাজের উন্নয়ন সহযোগী খুঁজে পাওয়া যাবে। তবে, আমরা ঋণ নেওয়ার ক্ষেত্রে তাড়াহুড়ো করছি না, ধীর গতিতেই এগোচ্ছি।
 
সেতু বিভাগ সূত্র জানায়, ‘কন্সট্রাকশন অব ভোলা ব্রিজ অন বরিশাল-ভোলা রোড ওভার দ্য রিভার তেতুলিয়া অ্যান্ড কালাবদর’ প্রকল্পের আওতায় বৃহৎ সেতুটি নির্মিত হবে। প্রকল্পটির মূল উদ্দেশ্য, বরিশাল ও ভোলা জেলার মধ্যবর্তী তেতুলিয়া ও কালাবদর নদীর ওপর সেতু নির্মাণের মাধ্যমে ভোলা জেলার সঙ্গে দেশের মূল অংশ বরিশালের সরাসরি সড়ক যোগাযোগ স্থাপন করা।  

প্রকল্পের আওতায় ৪৮৫ দশমিক ৯৭ হেক্টর জমি অধিগ্রহণ করা হবে। ১ দশমিক ০৬ কিলোমিটার দীর্ঘ এপ্রোচ সেতু, দুই কিলোমিটার সংযোগ সড়ক ও চার কিলোমিটার নদীশাসনের কাজ করা হবে।  

যমুনা নদীর ওপর বঙ্গবন্ধু বহুমুখী সেতুর দৈর্ঘ্য ৪ দশমিক ৮ কিলোমিটার। আর, পদ্মা সেতু ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ। এতে ৪২টি পিলারের ওপর বসবে মোট ৪১টি স্প্যান। পদ্মা সেতুর মূল আকৃতি হবে দোতলা। কংক্রিট ও স্টিল দিয়ে নির্মিত হচ্ছে এ সেতুর কাঠামো। স্বপ্নের এ সেতুর নির্মাণকাজ শেষ করতে ব্যয় তৃতীয় দফায় আরও ১ হাজার ৪শ’ কোটি টাকা বাড়ানো হচ্ছে। এতে পদ্মা সেতুর মোট ব্যয় দাঁড়াবে ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি ৩৮ লাখ টাকা। সে হিসাবে ভোলা ও বরিশাল জেলা সংযোগ সেতু নির্মাণে মোট ব্যয় ৫০ হাজার কোটি টাকা ছাড়াবে বলে ধারণা সংশ্লিষ্টদের। এ জন্যই বৈদেশিক ঋণ সহায়তার ওপর ভিত্তি করে সেতুটি নির্মাণের ইচ্ছা সরকারের।
 
সেতু বিভাগ সূত্র জানায়, ভোলা বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ দ্বীপ। এর চারপাশে লক্ষীপুর, বরিশাল, পটুয়াখালী, নোয়াখালী ও বঙ্গোপসাগর। এ জেলায় রয়েছে প্রাকৃতিক গ্যাস, যা বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যবহৃত হচ্ছে। তবে, জেলাটি দেশের মূল অংশ থেকে বিচ্ছিন্ন। বর্তমানে ফেরি ও অন্য নৌযানের মাধ্যমে ভোলার সঙ্গে পাশের জেলাগুলোর যোগাযোগ চালু আছে। সরাসরি সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা না থাকায় ভোলা থেকে অন্য জেলাগুলোয় পণ্য আনা-নেওয়া ও যাতায়াত বেশ কঠিন। এটি জেলার ব্যবসা-বাণিজ্যসহ আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে বিরূপ প্রভাব ফেলছে।
 
ভোলা ও বরিশালে দেশের দীর্ঘতম সেতু নির্মাণ প্রসঙ্গে সেতু বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (উন্নয়ন) আনোয়ার হোসেন বাংলানউজকে বলেন, দেশের সবথেকে বড় সেতুটি নির্মিত হলে ভোলা পদ্মা সেতুর মাধ্যমে ঢাকার সঙ্গে সরাসরি সংযুক্ত হবে। এতে যাতায়াত ও উৎপাদন খরচ কমবে। ওই এলাকায় নতুন নতুন শিল্প-কারখানা গড়ে উঠবে। এর ফলে কর্মসংস্থান বাড়বে, যা দরিদ্র্যতা কমিয়ে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে। এ জন্য সেতুটি নির্মাণে আমরা জোর প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছি।

বাংলাদেশ সময়: ০৯২৪ ঘণ্টা, জুলাই ১২, ২০১৯
এমআইএস/একে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।