ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

ময়মনসিংহে পুলিশে চাকরি পেলেন ২৫৭ জন

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫০০ ঘণ্টা, জুলাই ৯, ২০১৯
ময়মনসিংহে পুলিশে চাকরি পেলেন ২৫৭ জন টিআরসি পদে উত্তীর্ণদের ফুল দিয়ে অভিনন্দন জানাচ্ছেন পুলিশ সুপার (এসপি) শাহ আবিদ হোসেন। ছবি: বাংলানিউজ

ময়মনসিংহ: ময়মনসিংহে মাত্র ১০০ টাকায় ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল (টিআরসি) পদে ২৫৭ জন উত্তীর্ণ হয়েছেন।

রিকশা চালকের মেয়ে ফারজানা আক্তার সুমি। স্বপ্ন ছিল পুলিশে চাকরি করার।

কিন্তু স্বপ্নের সঙ্গে বাস্তবতার যোজন যোজন ব্যবধানে আশাহত হয়েছিলেন। হঠাৎ একদিন জানতে পারলেন পুলিশে চাকরি পেতে কোনো টাকা-পয়সা লাগে না। পরে আবেদন ফরম পূরণ করে লাইনে দাঁড়ালেন।  

সব বাছাইয়ে মেধা ও যোগ্যতায় উত্তীর্ণ হলেন। সোমবার (০৮ জুলাই) রাত ৮ টায় ময়মনসিংহ পুলিশ লাইন্সে ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল (টিআরসি) পদে ফলাফল ঘোষণার পর আনন্দে কেঁদে ফেললেন এ তরুণী। পাশে এসে দাঁড়ালেন বাবা উমর ফারুক (৪৫)।  

উমর ফারুক বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমার জীবনের সবচেয়ে খুশির দিন আইজক্যা (আজকে)। বিনা পয়সায় আমার মাইয়ার (মেয়ের) চাকরি হইছে। মাগনা (টাকা ছাড়া) চাকরি হয় এইড্যা (এটি) আইজই (আজ) দেখলাম। ’ 

সুমির বাড়ি ময়মনসিংহ সদর উপজেলার সুহিলা গ্রামে। দারিদ্র্যের অন্ধকার ঘরে বেড়ে উঠেছেন এতিম কাজল মিয়া। মাত্র ১০০ টাকায় পুলিশ কনস্টেবল পদে চাকরি হয়েছে তার। নাম ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গেই আবেগ আপ্লুত কাজল। কথা বলতে পারছিলেন না।  

জেলার তারাকান্দা উপজেলার বকশীমুল এলাকার এ তরুণ বলেন, ‘আমার বাবা বেঁচে থাকলে অনেক খুশি হতেন। আমার মা এখনো জানেন না চাকরি হয়েছে। মাকে মিষ্টিমুখ করিয়ে এ খুশির সংবাদ দেবো। আমি বাংলাদেশ পুলিশের গর্বিত সদস্য হতে পেরেছি। দেশের জন্য নিজের জীবন বাজি রাখবো। ’ 

সোমবার রাত ৮টায় ময়মনসিংহ পুলিশ লাইন্সে ফল ঘোষণার পর পুলিশ কনস্টেবল পদে চূড়ান্তভাবে উত্তীর্ণ এসব প্রার্থীরা এভাবেই বাংলানিউজের কাছে নিজেদের অনুভূতির কথা জানান। চূড়ান্ত এ ফলাফল ঘোষণা করেন জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) শাহ আবিদ হোসেন।  

সুমি ও কাজলের মতোই মোট ২৫৭ জন শুধুমাত্র মেধা ও যোগ্যতায় মাত্র ১০০ টাকায় পুলিশে চাকরি পেয়েছেন।  

এসপি শাহ আবিদ হোসেন সংবাদ সম্মেলনে জানান, টিআরসি পদে ৬ হাজার ২৮০ জন পরীক্ষার্থী শারীরিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে। এর মধ্যে এ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ২ হাজার ৩৬৮ জন লিখিত পরীক্ষায় অংশ নেয়। পরে লিখিত পরীক্ষায় পাস করে ৪৫২ জন। এর মধ্যে থেকে ২৫৭ জন চূড়ান্তভাবে উত্তীর্ণ হয়েছে।  

তিনি জানান, ‘বাংলাদেশের ইতিহাসে এ পুলিশ কনস্টেবল নিয়োগ নজিরবিহীন ঘটনা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে আইজিপির শতভাগ স্বচ্ছতার সঙ্গে এ নিয়োগ সম্পন্ন করার জন্য কড়া নির্দেশনা দিয়েছিলেন। আমরা পেশাদারিত্ব, সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে এ নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছি। ’ 

দেখা যায়, এবারের পুলিশ কনস্টেবল পদে চাকরি প্রাপ্তদের বেশিরভাগই দরিদ্র পরিবারের সন্তান। অনেকের বাবা নেই। জীবনের সঙ্গে যুদ্ধ করে কোন মতে পড়াশুনার খরচ চালিয়ে চূড়ান্ত সাফল্য অর্জন করেছে। ফলে চাকরি হওয়ায় অনেকের চোখেই ছিল আনন্দাশ্রু।  

বাংলাদেশ পুলিশের গর্বিত সদস্য হতে পেরে দেশের জন্য জীবন উৎসর্গ করবো উল্লেখ করে হালুয়াঘাট উপজেলার ফকিরপাড়া গ্রামের মাহফুজুর রহমান। বাংলানিউজকে বলেন, ‘ছোটবেলা থেকেই গল্প শুনেছি টাকা ছাড়া পুলিশে চাকরি হয় না। পুলিশ বদলে যাচ্ছে। আমরা এ বদলে যাওয়ার যুগের অগ্নি সাক্ষী। আমরা দেশ ও দেশের মানুষের কল্যাণের জন্যই কাজ করতে চাই। ’  

বাংলাদেশ সময়: ১০৫৫ ঘণ্টা, জুলাই ০৯, ২০১৯ 
এমএএএম/আরআইএস/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।