পুলিশের একটি সূত্র জানান, এসব খবর ছড়িয়ে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে ব্যস্ত রেখে অন্য কোনো অপরাধ সংগঠিত করার পাঁয়তারা চলছে কিনা তা যেমন খতিয়ে দেখা হচ্ছে, তেমনি ‘কল্লাকাটা অর্থাৎ, গলা কেটে নিয়ে যাওয়া’ কিংবা ‘ছেলেধরা’ আতঙ্ক ছড়িয়ে অভিভাবকদের সন্তানদের সঙ্গে বিদ্যালয় কিংবা কোচিংয়ে পাঠিয়ে চুরি বা ডাকাতি সংগঠিত হওয়ার কোনো বিষয় রয়েছে কিনা তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
যদিও পুলিশের একটি সূত্র বলছে, এখন পর্যন্ত কল্লাকাটা কিংবা ছেলেধরার নামে যেসব গুজবের কথা ছড়াচ্ছে প্রতিটি জায়গায় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী যাওয়ার চেষ্টা করছে।
সাম্প্রতি বরিশাল নগরের গির্জা মহল্লা এলাকা থেকে এক শিশুর কান্নাকাটি দেখে লোকজনের সন্দেহ হলে এক নারীকে আটক করে জনতা। সঠিক তথ্য যাচাই করে তাকে ছেলেধরা বলে আখ্যা দিয়ে নাজেহাল করে পুলিশে দেওয়ার পর জানা যায় ওই নারী শিশুটির স্বজন হন।
অনেকে বলছেন, এসব লোকদের গায়ে এক ধরনের সিল মারা রয়েছে, যারা শিশুদের ধরে নিয়ে মাথা কাটে। যা নিয়ে বিদ্যালয়, হাট-বাজার, দোকানপাট, বাসাবাড়ি সবজায়গাতেই চলেছে আলোচনা। এরকম কিছু খবর নিয়ে গত চার দিনে নগরের রুপাতলী, কাউনিয়া, গির্জা মহল্লা, হিরণ নগরসহ বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কেউই চোখে কিছু দেখেননি, সবাই শুনেছেন। আবার নামে-বেনামে অনেক আইডি থেকে তথ্য-প্রমাণ ছাড়া এ ধরনের গুজবের খবরও ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে।
এদিকে এই শোনা কথা নিয়েই বিভিন্ন বিদ্যালয়ে যেমন নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে, তেমনি উৎকণ্ঠায় রয়েছেন অভিভাবকরা।
এ বিষয়ে বাংলানিউজকে বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার (দক্ষিণ) মোহাম্মদ মোয়াজ্জেম হোসেন ভূঁঞা বলেন, বরিশালে কিছু ছিঁচকে চোর রয়েছে, যাদের বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান চলমান। এমনটা হতে পারে আমাদের দৃষ্টি অন্যদিকে ব্যস্ত রেখে অন্যদিকে কোনো অপরাধ সংগঠিত করা কিংবা দিনে গার্ডিয়ানরা বাসা খালি রেখে ভয়ে বাচ্চাদের সঙ্গে স্কুলে যাবে আর এ সুযোগে বাসায় চুরি করা।
‘আমি মনে করি, ছিঁচকে চোর বা অপরাধীদের পুলিশকে ব্যস্ত রাখার কৌশল হতে পারে আবার গুজবে পদ্মাসেতুর বিষয়ে কিছু থাকলে তা রাজনৈতিকভাবে হেয় করার বিষয়ও থাকতে পারে। তবে গরম গরম খবর হওয়ারও বিষয় কিন্তু থাকতে পারে। মনে রাখতে হবে এরকম একটা ঘটনা ঘটলে তা কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে ভাইরাল হয়ে যায়। আর মাথা কেটে নিলে সে ঘটনায় একটি হত্যা মামলা তো দায়ের হবে। সবার সামনেই বিষয়টি তো বেরিয়ে আসবে। দুঃখজনক হলেও বলতে হয়, এখন যেখানে মানুষ মঙ্গলগ্রহে যায় এরমধ্যে এ ধরনের কুসংস্কারে বিশ্বাস করা মানে মানসিক স্তরে উন্নয়ন হয়নি এটার প্রতিফলন।
তিনি বলেন, সবাই শুনেছে কিন্তু বরিশাল নগরে এরকম কোনো ঘটনা ঘটেনি। আমরা অভিভাবক ও বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের আশ্বস্ত করছি এবং এ ধরনের গুজব যাতে বিশ্বাস না করে সেজন্য বলছি। আমরা সবাইকে সতর্ক হতে বলবো কিন্তু আতঙ্কিত নয়। আমি সবার কাছে অনুরোধ করবো শুধু ছেলে ধরার বিষয় নয়, কারো অস্বাভাবিক কোনো আচরণ দেখলে সঙ্গে সঙ্গে পুলিশকে অবহিত করুন। কারণ আপনাদের নিরাপত্তায় আমরা কাজ করছি।
এ ব্যাপারে বরিশাল জেলা পুলিশ সুপার মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি পুরোপুরি গুজব। আমাদের কাছে এ ধরনের কোনো অভিযোগ আসেনি। তবে কোনো এলাকায় সন্দেহজনক নতুন লোক দেখলে পুলিশকে জানানোর জন্যও আহ্বান জানাচ্ছি।
বাংলাদেশ সময়: ০৮৪৮ ঘণ্টা, জুলাই ০৯, ২০১৯
এমএস/এএ