ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

মেঘনার ভাঙনে শূন্য ভিটা!

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৪৩ ঘণ্টা, জুলাই ৮, ২০১৯
মেঘনার ভাঙনে শূন্য ভিটা! শূন্য ভিটায় বসে আছেন আলতাফ। ছবি: বাংলানিউজ

লক্ষ্মীপুর: মেঘনার ভয়বাহ ভাঙনে আলতাফের এখন শূন্য ভিটা। একমাস আগেও তার ছিল গোয়াল ভরা গরু, পুকুর ভরা মাছ, সাজানো বাগান, বাড়ির সামনে ফসলি জমি। উঠানের ধারে শাক-সবজিক্ষেত। এখন তার কিছুই নেই। শুধু পড়ে আছে শূন্য ভিটা! মেঘনা তার বাড়ি গিলে খেয়েছে। আগামী দু’তিন দিনের ভাঙনে বিলীন হয়ে যাবে ভিটেমাটিও।

আলতাফ লক্ষ্মীপুর জেলার কমলনগর উপজেলার চর কালকিনি ইউনিয়নের মৃত নুর মোহাম্মদ মেম্বারের ছেলে। তার বাড়ি মেঘনা ভাঙনে বিলীন হয়ে গেছে।

মেঘনা তার সব নিয়ে গেছে, শূন্য ভিটায় মুখে হাত দিয়ে তিনি বসে আছেন।

সারাবছর ধরে কমলনগরের ভাঙন অব্যাহত থাকে। বর্ষা এলেই ভাঙন ভয়াবহ রূপ নেয়। নদীর পানি বাড়তে থাকায় ও বর্ষায় বৃষ্টির প্রভাবে মেঘনা ভাঙন আরও বেড়েছে। গত তিন-চার সপ্তাহের ভাঙনে আলতাফের বাড়ি, আশপাশের জমি সব ভেঙেছে। এখন তিনি নিঃস্ব। তার সাজানো সংসার লণ্ডভণ্ড করে দিয়েছে রাক্ষুসী মেঘনা। বিষাদের চাপ এখন তার চোখে মুখে। দুশ্চিন্তা আর হতাশায় তার দিন কাটছে। তাকে সান্ত্বনা দেওয়ার ভাষা জানা নেই কারও।

রোববার (৭ জুলাই) বিকেলে সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, আলতাফ বাড়ির ভিটেমাটিতে বসে আছেন। তার বাড়ির উঠানেই জেলেরা ইলিশ ধরছেন। ঘরের কোণের নারিকেল গাছটি নদীতে হেলে পড়েছে। ভাঙনের মুখে আর কয়েকটি সুপারিগাছ। বাপ-দাদার গড়া বাড়িটি বিলীন হয়ে গেছে। ভিটেমাটিও চলে যাচ্ছে নদীতে। এমন পরিস্থিতিতে নদীর প্রতিটি তীব্র ঢেউ যেনো তার বুকের ওপর আচড়ে পড়ছে।

প্রতিবেশীরা জানান, দেড় একর জমিতে আলতাফদের বাড়ি ছিল। পাকা বাড়িতে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে বসবাস করতেন তিনি। নদীর ভাঙনে ঘর-বাড়ি সবই গেলে তার। সব হারিয়ে প্রতিদিন বাড়ির ভিটায় বসে থাকেন। আর নীরবে কাঁদেন।

দীর্ঘ তিন যুগেরও বেশি সময় ধরে কমলনগরের মেঘনা ভাঙছে। ভাঙনে বিলীন হয়ে গেছে রাস্তা-ঘাট, হাট-বাজার, ফসলি জমি, শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান, মসজিদ,আশ্রয়কেন্দ্রসহ সরকারি-বেসরকারি অনেক স্থাপনা। নিঃস্ব হয়েছে হাজার হাজার পরিবার। সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত কালকিনি ও সাহেবেরহাট ইউনিয়ন। এই দুই ইউনিয়নের বেশিরভাগ এলাকা এখন নদীগর্ভে। এখানকার ক্ষতিগ্রস্তরা আশ্রয় নিয়েছেন অন্যের বাড়িতে, বেড়িবাঁধের ধারে ও রাস্তার ধারে।

এভাবে অব্যাহত নদী ভাঙতে থাকলে নিঃস্ব হবেন হাজার হাজার আলতাফ। হারিয়ে যাবে কমলনগর। এমন পরিস্থিতিতে দ্রুত নদীভাঙন ঠেকাবে সরকার, এমনটাই প্রত্যাশা সবার।

বাংলাদেশ সময়: ১২৪৩ ঘণ্টা, জুলাই ০৮, ২০১৯
এসআর/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।