ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

রাজবাড়ীতে ভাঙন আতঙ্কে দিন কাটছে পদ্মাপাড়ের মানুষের

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৩৩ ঘণ্টা, জুলাই ৮, ২০১৯
রাজবাড়ীতে ভাঙন আতঙ্কে দিন কাটছে পদ্মাপাড়ের মানুষের নদী ভাঙন। ছবি: বাংলানিউজ

রাজবাড়ী: বর্ষার আগেই রাজবাড়ীতে শুরু হয়েছে পদ্মার ভাঙন। দিন-রাত ভাঙন আতঙ্কে থাকা মানুষগুলো বরাবরের মত এবারও রয়েছেন ভিটে-মাটি হারানোর শঙ্কায়। ভাঙনের সময় নয় বরং আগে থেকেই ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি ক্ষতিগ্রস্ত এসব মানুষদের।

গত বছরের পদ্মার ভাঙনের ভয়াল দৃশ্য আজও ভুলতে পারেনি রাজবাড়ী জেলাবাসী। পদ্মা নদী তীরবর্তী এলাকার মানুষের চোখে এখনো ভেসে ওঠে নদীতে তলিয়ে যাওয়া ভিটে-মাটি হারানোর সেই স্মৃতি।

বর্ষার ভরা মৌসুম আসার আগেই এ বছর শুরু হয়েছে পদ্মার ভাঙন। তাই আতঙ্কে দিন কাটছে নদী পাড়ে বসবাসকারী হাজারো মানুষের।

রাজবাড়ী জেলার সদর, গোয়ালন্দ ও পাংশা উপজেলায় রয়েছে ৮৫ কিলোমিটার দীর্ঘ নদীপথ। বর্ষা মৌসুম শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ভাঙন দেখা দিয়েছে গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া, দেবগ্রাম, ছোটভাকলা, রাজবাড়ী সদর উপজেলার বরাট, অন্তরমোড়, গোদারবাজার, সিলিমপুর, মহাদেবপুর, পাংশা উপজেলার হাবাসপুর, বাহাদুরপুর, কালুখালী উপজেলার রতনদিয়া, কালিকাপুর এবং বালিয়াকান্দি উপজেলার নারুয়া, কোনাগ্রাম, গয়েশপুর, জামসাপুরসহ বিভিন্ন এলাকায়। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভাঙন দেখা দিয়েছে রাজবাড়ী সদর উপজেলার সিলিমপুর, মহাদেবপুর ও গোয়ালন্দ উপজেলার দেবগ্রাম ও দৌলতদিয়া ইউনিয়নের বিভিন্ন পয়েন্টে।

রাজবাড়ী সদর উপজেলার সিলিমপুর এলাকায় ইতোমধ্যে পানি উন্নয়ন বোর্ডের ফেলা জিও ব্যাগসহ অন্তত একশ’ মিটার এলাকা নদীতে বিলীন হয়েছে।

নদী ভাঙন।  ছবি: বাংলানিউজসিলিমপুর এলাকার বাসিন্দা গৃহবধূ জহুরা বেগম বলেন, নদীর ভাঙন যেভাবে দেখা দিয়েছে এবছর আর বসতবাড়িতে থাকা সম্ভব না। নদীর শো-শো শব্দে ভয়ে সন্তানদের নিয়ে রাতের বেলায় ঘুমাতে পারছিনা। সব সময় মনে হয় এই বুঝি আমাদের বসতবাড়ি নদীগর্ভে চলে গেল।

ফুলজান বিবি নামে অপর এক গৃহবধূ বলেন, প্রতি বছর নদী ভাঙে। আবার সরকার কাজও করে। কাজ মজবুত না করায় ভেঙে চলে যায়। আমার বাড়ি দুইবার ভেঙেছে। এবছর যাওয়ার আর জায়গা নেই। কোথাও জমি-জমা নেই যে সেখানে গিয়ে বাড়ি করবো।

সিলিমপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. ছবদুল হোসেন বলেন, ঝুঁকিতে রয়েছে সিলিমপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বরাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ অন্তত চারটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। যেভাবে ভাঙন শুরু হয়েছে আর কয়েকদিন ভাঙলেই এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাবে। সেইসঙ্গে বন্ধ হয়ে যাবে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের লেখাপড়া।

গোয়ালন্দ উপজেলার ছোট ভাকলা ইউনিয়নের বাসিন্দা জসিম খা বলেন, বাড়ির কাছে দুই বিঘার একটু বেশি জমিতে ধানের আবাদ করেছিলাম। এক বিঘার মতো জমির ধান কাটতে পারলেও বাকি আরও এক বিঘা কৃষি জমি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। কয়েক সপ্তাহ ধরে ভাঙন দেখা দিয়েছে। কয়েকদিনের ভারী বৃষ্টি ও পদ্মায় পানি বাড়ায় নদীর পাড় ভাঙতে শুরু করেছে। ইতোমধ্যে অনেকেই ভাঙন আতঙ্কে বাড়ি-ঘর অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছেন।

একই এলাকার বাসিন্দা সিরাজ খান বলেন, ঘন ঘন ঝড়-বৃষ্টির কারণে নদী উত্তাল হয়ে উঠেছে। নদীর ঢেউ পাড়ে গিয়ে আঘাত করছে। আর তখনই নদীর পাড় ভাঙছে। এভাবেই গত এক সপ্তাহে অনেকের ফসলি জমি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। আমরা দীর্ঘদিন ধরে ভাঙন রোধের দাবি জানিয়ে আসছি। এখনই ভাঙন প্রতিরোধে ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে বর্ষা মৌসুমে আরো অনেক ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

অপরদিকে পদ্মার দৌলতদিয়া ইউনিয়নের চর মজলিশপুর, কাশেমপুর, মহিদাপুর গ্রামের বিস্তীর্ণ আবাদী জমি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। গুরুত্বপূর্ণ দৌলতদিয়া ফেরিঘাট এলাকায় ভাঙন রোধে জিও ব্যাগ ফেলা হলেও ঘাটের উজানে ও ভাটিতে ভাঙন আতঙ্কে রয়েছে শত শত পরিবার। এছাড়া দেবগ্রাম ইউনিয়নের কাওয়ালজানি ও দেবগ্রামে নদী তীরের ফসলি জমিতে ভাঙন শুরু হয়েছে। নদী ভাঙন।  ছবি: বাংলানিউজ

গোয়ালন্দ উপজেলার ছোটভাকলা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. আমজাদ হোসেন জানান, ইউনিয়নের চর বরাট, ছোট জলো, গোড়া মারা ও কাওয়ালজানির আংশিক মৌজা নদী ভাঙনের কবলে পড়েছে। ওই চারটি মৌজা পদ্মা তীরবর্তী হওয়ায় অন্তত ৫০ একর আবাদি কৃষি জমি নদীতে বিলীন হয়েছে। প্রায় এক মাস ধরে ভারি বৃষ্টি ও পদ্মায় পানি বৃদ্ধির সঙ্গে বাতাসের ঢেউয়ে পাড়ে আঘাত হানায় ভাঙনের সৃষ্টি হয়েছে। এখনই ভাঙন প্রতিরোধে ব্যবস্থা না নিলে বর্ষা মৌসুমে আরো ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

রাজবাড়ী পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবোর) সূত্রে জানা গেছে, পদ্মা নদীর অব্যাহত ভাঙন রোধ এবং রাজবাড়ী শহর রক্ষা বাঁধ সংরক্ষণের জন্য ২০১৭-১৮ অর্থ বছরে শুরু হয়েছে রাজবাড়ী শহর রক্ষা বাঁধ ফেইজ-২ নদী তীর সংরক্ষণ প্রকল্পের কাজ। রাজবাড়ী শহরের গোদার বাজার থেকে ২.৫ কিলোমিটার উজান এবং ৩ কিলোমিটার ভাটি এলাকা পর্যন্ত দীর্ঘ সাড়ে ৪ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে এ প্রকল্পের অবস্থান। প্রকল্পের কাজ বাস্তবায়নের জন্য ঠিকাদার হিসেবে সরকারিভাবে নিয়োগ করা হয়েছে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর নিয়ন্ত্রণাধীন খুলনা শিপ ইয়ার্ড কর্তৃপক্ষকে। খুলনা শিপ ইয়ার্ড কর্তৃপক্ষ আবার ডিবিএল নামে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে ঠিকাদার হিসেবে নিয়োজিত করেছে।
রাজবাড়ী শহর রক্ষা বাঁধ ফেইজ-২ প্রকল্পটি ২০২০ সালের ৩১ জুনের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।

ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ডিবিএল এর প্রকৌশলী, মো. ইউনুস হোসেন জানান, এই কাজটি করতে স্থানীয়দের বাধার সম্মুখীন হতে হয়েছে। বর্তমানে নদীতে যে স্রোত তাতে আমাদের ফেলা বালুর বস্তা ধসে যাচ্ছে। তারপরও আমাদের পর্যাপ্ত বালুর বস্তা তৈরি করা আছে। তাৎক্ষণিক সেই বস্তাগুলো নদীতে ফেলা হবে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) রাজবাড়ীর উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী আরিফুর রহমান জানান, ভাঙন কবলিত গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া ছয়টি প্যাকেজে ও সদর উপজেলার মহাদেবপুর এলাকায় কাজ করা হচ্ছে। তাছাড়া জরুরি ভিত্তিতে কাজ করার জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে।

রাজবাড়ীর জেলা প্রশাসক দিলসাদ বেগম জানান, ইতোমধ্যে ৮ কিলোমিটার এলাকায় কাজ চলমান রয়েছে। আরও ১৭ কিলোমিটারের জন্য ডিপিপি প্রণয়নের কাজ চলমান আছে। আমরা আশাবাদী যে বাকি অংশের কাজও তাড়াতাড়ি শুরু হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১১২০ ঘণ্টা, জুলাই ০৮, ২০১৯
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।