ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

সত্যিকারের বন্ধু হিসেবেই থাকবো: হাসিনাকে শি জিনপিং

মহিউদ্দিন মাহমুদ, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৩২৩ ঘণ্টা, জুলাই ৬, ২০১৯
সত্যিকারের বন্ধু হিসেবেই থাকবো: হাসিনাকে শি জিনপিং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও শি জিনপিং/ছবি: পিআইডি

বেইজিং, চীন থেকে: চীন-বাংলাদেশের মধ্যকার সম্পর্ক আরো গভীর ও শক্তিশালী হবে আশা প্রকাশ করে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং সফররত বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বলেছেন, সত্যিকারের বন্ধু হিসেবে থাকবো।

শুক্রবার (৫ জুলাই) স্থানীয় সময় বিকেলে চীনের রাজধানী বেইজিংয়ের স্টেট গেস্ট হাউজে সফরররত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে একথা বলেন চীনের প্রেসিডেন্ট।

পরে পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক সাংবাদিকদের ব্রিফিংয়ে একথা জানান।

এসময় প্রধানমন্ত্রীর স্পিচ রাইটার মো. নজরুল ইসলামও উপস্থিত ছিলেন।

প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মধ্যেকার বৈঠকের কথা তুলে ধরে পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক ব্রিফিংয়ে বলেন, দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে অত্যন্ত সোহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে আলোচনা হয়েছে। খুবই বন্ধুত্বপূর্ণ ও খোলামেলা আলোচনা হয়েছে।  

তিনি বলেন, ২০১৪ চীন, ২০১৬ ঢাকায় এখন চীনের এ বৈঠকের সঙ্গে তুলনা করে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, একটা ভিন্ন সমীকরণ ও কেমিস্ট্রি লক্ষ্য করা গেছে।

শহীদুল হক বলেন, প্রধানমন্ত্রী বলেন সত্যিকারের বন্ধু হিসেবে থাকবো। শি জিনপিং বলেন, বাংলাদেশ বন্ধুভাবাভাপন্ন প্রতিবেশী। দুই প্রতিবেশীই উন্নয়নের একটা গুরুত্বপূর্ণ পর‌্যায়ে আছি।

পররাষ্ট্র সচিব বলেন, প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং বলেন, চীন বাংলাদেশের উন্নয়নের সঙ্গে সব সময় আছে এবং থাকবে। এটা দিনে দিনে আরও গভীরতর ও শক্তিশালী হবে।

শহীদুল হক বলেন, দু’জনেই (চায়নিজ প্রেসিডেন্ট ও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী) সিদ্ধান্ত নিয়েছেন যে দু’দেশের সম্পর্ক যেন আরও উচ্চতায় যায় সে জন্য ওনারা চেষ্টা করবেন।

পররাষ্ট্র সচিব জানান, বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধির ভূয়সী প্রশংসা করে চায়নিজ প্রেসিডেন্ট বলেন, বাংলাদেশেরও চায়না থেকে অনেক কিছু শেখার আছে, চীনের বাংলাদেশ থেকে অনেক কিছু শেখার আছে। দুই নেতাই বারবার গুরুত্ব দিয়েছেন যে আমাদের এক মাত্র লক্ষ্য হলো জনগণের উন্নয়ন।

দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে চীনের সঙ্গে বাংলাদেশে বাণিজ্য ভারসাম্যহীনতা কমিয়ে আনার কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

পররাষ্ট্র সচিব বলেন, চায়নিজ কোম্পানিগুলো বাংলাদেশের ‘বাই ব্যাকড সুবিধা’সহ বিনিয়োগ করা উচিত। এটি প্রধানমন্ত্রী পুনর্ব্যক্ত করেছেন এবং চায়নিজ প্রেসিডেন্ট খুবই সেনসেটিভভাবে বিষয়টি গ্রহণ করেছেন। বলেছেন, আমি এ বিষয়ে সচেতন। এবং সব ধরনের চেষ্টা করবো যাতে বাণিজ্য ভারসাম্যহীনতা যেন কমে আসে।

ডেল্টা প্ল্যান ২১০০, ক্লাইমেট অ্যাডাপটেশন সেন্টার, তিস্তার রিভার কনপ্রিহেনসিভ ম্যানেজমেন্ট ও রিস্টোরেশন প্রজেক্ট বিষয়ে চীনের সহযোগিতা চান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। চায়নিজ প্রেসিডেন্ট আশ্বাস দিয়েছেন এবং বলেছেন উনি সহযোগিতা করবেন।

চীনের জন্য নির্ধারিত দু’টি অর্থনৈতিক অঞ্চলসহ অন্যান্য অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগ করার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

শহীদুল হক বলেন, ২০১৬ সালে চীন-বাংলাদেশ ২৭টি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে। কিছুটা শ্লথগতিতে চলছে সে বিষয়টি। লোনের টার্ম অ্যান্ড কন্ডিশন সহজ করার কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী। শি জিনপিং বলেছেন উনি নোট করেছেন এবং যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

দ্বিপাক্ষিক বৈঠক শেষে চীনের প্রেসিডেন্টের দেয়া নৈশভোজে অংশ নেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেখানেও দুই নেতার মধ্যে বিভিন্ন বিষয়ে আন্তরিকতার সঙ্গে খোলামেলা আলোচনা হয়।

বৈঠকে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর মেয়ে, অটিজম ও নিউরো ডেভেলপমেন্ট ডিজঅর্ডার বিষয়ক জাতীয় উপদেষ্টা কমিটির চেয়ারম্যান সায়মা ওয়াজেদ হোসেন পুতুল, পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আবদুল মোমেন, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান ফজলুর রহমান, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, চীনে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এম. ফজলুল করিম প্রমুখ।

আগের দিন বৃহস্পতিবার (৪ জুলাই) বেইজিংয়ের গ্রেট হলে চীনের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে বৈঠক শেষে দুই প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে ৯টি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সই হয়।

চীন সফর শেষে শনিবার (৬ জুলাই) দেশে ফিরবেন প্রধানমন্ত্রী।  

এর আগে প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের আমন্ত্রণে দ্বিপাক্ষিক সফর এবং দালিয়ানে ওয়ার্ল্ড ইকোনোমিক ফোরামের গ্রীষ্মকালীন সম্মেলনে অংশ নিতে ১ জুলাই চীন সফরে আসেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

বাংলাদেশ সময়: ২৩১৭ ঘণ্টা, জুলাই ০৫, ২০১৯
এমইউএম/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।