ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

‘বিভ্রান্তিতে’ হেলে পড়া ভবন দু’টির বাসিন্দারা

এম আব্দুল্লাহ আল মামুন খান, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০০৯ ঘণ্টা, জুলাই ৬, ২০১৯
‘বিভ্রান্তিতে’ হেলে পড়া ভবন দু’টির বাসিন্দারা হেলে পড়েছে ছয়তলা একটি ভবন। ছবি: বাংলানিউজ

ময়মনসিংহ: হেলে পড়ার পর ৪৬ ঘণ্টা পার হতে চললেও কর্তৃপক্ষ দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ায় ভোগান্তিতে পড়েছেন ময়মনসিংহের সেই দু’টি ভবনের বাসিন্দারা। বাসা খালি করে চলে যাওয়ার পর অন্যের ঘরে ‘অতিথি’ হয়ে থাকাকে ভোগান্তি হিসেবেও দেখছেন তারা।

শুক্রবার (৫ জুলাই) সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, ভবন দু’টি যেখানে অবস্থিত এর আশেপাশে লোকজনের যাতায়াত কমে গেছে। খালি করে চলে যাওয়া ভবনের ভাড়াটিয়ারাও আর এদিকে আসছেন না আতঙ্কে।

আত্মীয়ের বাসায় আশ্রয় নেওয়া ওই ভবনের একজন ভাড়াটিয়ার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ভবন হেলে পড়ার পর তিনি পরিবারসহ আশ্রয় নিয়েছেন তার এক আত্মীয়ের বাসায়। মাসের প্রথম দিক হওয়ায় হুট করেই নতুন বাসা ভাড়া নেওয়ার সুযোগও নেই। ফলে অন্যের ঘরে অতিথি হয়ে মানসিক অসন্তোষেই সময় কাটছে তাদের।

হেলে পড়া ভবনটির পাশের বাসার ভাড়াটিয়া ইসরাত আক্তার বিথী বাংলানিউজকে বলেন, আরেক ভবনের জন্য আমাদের ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে। অন্য জায়গায় থাকাটাও ‘প্রেস্টিজিয়াস’ নয়। বাচ্চা-কাচ্চাদের পড়াশোনায় ব্যাঘাত ঘটছে।

গত বুধবার (৩ জুলাই) রাত সাড়ে ৯টার দিকে নগরের সানকিপাড়া শেষ মোড় এলাকায় একটি ৬ তলা ভবন পাশের ৪ তলা ভবনের ওপর হেলে পড়েছে বলে খবর ছড়িয়ে পড়ে। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের তিনটি ইউনিট ঘটনাস্থলে যায়। পরে স্থানীয় জেলা প্রশাসন ও গণপূর্ত বিভাগের প্রকৌশলীরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে দু’টি ভবনকেই ঝুঁকিপূর্ণ বলে মত দেন। এ সময় জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাদের আহ্বানে রাত ১২টার মধ্যেই ভবন দু’টি ছেড়ে চলে যান ২০টি পরিবারের সদস্যরা।

প্রথমে হেলে পড়া ৬ তলা ভবনটিকে ঝুঁকিপূর্ণ উল্লেখ করে সেখানে অবস্থান করা যাবে না বলে জানিয়েছিলেন গণপূর্ত বিভাগের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী কামরুজ্জামান।

পরে আবার তিনি সুর বদলে করে বৃহস্পতিবার (৪ জুলাই) বলেছেন, ‘এখানে বসবাসে কোনো সমস্যা নেই। ’

একদিনের ব্যবধানে প্রকৌশলীর দুই বক্তব্যে বিভ্রান্তিতে পড়েছেন ভবন দু’টির ভাড়াটিয়ারা।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক ভাড়াটিয়া বাংলানিউজকে বলেন, প্রথম দিন ইঞ্জিনিয়াররা বলেছেন, এখানে থাকা রিস্ক। কিন্তু এখন শুনছি তারাই বলছেন এখানে থাকার বিষয়ে কোনো ঝুঁকি নেই। ফলে আমরা বিভ্রান্তিতে পড়ে গেছি।  

ময়মনসিংহের ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক এ কে এম গালিভ খান জানান, ওই রাতেই ভবন দু’টির বাসিন্দারা ভবন ত্যাগ করেছেন। দু’টি ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের বিষয়ে তদন্তে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) সমর কান্তি বসাককে প্রধান করে ৯ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত কমিটি কার্যক্রম শুরু করেছে। এখন থেকে দুই ভবনের বিষয়ে কেবল তারাই কথা বলবেন।

জেলা প্রশাসনের গঠিত তদন্ত কমিটির সদস্য ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের নির্বাহী প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম বাংলানিউজকে জানান, সাধারণত কোনো বহুতল ভবন হেলে পড়লে বড় রকমের ফাটল দেখা দেয়। কিন্তু আমরা এখনো সেই রকমের কোনো ফাটল দেখতে পাইনি।

ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের সহকারী প্রকৌশলী জহুরুল ইসলাম বাংলানিউজকে জানান, ভবন দু’টির তিনতলা পর্যন্ত একটির কার্নিশ আরেকটির সঙ্গে লেগে গেছে। প্রাথমিকভাবে আমরা জানতে পেরেছি অনেকদিন আগে এটি ঘটেছে। দু’টি বাড়ির মালিকই নিজেদের জায়গা ছাড় না দেওয়ায় এমন ঘটনা ঘটেছে।

বাংলাদেশ সময়: ২০০৬ ঘণ্টা, জুলাই ০৫, ২০১৯
এমএএএম/এইচএডি/এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।