তবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এরই মধ্যে জমি অধিগ্রহণ কাজ শেষ হয়েছে। এখন চলছে সীমানা প্রাচীর নির্মাণের কাজ।
জানা যায়, ১৯৯৬ সালে বাগেরহাটের রামপাল উপজেলার ফয়লা এলাকায় সর্ট টেক অফ ল্যান্ডিং পদ্ধতিতে বিমানবন্দর চালু করতে ১০২ একর জমি অধিগ্রহণ করে সরকার।
এরপর দীর্ঘদিন বন্ধ থাকে এই বিমানবন্দর নির্মাণের কাজ। ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এলে পুনরায় বিমানবন্দর নির্মাণের কার্যক্রম হাতে নেওয়া হয়।
স্থানীয় ব্যবসায়ী ও এলাকাবাসীর দীর্ঘদিনের দাবির প্রেক্ষিতে ২০১১ সালে ‘খানজাহান আলী বিমানবন্দর’ নামে একটি পূর্ণাঙ্গ বিমানবন্দর নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর ২০১৫ সালে বিমানবন্দর নির্মাণ প্রকল্প জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) অনুমোদন দেয়। এ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয় প্রায় ৫৪৪ কোটি টাকা।
এর মধ্যে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে ৪৯০ কোটি টাকা এবং বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ নিজস্ব তহবিল থেকে ৫৪ কোটি টাকা দেওয়ার কথা।
তৎকালীন পরিকল্পনা মন্ত্রী আ হ ম মোস্তফা কামাল ২০১৮ সালের জুনের মধ্যে এই বিমানবন্দর নির্মাণের কাজ শেষ করার কথা বলেছিলেন।
তবে এখনও শেষ হয়নি বিমানবন্দরের কাজ। একনেকে অনুমোদনের পরই জেলা প্রশাসন পূর্ণাঙ্গ বিমানবন্দরের জন্য নতুন করে ৫২৯ দশমিক ৮৫ একর জমি অধিগ্রহণের কাজ শুরু করে।
জমি অধিগ্রহণ শেষে ২০১৮ সালের ১৭ আগস্ট বাগেরহাট জেলা প্রশাসন বেবিচককে বিমানবন্দরের জন্য অধিগ্রহণ ভূমি বুঝিয়ে দেন। এরপরও দৃশ্যমান কোনো কাজ হয়নি।
চলতি বছরের ১৩ ফেব্রুয়ারি পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান নির্মাণাধীন খানজাহান আলী বিমানবন্দর পরিদর্শন করেন। এ সময় তিনি বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলে দ্রুত বিমানবন্দর নির্মাণের কাজ সম্পন্ন করার প্রতিশ্রুতি দেন।
এরপর গত মে মাসে বিমানবন্দরের সীমানা প্রাচীর নির্মাণ শুরু করে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ।
এদিকে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে বাস্তবায়নাধীন প্রকল্প হিসেবে খানজাহান আলী বিমানবন্দরের নাম লেখা রয়েছে। সেখানে কাজের মেয়াদে বলা আছে ২০১৫ সালের জুলাই থেকে ২০২০ সালের জুন পর্যন্ত।
তবে এ সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করা সম্ভব নয় বলে মনে করেন স্থানীয়রা। স্থানীয় আলাউদ্দিন শেখ বলেন, দীর্ঘদিন ধরে দেখছি এখানে বিমানবন্দরের একটি সাইনবোর্ড লাগানো। কিন্তু কবে এ নির্মাণ হবে আর কবে চালু হবে তা জানি না।
বাগেরহাট চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি মো. লিয়াকত হোসেন বলেন, বিমানবন্দর নির্মাণ হলে ইপিজেড, চিংড়ি শিল্প ও রামপাল তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রকে ঘিরে বাগেরহাটসহ পুরো দক্ষিণাঞ্চলে ব্যবসা-বাণিজ্যের সম্প্রসারণে দ্রুত যোগাযোগ নেটওয়ার্ক তৈরি হবে। এ অঞ্চলের অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
দুই যুগ ফেলে রাখা এ প্রকল্পকে দ্রুত বাস্তবে রূপ দেওয়ার জন্য সরকারের কাছে দাবি জানান ব্যবসায়ীদের এই নেতা।
এদিকে সীমানা প্রাচীর নির্মাণের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ন্যাশনাল ট্রেডার্সের ব্যবস্থাপক রেজাউল হক বলেন, সীমানা প্রাচীর নির্মাণের কাজ শুরু করেছি। নির্ধারিত সময় এক বছরের মধ্যে সীমানা প্রাচীর নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করা হবে।
বাগেরহাটের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মো. জহিরুল ইসলাম বলেন, অধিগ্রহণের পর আমরা জমি হস্তান্তর করেছি কর্তৃপক্ষের কাছে। সীমানা প্রাচীর নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে। আশাকরি দ্রুত পূর্ণাঙ্গ বিমানবন্দর নির্মাণের কাজ শুরু হবে।
যোগাযোগ করা হলে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের পরিকল্পনা-১ শাখার উপ-প্রধান জাকিয়া আফরোজ বলেন, এরই মধ্যে সীমানা প্রাচীর নির্মাণ শুরু হয়েছে। পাবলিক-প্রাইভেট-পার্টনারশিপের (পিপিপি) আওতায় প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হবে।
তবে কবে নাগাদ এই বিমানবন্দরের কাজ শেষ হবে সে বিষয়ে কোনো তথ্য দিতে পারেননি তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ১১১২ ঘণ্টা, জুলাই ০৪, ২০১৯
এমএ/