কারণ হিসেবে ব্যবসায়ীরা অভ্যন্তরীণ নদ-নদীতে কাঙ্ক্ষিত ইলিশ না পাওয়া এবং সাগরে সব ধরনের মাছ শিকারে ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞাকে দায়ী করছেন। যদিও মৎস্য বিভাগ বলছে বর্তমানে আবহাওয়া ইলিশ শিকারের জন্য অনুকূলে রয়েছে, যে আবহাওয়ায় নদ-নদীতে ইলিশের উপস্থিতি বেড়ে যায়।
বরিশাল জেলা মৎস্য অফিসের কর্মকর্তা (হিলসা) ড. বিমল চন্দ্র দাস বলেন, কয়েকদিন আগেও প্রচণ্ড গরম ও নদীতে পানি কম ছিলো। ফলে সাগরের মাছ নদীতে তেমনভাবে আসতে পারেনি। তবে ২/১ দিন ধরে যেভাবে বৃষ্টিপাত হচ্ছে এবং নদীতে পানির পরিমাণ যেভাবে বেড়েছে তাতে এখনই সময় নদ-নদীতে প্রচুর ইলিশ ধরা পড়ার।
তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, ২/১ দিনের মধ্যেই অভ্যন্তরীণ নদ-নদীতেও প্রচুর ইলিশ ধরা পড়বে। তখন জেলে, আড়তদার ও শ্রমিকদের যেমন কর্মব্যস্ততা বাড়বে, তেমনি মুখেও হাসি ফুটবে।
এ বছরও প্রচুর ইলিশ ধরা পড়বে আশা প্রকাশ করে তিনি বলেন, আগামী ২৩ জুলাই (মঙ্গলবার) সাগরে সব ধরনের মাছ শিকারের ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষ হবে। এরপর আশা করি ইলিশের কোনো সংকট থাকবে না।
এদিকে পাইকারি মোকাম থেকে শুরু করে খুচরা বাজারে ইলিশের সরবরাহ কম থাকায় দাম কিছুটা চড়া বলে জানিয়েছেন ক্রেতারা। ফলে ইলিশ থেকে মুখ ফিরিয়ে দেশীয় চাষের মাছই কিনছেন তারা। বাজারে যেটুকু ভিড় রয়েছে তা সংগ্রহ করা সাগরের পোমা, নদ-নদীর আইড়-পাঙ্গাস, চিংড়ি নয়তো চাষের মাছের জন্য।
আর ইলিশ কম থাকায় পোর্ট রোডের বেসরকারি মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রগুলোতে তেমনভাবে নেই কোনো কর্মব্যস্ততা। অনেক শ্রমিকই দিনের বেশিরভাগ সময় অলস কাটাচ্ছেন।
শ্রমিকরা জানান, প্রতিবছর জুলাই থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ৪ মাস প্রচুর ইলিশ পাওয়া যায়। ফলে এ সময়টাতে শত শত মণ ইলিশে প্রতিদিনই কর্মব্যস্ত থাকে অবতরণ কেন্দ্রটি। কিন্তু এবার তার ভিন্ন চিত্র। নদ-নদীতে এখন পর্যন্ত কাঙ্ক্ষিত ইলিশের দেখা মেলেনি, আবার সাগরেও নিষেধাজ্ঞা থাকার কারণে অনেকটা ঝিমিয়ে পড়েছে অবতরণ কেন্দ্রটি।
খুচরা ব্যবসায়ী সেলিম বলেন, গত বছর এমন সময়ে ভোর থেকে বিকেল পর্যন্ত অবতরণ কেন্দ্রে ইলিশ নিয়ে ব্যস্ত থাকতেন শ্রমিক-ব্যবসায়ীরা। কিন্তু এখন যে ইলিশ আসছে তাতে সকাল ১০টার পরই কর্মব্যস্ততা ঝিমিয়ে পড়ছে।
পাইকারি ব্যবসায়ী মো. নাসির উদ্দিন বলেন, যেখানে হাজার মণের কাছাকাছি ইলিশ আশা করা হয় বরিশালের মোকামে সেখানে অভ্যন্তরীণ নদী এবং সাগর মোহনায় জেলেদের জালে ধরা পড়া ৫০ থেকে ৬০ মণের বেশি ইলিশ আসছে না বরিশালের মোকামে। যদিও দুই দিন আগে এর থেকে কিছুটা বেশি ইলিশের আমদানি হয়েছিলো।
এদিকে জেলেরা বলছেন, নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়ে নদী-সাগরে আগের মতো মাছ শিকার করতে পারছেন না তারা। তারা জানান, জাটকা শিকার বন্ধে প্রতি বছর ৮ মাসের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। এছাড়া অভয়াশ্রমে ২ মাস এবং মা ইলিশের ডিম নিরাপদ প্রজননের জন্য ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। তার ওপর এবার নতুন করে সমুদ্রে মাছ শিকার ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।
যদিও মৎস্য বিভাগ বলছে, এ নিষেধাজ্ঞার পর যে সময় থাকে তাতে প্রচুর ইলিশ যেমন ধরা পড়ছে জেলেদের জালে, তেমনি ইলিশের আকারও ভালো পাওয়ায় দাম বেশি পাচ্ছেন জেলেরা।
বুধবার বরিশালের মোকামে ৬শ’ থেকে ৯শ’ গ্রাম (এলসি) ওজনের ইলিশ মণপ্রতি ৪৩ হাজার টাকায়, আর এর নিচের ওজনের (ভেলকা) ৩০ হাজার টাকায় মণপ্রতি বিক্রি হয়েছে। এছাড়া এক কেজি ওজনের ইলিশ মণপ্রতি ৫৫ হাজার, দেড়কেজির ইলিশ মণপ্রতি ১ লাখ ১০ হাজার টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। তবে সবথেকে ছোট যেটি স্থানীয় ভাষায় গোটলা বলা হয় সেটি মাত্র ২৪ হাজার টাকায় মণপ্রতি বিক্রি হচ্ছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৩২০ ঘণ্টা, জুলাই ০৩, ২০১৯
এমএস/জেডএস