ঢাকা, শুক্রবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

নতুন প্রকল্পেও গতি নেই, ফের জলজট আশঙ্কায় রাজধানীবাসী

মফিজুল সাদিক, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৩১ ঘণ্টা, জুলাই ৩, ২০১৯
নতুন প্রকল্পেও গতি নেই, ফের জলজট আশঙ্কায় রাজধানীবাসী

ঢাকা: রাজধানীবাসীকে জলজট থেকে মুক্তি দিতে ২০১৮ সালের শুরুর দিকে দু’টি প্রকল্পের উদ্যোগ নিয়েছিলো ঢাকা ওয়াসা। তবে আলোর মুখ দেখার আগেই প্রকল্প দু’টি বাতিল করে একই বছরের মাঝামাঝিতে নেওয়া হয় আরেকটি প্রকল্পের উদ্যোগ। যা আগামী বছরের শেষ নাগাদ বাস্তবায়নের সময় থাকলেও এখন পর্যন্ত শেষ হয়নি অর্ধেক কাজও। ফলে নতুন প্রকল্পটির ভবিষ্যৎ নিয়েও তৈরি হয়েছে শঙ্কা!

রাজধানীর জলজট নিরসনে ২০১৮ সালের শুরুর দিকে ‘হাজারীবাগ-বাইশটেকী, কুর্মিটোলা, মাণ্ডা ও বেগুনবাড়ি খালে ভূমি অধিগ্রহণ এবং খনন/পুনঃখনন’ এবং ‘কল্যাণপুর স্টর্ম ওয়াটার পাম্পিং স্টেশনসংলগ্ন রেগুলেটিং অ্যান্ড সংরক্ষণ (ফেজ-২)’ প্রকল্পের উদ্যোগ নেয় ঢাকা ওয়াসা। এর মধ্যে প্রকল্প দু’টি বাতিল করে একই বছরের জুন মাসে ‘ঢাকা মহানগরীর ড্রেনেজ নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ এবং খাল উন্নয়ন’ নামের নতুন একটি প্রকল্পের উদ্যোগ নেওয়া হয়।

এরইমধ্যে এক বছর সময় পেরিয়ে গেলেও ‘পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দ না পাওয়ার’ অজুহাতে প্রকল্পের অর্ধেক কাজও শেষ হয়নি। ফলে এবারের বর্ষায়ও রাজধানীর ৩০ লাখ মানুষ জলজটের আশঙ্কায় রয়েছেন।
 
জানা যায়, প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে ২০২০ সালের ডিসেম্বরে। অথচ ২০১৯ সালের এপ্রিল মাস পর্যন্ত প্রকল্পের বাস্তব অগ্রগতি ৩২ শতাংশ এবং আর্থিক অগ্রগতি ২৪ দশমিক ৩৫ শতাংশ। ৫৫০ কোটি ৫০ লাখ টাকা ব্যয়ের এ প্রকল্পের অন্যতম উদ্দেশ্য ঢাকার ৩০ লাখ মানুষকে জলজট থেকে মুক্তি দেওয়া।
 
ঢাকা ওয়াসা সূত্র জানায়, প্রকল্পের আওতায় ২০১৮-১৯ বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) মাত্র ২৫ কোটি টাকা বরাদ্দ পাওয়া যায়। যে কারণে প্রকল্পের অগ্রগতি কম। অথচ বর্ষা চলে এলেও প্রকল্পের অগ্রগতি কম থাকায় এই সময়ে জলাবদ্ধতায় পড়তে পারেন রাজধানীর ৩০ লাখ মানুষ। আর নির্ধারিত সময় ২০২০ সালের ডিসেম্বর মাসে প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন হওয়া নিয়েও দেখা গেছে শঙ্কা।
 
প্রকল্পের পরিচালক শওকত মাহমুদ বাংলানিউজকে  বলেন, প্রকল্পের আওতায় মাত্র ২৫ কোটি টাকা বরাদ্দ পাওয়া গেছে। ফলে প্রকল্পের অগ্রগতিও কম। টাকা না পেলে আমরা কিভাবে কাজ করবো। ২০১৯-২০ অর্থবছরে এই প্রকল্পের আওতায় ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ পাওয়া গেছে। আমরা আরো বেশি বরাদ্দ চেয়েছিলাম।
 
নির্ধারিত সময়ে প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে প্রকল্প পরিচালক বলেন, বরাদ্দ যদি বেশি পাই তবে প্রকল্পের কাজ শেষ করতে পারবো। আর যদি বরাদ্দ বেশি না পাই তবে পারবো না।
 
ওয়াসা সূত্র জানায়, মহানগরীর ড্রেনেজ নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ এবং ১৬টি খাল উন্নয়নের মাধ্যমে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ধানমন্ডি, হাজারীবাগ, শঙ্কর, জিগাতলা, রায়েরবাজার এলাকা এবং ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মোহাম্মদপুর, শ্যামলী, শেরেবাংলা নগর, দারুসসালাম, মিরপুর, পল্লবী, ক্যান্টনমেন্ট, উত্তরা এবং বিমানবন্দর এলাকার জলাবদ্ধতা দূর করাই প্রকল্পের প্রধান কাজ। এছাড়া প্রকল্প এলাকায় অবস্থিত বিদ্যমান খালগুলো খনন ও প্রশস্ত করে তীর উন্নয়ন এবং ওয়াকওয়ে নির্মাণের মাধ্যমে খালের দুই তীরের পরিবেশ উন্নত করা অন্যতম কাজ। এসব এলাকায় ১৬টি খাল উন্নয়ন করে পাড় বাঁধার কাজও অধরায় রয়ে গেছে। সে হিসেবে প্রকল্পের প্রধান কাজ এখনও শুরু হয়নি।
 
সূত্র জানায়, প্রকল্পের আওতায় ঢাকা মহানগরীর গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলোতে বর্ষা মৌসুমে জলজট সৃষ্টি হয়ে যানবাহন ও মানুষের চলাচলে যাতে ব্যাহত না হয়, তা নিশ্চিত করা হবে। এছাড়া প্রকল্প এলাকায় বসবাসরত মানুষের পানিবাহিত স্বাস্থ্যঝুঁকি লাঘব, অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং সর্বোপরি মহানগরীর স্বাস্থ্যসম্মত গুরুত্বপূর্ণ খালের ভূমি অধিগ্রহণ করে খালগুলি খননের গভীরতা ও প্রশস্ত বৃদ্ধি করা। যাতে বর্ষা মৌসুমে নগরীর মধ্যে বৃষ্টি ও গৃহস্থালি বর্জ্য পানি সহজেই খাল দিয়ে নদীতে নিষ্কাশিত হতে পারে।
 
ঢাকা মহানগরীর ড্রেনেজ ব্যবস্থাপনা ১৫১ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের ৪৪টি খাল, ১০টি বক্স কালভার্ট ও বিভিন্ন সংস্থার কয়েক হাজার কিলোমিটার পাইপ লাইনের মাধ্যমে পরিচালিত হচ্ছে। এর মধ্যে ১৬টি খাল খনন ও পাড় বাঁধা ‘ঢাকা মহানগরীর ড্রেনেজ নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ এবং খাল উন্নয়ন’ প্রকল্পের অন্যতম উদ্দেশ্য।

বাংলাদেশ সময়: ০৯২৯ ঘণ্টা, জুলাই ০৩, ২০১৯
এমআইএস/জেডএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
welcome-ad
welcome-ad