ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

এলিয়ন গাড়ি ছিনতাইয়ে টার্গেট করা হয় উবার, হত্যা চালককে

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯০৫ ঘণ্টা, জুন ৩০, ২০১৯
এলিয়ন গাড়ি ছিনতাইয়ে টার্গেট করা হয় উবার, হত্যা চালককে ডিবি পুলিশের হাত আটক তিন ছিনতাইকারী, ছবি: বাংলানিউজ

ঢাকা: আট লাখ টাকা চুক্তিতে এক ব্যক্তিকে একটি টয়োটা এলিয়ন মডেলের গাড়ি সরবরাহের কথা ছিলো ছিনতাইকারী চক্রের। সেজন্য এই চক্র টার্গেট করে অ্যাপসভিত্তিক পরিবহন সেবা উবারের গাড়িকে। পরিকল্পনার অংশ হিসেবে তারা কল দিতে থাকে উবারে। পরপর পাঁচবার চেষ্টার পর টয়োটার এলিয়ন মডেলের গাড়ির খোঁজ মেলে।

এরপর পরিকল্পনা অনুযায়ী গন্তব্যে যাওয়ার জন্য সেই গাড়িতে চড়ে বসে তিন ছিনতাইকারী। উত্তরা ১৪ নম্বর সেক্টর এলাকায় অপেক্ষাকৃত নির্জন স্থানে পৌঁছালেই ছিনতাইয়ের উদ্দেশ্যে উবারের গাড়িটির চালক আরমানকে (৪০) গলা কেটে হত্যা করে যাত্রীবেশে ওঠা তিন ছিনতাইকারী।

তবে পরিবেশ অনুকূল না হওয়ায় আরমানের মরদেহসহ গাড়িটি রেখেই পালিয়ে যায় তারা।

শনিবার (২৯ জুন) রাজধানী ও বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে আরমান হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় সিজান (২৪), শরিফ (১৯) ও সজিবকে (২০) গ্রেফতার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। এ সময় হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত দু’টি সুইচ গিয়ার চাকু উদ্ধার করা হয়।

রোববার (৩০ জুন) দুপুরে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে পুরো ঘটনা তুলে ধরেন ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার আব্দুল বাতেন।

তিনি বলেন, গত ১৩ জুন (বৃহস্পতিবার) রাত ১২টা থেকে একঘণ্টার মধ্যে উত্তরা পশ্চিম থানার ১৪ নম্বর সেক্টরের ১৬ নম্বর রোডের ৫২ নম্বর বাড়ির সামনে গাড়ির মধ্যে চালক আরমানকে গলা কেটে হত্যা করা হয়। তদন্তের এক পর্যায়ে জানা যায়, উবার চালক আরমান হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী সিজান এবং তার সঙ্গে ছিলো শরিফ ও সজিব।

ঘটনা সম্পর্কে ডিবি প্রধান জানান, ছিনতাইকারী চক্রটির টার্গেট ছিলো একটি টয়োটা এলিয়ন মডেলের গাড়ি ছিনতাই করা। টার্গেট হিসেবে বেছে নিয়েছিলো রাইড শেয়ারিং কোম্পানি উবারের গাড়ি। পরিকল্পনা অনুযায়ী এলিয়ন গাড়ি পেতে উবারের রাইড রিকোয়েস্ট এক-দুই বার নয়, পাঁচবারের চেষ্টা করে। পরে কাঙ্ক্ষিত এলিয়ন মডেলের গাড়ি পেয়ে যায় তারা।

গ্রেফতার সিজান আগেও গাড়ি ছিনতাই করেছে। এবার এক ব্যক্তিকে আট লাখ টাকায় এলিয়ন মডেলের গাড়ি সরবরাহে চুক্তি হয় তাদের। এরপর এলিয়ন গাড়ি ছিনতাইয়ের উদ্দেশ্যে সিজান রামপুরায় অবস্থিত তার বাসার ছাদে শরিফকে নিয়ে পরিকল্পনা সাজায়। একপর্যায়ে তাদের পরিকল্পনায় সজীবকে যুক্ত করে।

পরিকল্পনা অনুযায়ী ১৩ জুন নিউমার্কেট থেকে দু’টি সুইচ গিয়ার চাকু কেনে তারা। রাত আনুমানিক ১১টার দিকে রামপুরা থেকে সিজান উবারের মাধ্যমে গাড়ি কল করলে গাড়িটি এলিয়ন না হওয়ায় কল বাতিল করে দেয়। এভাবে পঞ্চম চেষ্টায় পেয়ে যায় উবার চালক আরমানের এলিয়ন মডেলের গাড়িটি। এরপর গাড়িতে চড়ে তারা উত্তরার উদ্দেশ্যে রওনা হয়।

উত্তরা পশ্চিম থানার ১৪ নম্বর সেক্টরস্থ ১৬ নম্বর রোডে নীরব স্থানে গাড়িটি থামাতে বলে। গাড়ির ভাড়া পরিশোধ না করে ২০ মিনিট অপেক্ষা করে আনুমানিক রাত ১২টা ৩৭ মিনিটের দিকে চারদিকে নিরাপদ মনে করে সিজানের ইশারায় চালকের পেছনের ছিটে বসা শরিফ আরমানের মাথার চুল পেছনের দিকে টেনে ধরে চাকু দিয়ে গলা কেটে গাড়ি থেকে নেমে যায়। পরবর্তী সময়ে আশপাশে পরিবেশ অনুকূল না হওয়ায় আরমানের মরদেহসহ গাড়িটি রেখে তারা পালিয়ে যায়।

আব্দুল বাতেন জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তিন ছিনতাইকারী স্বীকার করেছে- এলিয়ন মডেলের প্রাইভেটকার ছিনতাই করার উদ্দেশ্যেই উবার চালক আরমানকে গলা কেটে হত্যা করেছে তারা।

বাংলাদেশ সময়: ১৫০০ ঘণ্টা, জুন ৩০, ২০১৯
পিএম/ওএইচ/এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।