ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

জাতীয়

পরীক্ষা দিয়ে ফিরছিলেন বাসের ধাক্কায় হাত হারানো ফিরোজ

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭২২ ঘণ্টা, জুন ২৯, ২০১৯
পরীক্ষা দিয়ে ফিরছিলেন বাসের ধাক্কায় হাত হারানো ফিরোজ বাসের ধাক্কায় হাত হারানো ফিরোজের অবস্থা সংকটাপন্ন। ছবি: বাংলানিউজ

রাজশাহী: রাজশাহী কলেজে মাস্টার্স পরীক্ষা চলছিল ফিরোজ সরদারের। পরীক্ষার ছুটিতে তিনি প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা দেওয়ার জন্য বাড়িতে (বগুড়া) গিয়েছিলেন। শুক্রবার (২৮ জুন) পরীক্ষা দিয়েই রাজশাহীর উদ্দেশে রওনা হন। আগামীকাল রোববার (৩০জুন) তার কলেজে পরীক্ষা রয়েছে। গত ২২ জুন থেকে এই পরীক্ষা শুরু হয়েছে। কিন্তু এর আগেই দুই বাসের ধাক্কাধাক্কিতে ডান হাত হারালেন এই পরীক্ষার্থী। 

শুক্রবার (২৮ জুন) দিনগত সন্ধ্যায় রাজশাহীর কাটাখালীতে দুই বাস পাশাপাশি অতিক্রম করার সময় চাপায় ফিরোজ সরদার নামের ওই পরীক্ষার্থীর ডান হাত কনুই থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।  

ঘটনার পর বাহুর নিচ থেকে হাত কেটে পড়ে যায় রাস্তায়।

হাত পড়ে থাকলেও ফিরোজকে নিয়ে বাস চলে যায় বাস টার্মিনালে। রাস্তায় হাত পড়ে থাকতে দেখে স্থানীয়রা কাঁটাখালী থানায় খবর দেন। তাড়াতাড়ি নিয়ে যেতে পারলে হাত জোড়া লাগানো যেতে পারে এই আশায় কাটাখালী থানার পুলিশ সদস্যরাও হাত উদ্ধার করে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। কিন্তু ততক্ষণে বাস থেকে নামিয়ে ফিরোজকেও হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। হাত পৌঁছানোর পর চিকিৎসক বলেন, এ হাত আর জোড়া লাগানো সম্ভব নয়।

হাত হারানো ফিরোজ সরদার রাজশাহী কলেজের সমাজকর্ম বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী। তার বাবার নাম মাহফুজ আর রহমান। বাড়ি বগুড়ার নন্দিগ্রাম উপজেলায়। রাজশাহী কলেজে তার মাস্টার্স পরীক্ষা চলছে। পরীক্ষার ছুটিতে তিনি প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা দেওয়ার জন্য বাড়িতে গিয়েছিলেন। শুক্রবার পরীক্ষা দিয়েই তিনি রাজশাহীর উদ্দেশে রওনা হয়েছিলেন।  

বাসে সহপাঠী বীরেশ্বর চন্দ্র প্রামাণিক তার সঙ্গে ছিলেন। বীরেশ্বর বলেন, তার বাড়ি বগুড়ায়। তিনিও প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা দিতে গিয়েছিলেন। তিনি বগুড়া থেকে রাজশাহীগামী বাসে উঠেছেন। নন্দিগ্রামে ফিরোজ একই বাসে ওঠেন। কিন্তু ফিরোজ সিট না পাওয়ায় দাঁড়িয়ে ছিলেন। এক পর্যায়ে পিছের দিকে সিট পান।

তাই বাসের মধ্যে তার সঙ্গে আর কথা হয়নি। রাজশাহী শহরের উপকণ্ঠে থাকা কাটাখালী পৌর এলাকায় এসে বাসটি খুবই বেপরোয়া চলছিল। হঠাৎ একটা গাড়ির সঙ্গে ধাক্কা লাগে। একটা বিকট শব্দ শুনতে পান। এর পর পরই সবাই চিৎকার শুরু করেন- হাত পড়ে গেছে। কিন্তু কার হাত, তা তিনি তখন বুঝতে পারেননি। বাসটি রাজশাহী মহানগরীর তালাইমারী থামলে দেখেন তার বন্ধু ফিরোজকেই নামানো হচ্ছে। তার ডান হাত বাহু থেকে পড়ে গেছে। সেখান থেকে তাকে তারা হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে যান। পরে তাকে ৩১ নম্বর ওয়ার্ডে এনে ভর্তি করা হয়। এ সময় অস্ত্রোপচারের জন্য ফিরোজকে অপারেশন থিয়েটারে নেওয়া হয়। রাত সাড়ে ১০টার পর তার অস্ত্রোপচার শেষ হয়। কিন্তু অবস্থার ক্রম অবনতি হওয়ায় ফিরোজকে বর্তমানে আইসিইউতে নেওয়া হয়েছে।

রাজশাহীর কাটাখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নিবারণ চন্দ্র বর্মণ বাংলানিউজকে জানান, স্থানীয়দের মাধ্যমে কাটাখালী পৌরসভার সামনে রাজশাহী-নাটোর সড়কে একটা হাত কেটে পড়ে থাকার খবর পান। পরে থানা থেকে ফোর্স পাঠানো হয়। উপ-পরিদর্শক জাহাঙ্গীর আলম, শাহীন ও কনস্টেবল হাফিজ ও মিজান ফিরোজের বিচ্ছিন্ন হওয়া হাত রাস্তা থেকে  উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যান।

এ ঘটনায় বর্তমানে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বলেও কাটাখালী থানার এই পুলিশ কর্মকর্তা।

এদিকে, খবর পেয়ে রাজশাহী কলেজের অধ্যক্ষ মুহা. হবিবুর রহমান হাসপাতালে ছুটে যান। তিনিই নিশ্চিত করেন যে, ফিরোজ তার কলেজের মাস্টার্সের ছাত্র। এ ঘটনায় তিনি ফিরোজের চিকিৎসা সম্পর্কে খোঁজ-খবর নেন। এ সময় তার সহপাঠীদের শান্ত থাকতে বলেন এবং কলেজের পক্ষ থেকে ফিরোজের চিকিৎসায় সম্ভব সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দেন কলেজ অধ্যক্ষ।

>>আরো পড়ুন: বাসের ধাক্কাধাক্কিতে কলেজছাত্রের হাত বিচ্ছিন্ন

বাংলাদেশ সময় : ০৩২২ ঘণ্টা, জুন ২৮, ২০১৯
এসএস/এমএমইউ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।