ঢাকা, শনিবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

সাহসী বলেই পালাননি রিফাত 

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৪৪ ঘণ্টা, জুন ২৮, ২০১৯
সাহসী বলেই পালাননি রিফাত  সুনামের স্ট্যাটাস ও স্ত্রীর সঙ্গে রিফাত

বরিশাল: বরগুনার রিফাত শরিফ হত্যাকাণ্ড এখন ‘টক অব দ্য কান্ট্রি’। সে সন্ত্রাসী হামলার দৃশ্য রিফাতের মৃত্যুর পরপরই ভাইরাল হয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। যা নাড়া দেয় গোটা দেশকে, নড়েচড়ে বসে প্রশাসন। হামলাকারীদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনতে গোটা বরিশাল বিভাগ জুড়ে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী শুরু করে তল্লাশি অভিযান। এরইমধ্যে রিফাত হত্যা মামলার বেশ কয়েকজন আসামিকে গ্রেফতারও করেছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। 

যদিও এখনো ধরা-ছোঁয়ার বাইরে মামলার অন্যতম আসামি সাব্বির আহমেদ নয়ন (নয়ন বন্ড), রিফাত ফরাজী, রিশান ফরাজীসহ এজাহারনামীয় ১০ জন। রিফাতের মৃত্যুর ৪২ ঘণ্টা পার হলেও গোটা বরগুনাজুড়ে এখনো থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে।

 

অনেক আলোচনা-সমালোচনার মধ্যে এখন আলোচিত বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে রিফাত শরিফের সাহসিকতার বিষয়টি। এরইমধ্যে তার বন্ধুমহল থেকে শুরু করে স্থানীয়রা তার সাহসিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। যারা ভিডিও দেখেছেন বা ঘটনা শুনেছেন তাদের মধ্যে অনেকেই বলছেন রিফাত নিজেকে বাঁচাতে দৌড়ে পালিয়ে যেতে পারতো বা কোনো একটি ভবন, দোকানে গিয়ে আশ্রয়ও নিতে পারতো। কিন্তু সে দৌড়ে পালিয়ে যাওয়ার মতো ছেলে ছিল না, সে সাহসী যুবক তাই পালিয়ে যায়নি, চেষ্টা করছে আত্মরক্ষার।

বরগুনা জেলা বারের সদস্য ও স্থানীয় সাংসদের ছেলে অ্যাডভোকেট সুনাম দেবনাথ তার এক ফেসবুক স্ট্যাটাসে রিফাত শরিফের সাহসিকতার কথা লিখেছেন। তার সে স্ট্যাটাস হুবহু তুলে ধরা হলো:

‘রিফাত তো ওখান থেকে দৌড়ে পালাতেও পারতো, তা না করে সে কেন ওদের সাথে হাতাহাতি করছিল?

রিফাত শরিফ খুব সাহসী ছেলে, এটা যারা রিফাতের সাথে মেলামেশা করেছে বা যারা ওর বন্ধু তারা খুব ভালো করে জানে। রিফাত, জন, প্রান্ত, পাপ্পু, সানজিদ এরা একসাথে চলেফেরে বলে আমিও রিফাতকে ভালো করে চিনি। কলেজের সামনে ঘটনা ঘটার সময় রিফাত চাইলেই দৌড়ে পালাতে পারতো। কিন্তু সে পালায়নি, বরং সেখানে বসে সে খুনিদের সাথে যুদ্ধ করছিল। কারণ সে ওখানে তার স্ত্রীকে ছেড়ে দৌড়ে পালাতে চাচ্ছিল না। তাছাড়া রিফাত ওদের ভয়ও পেতো না, ওদের দেখে পালিয়ে যাওয়াটাও রিফাতের আত্মসম্মানে বাঁধছিল তাই হয়তো বা ও বাঁচার চেষ্টাও করে নাই।

রিফাতের সাথে যতোদিন দেখা হয়েছে কখনো ওকে একা দেখিনি। সব সময়ই কেউনা কেউ ওর সাথে থাকতো, হয় জন, না হয় হাসান না হয় অন্যকোনো বন্ধুরা।

মানুষের কি কপাল, যেদিন ওর মৃত্যু হবে ও সেদিনই কলেজের সামনে একা গেলো। ওর সাথের একটা বন্ধু ওখানে উপস্থিত থাকলে ওকে মরতে হতো না। হারাতে হত না আর একটি ভাইকে।  

রিফাত ভাই আমার, আমাদের ক্ষমাকরে দিস ভাই, সর্বদা আমাদের বিপদে তোকে কাছে পেয়েছি, কিন্তু তোর বিপদের সময় তোর কাছে থাকতে পারলাম না। ’

এদিকে বরিশাল থেকে রিফাতের মরদেহ বন্ধুরাই বরগুনায় নিয়ে যান। যে বন্ধুদের মধ্যে মঞ্জুরুল আলম জন, নাজমুল, হাসানসহ অনেকেই বলেছেন, ওর সঙ্গে কেউ না কেউ থাকতাম আমরা। কিন্তু ঘটনার সময় কেউ ছিল না। আর রিফাত তো পালিয়ে যেতে পারতো, কিন্তু সে যায়নি, বারবার আত্মরক্ষার জন্য ধারালো অস্ত্রের আঘাতগুলো ঠেকানোর চেষ্টা করেছে। কারণ ও তো পালিয়ে যাওয়ার ছেলে নয়। ওর ভয় কীসের, ও তো সন্ত্রাসী, মাদক ব্যবসায়ী কিছুই না। ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিল, দুই মাস আগে বিয়ে করায় এখন যুবলীগের সঙ্গে নিজেকে জড়িয়ে রাজনীতিতে কর্মী হয়ে থাকার চেষ্টা করেছে।

বুধবার (২৬ জুন) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বরগুনা সরকারি কলেজের সামনে স্ত্রীর সামনে প্রকাশ্যে রিফাত শরিফ (২২) নামে এক যুবককে কুপিয়ে জখম করে নয়ন বন্ড ও তার সহযোগীরা।

গুরুতর আহত রিফাতকে প্রথমে বরগুনা সদর হাসপাতাল ও পরে বরিশাল শেরে-ই বাংলা মেডিকেল (শেবাচিম) কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। পরে সেখানে বিকেল সোয়া ৪টার দিকে অপারেশন থিয়েটারে অস্ত্রোপচারের সময় রিফাতের মৃত্যু হয়।

বাংলাদেশ সময়: ১১৩৮ ঘণ্টা, জুন ২৮, ২০১৯
এমএস/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

জাতীয় এর সর্বশেষ