ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

বিলুপ্তির পথে তাঁত শিল্প

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২৩৩৬ ঘণ্টা, জুন ২৭, ২০১৯
বিলুপ্তির পথে তাঁত শিল্প তাঁত শুমারির চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে অতিথিরা। ছবি: বাংলানিউজ

ঢাকা: পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের আওতাধীন বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো ‘তাঁত শুমারি ২০১৮’র চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এতে দেখা গেছে, সারাদেশে তাঁত ইউনিট কমে মাত্র ১ লাখ ১৬ হাজার ১১৭টিতে দাঁড়িয়েছে। কমেছে জনবলের সংখ্যাও। তাঁত পেশায় আয় কম, হস্তশিল্প থেকে যান্ত্রিক শিল্পের পরিবর্তন, পর্যাপ্ত মূলধনের অভাব, তাঁত শিল্পে শ্রমিকের অভাব, বাজারজাতকরণের সমস্যা ইত্যাদি কারণে এ শিল্পটি দিন দিন বিলুপ্ত হতে চলেছে।

বৃহস্পতিবার(২৭ জুন) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর অডিটোরিয়ামে এ প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব সৌরেন্দ্র নাথ চক্রবর্তী, বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব জনাব গুলনার নাজমুন নাহার।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর মহাপরিচালক ড. কৃষ্ণা গায়েন। এছাড়া, তাঁত শিল্পের সংশ্লিষ্ট অংশীজন, বিবিএস, পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগসহ বাংলাদেশ তাঁত বোর্ডের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

প্রতিবেদনে দেখা যায়, ১৯৯০ সাল থেকে কমছে তাঁত ইউনিট ও জনবলের সংখ্যা। ১৯৯০ সালে দেশে তাঁত ইউনিটের সংখ্যা ছিল ২ লাখ ১২ হাজার ৪২১টি। ২০০৩ সালে তা দাঁড়ায় ১ লাখ ৮৩ হাজার ৫১২টিতে।  বর্তমানে এ পরিমাণ মাত্র ১ লাখ ১৬ হাজার ১১৭টি।

একইভাবে কমেছে তাঁত ইউনিটে নিয়োজিত জনবলের সংখ্যাও। ১৯৯০ সালে তাঁতী ছিল ১০ লাখ ২৭ হাজার ৪০৭ জন। ২০০৩ সালে এ সংখ্যা কমে দাঁড়ায় ৮ লাখ ৮৮ হাজার ১১৫ জনে। আর, বর্তমানে তাঁত ইউনিটে কাজ করছেন মাত্র ৩ লাখ ১৬ হাজার ৩১৫ জন।

তাঁত শুমারির প্রকল্প পরিচালক মহিউদ্দিন আহমেদ এমপিএইচ চূড়ান্ত ফলাফল নিয়ে সংক্ষিপ্ত উপস্থাপনায় বলেন, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) দেশব্যাপী ১৯৯০ প্রথম ও ২০০৩ সালে দ্বিতীয় তাঁত শুমারি পরিচালনা করে। এরপর ২০১৮ সালে তৃতীয়বারের মতো তাঁতশুমারি পরিচালিত হয়। এ প্রকল্পের প্রধান অংশীজন বাংলাদেশ তাঁত বোর্ড ও পাট মন্ত্রণালয়।  

লিখিত বক্তব্যে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, বাংলাদেশে তাঁত বস্ত্রের রয়েছে সোনালী ঐতিহ্য। হস্তচালিত তাঁত শিল্প বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ কুটির শিল্প। এ ঐতিহ্যবাহী শিল্পটি হারিয়ে যেতে বসেছে। তাই তাঁত শিল্প উন্নয়নে পরিকল্পনা প্রণয়নের কাজ হাতে নিয়েছে সরকার। আশা করি, তাঁত শুমারি ২০১৮’র তথ্য-উপাত্ত ব্যবহার করে বাংলাদেশ তাঁত বোর্ড এ শিল্পের উন্নয়নে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে। এক্ষেত্রে সরকার প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করবে।

বিবিএস সচিব সৌরেন্দ্র নাথ চক্রবর্তী বলেন, অ্যালোকেশন অব বিজনেস ও পরিসংখ্যান আইন ২০১৩ অনুযায়ী বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো বিভিন্ন জরিপ পরিচালনা করে। এটি খুবই আনন্দের বিষয় যে, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) তৃতীয় তাঁত শুমারি  ২০১৮র চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশ করেছে। এ প্রতিবেদনের মাধ্যমে অংশীজনরা তাঁত খাতের একটি সামগ্রিক চিত্র খুঁজে পাবেন।

তিনি বলেন, তাঁতের পোশাক আমাদের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের অংশ। এটি এমন প্রাচীন ও প্রাক-ঐতিহাসিক শিল্পকে প্রতিনিধিত্ব করে, যা প্রাচীনকাল থেকেই সরকারি ও বেসরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেয়ে আসছে। শুমারির চূড়ান্ত ফলাফলে দেখা যায়, বাংলাদেশে তাঁতের সংখ্যা অতীতের তুলনায় অনেক কমে গেছে। প্রতিবেদনে সামগ্রিক চিত্রের একটি ক্রমহ্রাসমান ধারা দেখতে পাবো।  

বিবিএস প্রতিবেদনে দেখা যায়, রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান জেলায় নারী শ্রমিকের হার উল্লেখযোগ্য। চট্টগ্রাম ও রাজশাহী বিভাগে তাঁত শিল্পের প্রাধান্য লক্ষ্য করা যায়। এ দুই বিভাগে দেশের মোট তাঁত ইউনিটের ৭৩ দশমিক ৮ শতাংশ ও শুধু চট্টগ্রাম বিভাগেই এ হার ৫৬ দশমিক ১৩ শতাংশ।

এছাড়া, শহর থেকে পল্লী এলাকায় তাঁত ইউনিটের সংখ্যা অনেক বেশি। পল্লী এলাকায় প্রায় ৮৮ দশমিক ৪৬ শতাংশ ও শহর এলাকায় মাত্র ১১ দশমিক ৫৪ শতাংশ তাঁত ইউনিট রয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৯৩৫ ঘণ্টা, জুন ২৭, ২০১৯
এমআইএস/একে 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।