বুধবার (২৬ জুন) সকাল সাড়ে ১০ টার দিকে বরগুনা সরকারী কলেজ রোডে স্ত্রীর সামনে স্বামী রিফাতকে কুপিয়ে জখম করে সাবেক স্বামী নয়ন বন্ড ও তার সহযোগীরা।
এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে রিফাতের বন্ধু এবং তার আত্মীয়-স্বজনরা হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের ফাঁসি চান।
নিহতের মামা মোস্তফা আলম বাংলানিউজকে বলেন, তাদের প্রেমের সম্পর্কের বিয়ে হলেও এতে পরিবারের সবাই রাজি ছিলেন না। রিফাতের স্ত্রী আয়শা সিদ্দিকা মিন্নির সঙ্গে নয়ন বন্ডের সম্পর্ক ছিল। এর জেরেই নাকি ঘটেছে হত্যাকাণ্ড। ঈদের আগে মিন্নি ও নয়ন নাকি দেখা করেছে। আশা করছি, এগুলো পুলিশ খতিয়ে দেখবে। ঘটনার সঙ্গে জড়িত সবাইকে বিচারের আওতায় আনা হোক।
নিহতের চাচা সালাম শরীফ বলেন, ঘটনার ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে, পুলিশসহ দেশবাসী তা দেখেছেন। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী নিহতের পরিবারের পাশে থাকবে, ঘটনার সঙ্গে জড়িত প্রত্যেককে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া হবে এই প্রত্যাশা।
এদিকে বৃহস্পতিবার (২৭ জুন) দুপুরে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগের মর্গে রিফাতের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়। পরে তার মরদেহ নিয়ে বন্ধুরা বরগুনার উদ্দেশে রওয়ানা দেন।
রিফাতের বন্ধুদের অভিযোগ, যে ভিডিও প্রকাশ পেয়েছে তা সম্পূর্ণ ঘটনার নয়। হামলার সময় রিফাতের স্ত্রী যে ভূমিকা রেখেছে তা দেখলে সবরাই মনে হবে, সে বাঁচানোর চেষ্টা করেছে। তাহলে প্রশ্ন হচ্ছে, সে কেন আহত হলো না।
নিহত রিফাতের বন্ধু নাজমুল বলেন, রিফাত-নয়ন একই স্কুলে পড়াশোনা করেছে। নয়ন মাদকের সঙ্গে জড়িয়ে পড়লে বন্ধুরা তার কাছ থেকে দূরে সরে যেতে থাকে। এদিকে সাম্প্রতিক সময়ে রিফাতের স্ত্রী মিন্নি ও নয়ন ঘনিষ্ঠ হতে শুরু করে।
তিনি আরো বলেন, ঘটনার দিন সকালে মিন্নিকে রিফাত সরকারি কলেজে দিয়ে আসে। পরে রিফাত কিছু একটা জানতে পেরে সেখানে গেলে নয়ন ও মিন্নিকে একসঙ্গে দেখতে পায়। তখন নয়ন বন্ড, রিফাত ফরাজি, নিশান ফরাজিসহ ৯/১০ জন পরে রিফাতের ওপর হামলা চালায়।
রিফাতের অপর বন্ধু মঞ্জুরুল আলম জন বলেন, স্থানীয় ও প্রত্যক্ষদর্শীদের কাছ থেকে জানতে পেরেছি, রিফাত ঘটনাস্থলে আসলে নয়নের সঙ্গে তার বাগবিতণ্ডা হয়। এরপর রিফাতকে মারধর করা হয়, যা ভিডিওতে আসেনি। মারধরের একপর্যায়ে তাকে এলোপাথাড়ি কুপিয়ে আহত করা হয়। আর ঘটনাস্থল থেকে নয়নের বাসা কাছে থাকায় ধারালো অস্ত্র আনতে সময় লাগেনি।
রিফাতের বন্ধুদের অভিযোগ, রিফাতকে হত্যার করার জন্যই কুপিয়ে জখম করা হয়েছে। যেসব জায়গায় আঘাত করলে একজনের মৃত্যু নিশ্চিত হবে রিফাতের সেসব জায়গাতেই আঘাত করা হয়েছে। আর রিফাতই ছিল নয়ন ও মিন্নির সম্পর্কের পথের কাঁটা।
রিফাতের বন্ধু আসাদ বলেন, নয়ন ও মিন্নির বিয়ের যে কথা ওঠেছে, তা হয়েছে অনেকটা গোপনে। এক বছর আগে রিফাতের সঙ্গে মিন্নির সম্পর্ক হয়। তাদের বিয়ের বয়স দুই মাস। তাদের বিয়ের পর মিন্নির আবার নয়নের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বেড়ে যায়।
যদিও মিন্নির বাবা মোজাম্মেল হোসেন কিশোর তার মেয়ের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ তা অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, ঘটনা কী ঘটেছে তা ভিডিওতে সবাই দেখেছেন। একই সঙ্গে সেসময় আমার মেয়ের অবস্থান কী ছিল তাও দেখেছেন। আমার মেয়ে তার স্বামী হারিয়ে অল্প বয়সে বিধবা হয়েছে। আমরা চাই রিফাত হত্যার সঙ্গে জড়িতদের শাস্তি হোক।
বন্ধুরা জানান, নয়ন এলাকার প্রতিষ্ঠিত মাদক ব্যবসায়ী। পুলিশ বেশ কয়েকবার তাকে ধরেছে, মামলা দিয়েছে, কিন্তু সে আবার জামিনে বের হয়ে আসতো।
বাংলাদেশ সময় : ১৮৩৩ ঘণ্টা, জুন ২৭, ২০১৯
এমএস/এইচএডি/