ঢাকা, শুক্রবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

আইন ও আদালত

দানবীর আরপি সাহা হত্যায় মাহবুবের মৃত্যুদণ্ড

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬০৫ ঘণ্টা, জুন ২৭, ২০১৯
দানবীর আরপি সাহা হত্যায় মাহবুবের মৃত্যুদণ্ড রণদা প্রসাদ সাহা ও ভবানী প্রসাদ সাহা।

ঢাকা: মুক্তিযদ্ধের সময় দানবীর রণদা প্রসাদ সাহা (আর পি সাহা) ও তার ছেলে হত্যাকাণ্ডসহ তিনটি গণহত্যার অভিযোগে টাঙ্গাইলের মির্জাপুরের মাহবুবুর রহমানকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।

বৃহস্পতিবার (২৭ জুন) আসামির উপস্থিতিতে চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. শাহিনুর ইসলামের নেতৃত্বে তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল এ রায় দেন ।

আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন প্রসিকিউটর রানা দাশগুপ্ত।

আসামি মাহবুবুর রহমানের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী গাজী এম এইচ তামিম।  

রায়ের সময় রণদা প্রসাদ সাহার পুত্রবধূ স্ত্রী শ্রীমতি সাহা ও নাতি রাজীব সাহাসহ কুমুদিনী ওয়েলফেয়ার ট্রাস্টের বেশ কয়েকজন আদালতে উপস্থিত ছিলেন।  

রায় ঘোষণার পরে প্রসিকিউটর রানা দাশগুপ্ত সাংবাদিকদের বলেন, তিনটি অভিযোগ গঠন করে এ মামলার বিচার শুরু হয়েছিলো। প্রসিকিউশন সন্দোহাতীতভাবে তিনটি অভিযোগই প্রমাণ করতে পেরেছে, এমন অভিমত ব্যক্ত করে আদালত তিনটি অভিযোগেই আসামি মাহবুবুর রহমানকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন। এ রায়ে অবশ্যই আমরা সন্তুষ্ট।  

তবে আসামির আইনজীবী গাজী এম এইচ তামিম বলেন, এই রায়ে আসামিপক্ষ সংক্ষুব্ধ। এ রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে আপিল করা হবে।

এদিকে রায়ের পর সন্তোষ প্রকাশ করে শ্রীমতি সাহা বলেন, আমাদের দেশের ওপর, আমাদের পরিবারের ওপর এত অন্যায় এত অবিচার হয়েছিল, আজকে এই রায়ের মাধ্যমে তা স্বীকার করে নেওয়া হলো। অত্যাচারের বিচার পেয়েছি, স্বাধীনতার এত বছর পর হ‌লেও উত্তর পেয়েছে আগামী প্রজন্ম। আর‌ পি সাহার মত মহান একজন ব্য‌ক্তি‌কে হত্যা করা হয়েছে। আমরা এ রায়ের প্রতি শ্রদ্ধা জানাই। এবং সবার কাছে আশীর্বাদ চাই।  

নাতি রাজিব সাহা বলেন, এতদিন নিঃস্ব অবস্থায় ছিলাম। জানতে পারছিলাম না, বুঝতে পারছিলাম যে কী হবে, কোথায় যাবো। আজকে বিশাল একটি অধ্যায়ের পরিসমাপ্তি হল।  

এর আগে ২৪ এপ্রিল এ বিষয়ে রায় ঘোষণার জন্য অপেক্ষমান (সিএভি) রেখেছিলেন ট্রাইব্যুনাল। পরে ২৬ জুন রায় ঘোষণার জন্য ২৭ জুন দিন ঠিক করেন ট্রাইব্যুনাল।

গত বছরের ১১ ফেব্রুয়ারি ট্রাইব্যুনাল মাহবুবুর রহমানের বিরুদ্ধে অভিযোগ আমলে নেন। পরে ২৮ মার্চ অভিযোগ গঠন করেন ট্রাইব্যুনাল।  

২০১৭ সালের ২ নভেম্বর তদন্ত সংস্থার কার্যালয়ে মামলার প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। ওইদিন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার প্রধান সমন্বয়ক আব্দুল হান্নান খান বলেন, আসামি মাহবুবুর রহমান ১৯৭১ সালের ৭ মে মধ্যরাতে নারায়ণগঞ্জের স্থানীয় রাজাকারদের সহায়তায় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর ২০-২৫ জন সদস্যকে নিয়ে রণদা প্রসাদ সাহার বাসায় অভিযান চালায়।

‘আসামি এক সময় জামায়াতের সমর্থক ছিলেন। কিন্তু নির্দলীয়ভাবে তিন তিনবার ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও প্রতিবারই পরাজিত হয়েছেন। ’

মামলাটির তদন্ত শুরু হয়েছিল ২০১৬ সালের ১৮ এপ্রিল। তদন্ত সম্পন্ন করতে দেড় বছরেরও বেশি সময় লেগেছে।

মুক্তিযুদ্ধের সময় আসামি টাঙ্গাইলের মির্জাপুরের ভারতেশ্বরী হোমসের আশপাশের এলাকা, নারায়ণগঞ্জের খানপুরের কুমুদিনী ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট ও তার আশপাশে এবং টাঙ্গাইল সার্কিট হাউজ এলাকায় অপরাধ সংঘটিত করেন।
 
তদন্তে মাহবুবুর রহমানের বিরুদ্ধে অপহরণ, হত্যা, অগ্নিসংযোগ ও গণহত্যার প্রমাণ উঠে এসেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, তদন্তকালে ৬০ জনের সাক্ষ্য নেওয়া হয়েছে এবং মোট ১০০ পাতার নথিপত্র সংগ্রহ করা হয়। মামলাটি তদন্ত করেন সংস্থার তদন্ত কর্মকর্তা আতাউর রহমান।  

মানবসেবায় অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ স্বাধীনতার পর সরকার আর পি সাহাকে মরণোত্তর স্বাধীনতা পদক দেয়। মানবহিতৈষী কাজের জন্য ব্রিটিশ সরকার রায় বাহাদুর খেতাব দিয়েছিল আর পি সাহাকে। তার বাবার বাড়ি ছিল টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে। সেখানে তিনি একাধিক শিক্ষা ও দাতব্য প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন।

এক সময় নারায়ণগঞ্জে পাটের ব্যবসায় নামেন রণদা প্রসাদ সাহা; থাকতেন নারায়ণগঞ্জের খানপুরের সিরাজদিখানে। সে বাড়ি থেকেই তাকে, তার ছেলে ও অন্যদের ধরে নিয়ে যান মাহবুবুর রহমান ও তার সহযোগীরা।

বাংলাদেশ সময়: ১২০৩ ঘণ্টা, জুন ২৭, ২০১৯
ইএস/এমএ/এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।