মঙ্গলবার (২৫ জুন) ইফা’র একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারীর সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা যায়।
তারা জানান, ডিজির স্বেচ্ছাচারিতা বন্ধে ক্ষমতা খর্বের ঘোষণায় স্বস্তি বিরাজ করছে।
এ ব্যাপারে নাম প্রকাশ না করার শর্তে ইফা’র এক পরিচালক বাংলানিউজকে বলেন, গত ১০ বছরে তার স্বেচ্ছাচারিতা আমাদের চাকরি জীবনকে অতিষ্ঠ করে তুলেছিল। অফিস সকাল ১০টা থেকে পাঁচটা পর্যন্ত হলেও বাড়ি ফিরতে ফিরতে রাত ১২টা হয়ে যেতো। বন্ধের দিনেও তিনি রাত ১২টা/একটা পর্যন্ত আমাদের অফিস করাতেন। কোনো কাজ না থাকলেও অফিসে ডেকে বসিয়ে রাখতেন। এতে আমাদের পারিবারিক জীবনে সমস্যার সৃষ্টি হতো।
এ পরিচালক আরো বলেন, তিনি মৌখিক নির্দেশেই আর্থিক কার্যক্রম সম্পাদনা করতেন। সরকারি চাকরির বিধি-বিধান, আইন কিছুই মানতেন না। শুধু তাই-ই নয়। দৈনিক চুক্তিতে অনেক প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তা নিয়োগ দিয়েছেন তিনি। অনেক যোগ্য কর্মকর্তাকে পদোন্নতি না দিয়ে তার আত্মীয়-স্বজনদের পদোন্নতি দিয়েছেন। এসব কারণেই ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছিল। এখন মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে সব ক্ষমতা বোর্ডের কাছে ন্যস্ত হওয়ায় আমাদের মধ্যে স্বস্তি ফিরে এসেছে।
নাম প্রকাশ না করা শর্তে ইফা’র কয়েকজন সহকারী পরিচালক বাংলানিউজকে জানান, এ প্রতিষ্ঠানে কারো কোনো মূল্যায়ন ছিল না। তিনি রাতের বেলায় অফিস আদেশ বাস্তবায়ন করতেন। শুধু তাই নয় মৌখিক আদেশে আর্থিক লেনদেন করায় অডিট রিপোর্টে আপত্তির কারণে অনেকে অবসরে গেলেও আর্থিক সহায়তা পাচ্ছেন না। বোর্ডের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর হওয়ায় এখানে শৃঙ্খলা ফিরে আসবে।
এ ব্যাপারে ইফা’র পরিচালক মুহম্মদ মহিউদ্দিন মজুমদার বাংলানিউজকে বলেন, বোর্ডের এই সিদ্ধান্তকে আমরা সাধুবাদ জানাই।
তিনি আরও বলেন, প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তাকে বদলি করতে হলে আগে বোর্ডের অনুমোদন নিতে হয়। কিন্তু তিনি কখনোই তা করতেন না। বদলি করে তারপর বোর্ডের কাছে পাঠাতেন। গত ১০ বছর ধরে তিনি যদি সুন্দরভাবে কাজ করতেন তাহলে এ সমস্যা হতো না।
এ পরিচালক আরও বলেন, গত রোববার (২৩ জুন) আমরা ঢাকায় অবস্থানরত সব পরিচালক মিলে বৈঠক করেছি। সবাই ডিজির ক্ষমতা খর্ব হওয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। শুধু তাই-ই নয়, ভবিষ্যতে এমন অনিয়ম-দুর্নীতি যেন আর না হয় সেদিকে আমরা লক্ষ রাখবো। উনি বৈধ যে সিদ্ধান্ত দিবেন আমরা সেটি মানবো। অবৈধ কাজের প্রতিবাদ আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে জানাবো। ইফা দুর্নীতিমুক্ত হোক। একইসঙ্গে এখানে শৃঙ্খলা ফিরে আসুক এটাই আমাদের প্রত্যাশা।
একাধিক উপ-পরিচালক বাংলানিউজকে তাদের বৈঠকের বিষয়ে জানান। তারা প্রত্যাশা করছেন ইফায় চেইন অব কমান্ড ফিরে আসবে।
দুর্নীতি, স্বেচ্ছাচারিতা, ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশনের মামলার পরিপ্রেক্ষিতে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের (ইফা) বহুল আলোচিত মহাপরিচালক (ডিজি) সামীম মোহাম্মদ আফজালের অপসারণের দাবিতে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আন্দোলনের মধ্যে গত শনিবার (২২ জুন) সচিবালয়ে সংস্থাটির বোর্ড অব গভর্নরসের সভায় তাকে বহাল রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সভা শেষে ধর্ম প্রতিমন্ত্রী আলহাজ শেখ মো. আবদুল্লাহ বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছিলেন।
তিনি বলেন, ইসলামিক ফাউন্ডেশন আমাদেরই প্রতিষ্ঠান। সেখানে বর্তমানে যে অসম্মানজনক কাজ হচ্ছে সেটা আমরা চাই না। এজন্য ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক সামীম মোহাম্মদ আফজালকে বলেছি, বর্তমান পরিস্থিতি সামাল দিয়ে আপনি যেটা ভালো মনে করেন সেই সিদ্ধান্ত নেবেন। আর যারা আন্দোলন করছে আমরা তাদেরও বলেছি যে, এখানে কোনো গণ্ডগোল করা যাবে না।
ওই সভা থেকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় কোনো নিয়োগ, বদলি বা অপসারণের সিদ্ধান্ত ডিজি একা নিতে পারবেন না। বোর্ড অব গভর্নরসের অনুমোদন লাগবে। যারা আন্দোলন করেছিল ডিজির বিরুদ্ধে তাদের বদলির ক্ষেত্রেও ডিজি নিজে সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন না।
এদিকে ডিজির পদত্যাগের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি বোর্ড। পদত্যাগের সিদ্ধান্ত ডিজির ওপর ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। পদত্যাগ না করায় তার চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগ পর্যন্ত স্বপদেই বহাল থাকছেন তিনি।
২০০৯ সালের জানুয়ারিতে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক হিসেবে নিয়োগ পান সামীম মোহাম্মদ আফজাল। ১০ জুন ক্ষমতার অপব্যবহার ও স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগে ইফা ডিজিকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয় ধর্ম মন্ত্রণালয়। তার চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিলের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে কেন অবহিত করা হবে না তা ৭ কার্যদিবসের মধ্যে ধর্ম মন্ত্রণালয়কে লিখিতভাবে জানাতে বলা হয়।
ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মসজিদ মার্কেট বিভাগের পরিচালক মুহাম্মদ মহীউদ্দিন মজুমদারকে সম্প্রতি সাময়িক বরখাস্ত করেন ইফা ডিজি সামীম। এ সংক্রান্ত আদেশকে কেন্দ্র করে এ শোকজের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার পর থেকেই ইসলামিক ফাউন্ডেশনে অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়।
বাংলাদেশ সময়: ২১৪৩ ঘণ্টা, জুন ২৫, ২০১৯
এসএমএকে/এইচএডি