ঢাকা, শুক্রবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

ট্রেন দুর্ঘটনা: ঘুম ভেঙে উদ্ধার কাজে নামেন নারীরাও

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯৩২ ঘণ্টা, জুন ২৪, ২০১৯
ট্রেন দুর্ঘটনা: ঘুম ভেঙে উদ্ধার কাজে নামেন নারীরাও উপবন এক্সপ্রেস

মৌলভীবাজার: মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায় সিলেট থেকে ঢাকাগামী উপবন এক্সপ্রেস দুর্ঘটনা কবলে পড়ে ৪ জন নিহত হয়েছে। দুর্ঘটনায় কবলিত ট্রেনের খবর পেয়ে স্থানীয়রা উদ্ধার কাজে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন। ঘুম ভেঙে পুরুষ সদস্যদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে উদ্ধার কাজে অংশ নেন নারীরাও।

রোববার (২৩ জুন) দিনগত রাত পৌনে ১২টার দিকে কুলাউড়া উপজেলার বরমচাল স্টেশনের পাশে ইসলামাবাদ এলাকায় বরছড়া রেলব্রিজে এ দুর্ঘটনা ঘটে।

যাত্রী ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সিলেট থেকে ছেড়ে আসা ঢাকাগামী উপবন এক্সপ্রেস ট্রেনটি ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলার মাইজগাঁও স্টেশন থেকে যাত্রী তুলে বরমচাল স্টেশন পার করে।

এসময় স্টেশনের নিকটবর্তী ইসলামাবাদ এলাকায় বরছড়া রেলব্রিজে এসে ট্রেনের পেছনের একটি বগি লাইনচ্যুত হয়। সঙ্গে সঙ্গে অন্যান্য তিনটি বগি লাইনচ্যুত হয়ে ছিটকে পড়ে। এসময় ট্রেনের দু’টি বগি রেলব্রিজ ভেঙে খালে পড়ে যায়।

যাত্রীদের চিৎকার শুনে পার্শ্ববর্তী বরমচাল বাজারে অবস্থানরত স্থানীয় বাসিন্দারা এগিয়ে আসেন। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে স্থানীয় মসজিদে মাইকিং করে উদ্ধার কাজে নামেন এলাকাবাসী। মাইকিং শুনে ঘর ছেড়ে ঘুম ভেঙে উদ্ধার কাজে নামেন নারী-পুরুষ উভয়ে।

স্থানীয় বাসিন্দা শিপন চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, আমি তখন ঘুমে ছিলাম। হঠাৎ করে বিকট শব্দ শুনে ঘুম ভেঙে যায়। বের হয়ে দেখি মানুষজন চিৎকার করছেন আর একটি ট্রেন থামানো। দৌড়ে এসে দেখি উপবনের দু'টি বগি ব্রিজ ভেঙে পড়ে আছে, আরো দু’টি বগি লাইনচ্যুত হয়ে আছে। সঙ্গে সঙ্গে যাত্রীদের আমরা বগি থেকে বের করে আনার কাজে নেমে পড়ি। ৫-১০ মিনিটের মাথায় স্থানীয় অর্ধশতাধিক মানুষ এসে উদ্ধার কাজে নামেন। হঠাৎ দেখি অনেক স্থানীয় নারীরাও উদ্ধার কাজে নেমেছেন।

এদিকে উদ্ধার করে আহতদের হাসপাতালের নেওয়ার জন্য এলাকার প্রায় ৩০টি সিএনজি চালিত অটোরিকশা ও অন্যান্য যানবাহন কাজ করেছে। অটোরিকশা চালক সেন্টু মিয়া জানান, দুর্ঘটনার খবর শুনে সঙ্গে সঙ্গে আমাদের বরমচাল স্ট্যান্ডের সব সিএনজিচালিত অটোরিকশা চালকদের ফোন করে ঘুম থেকে জাগিয়ে নিয়ে আসি। আমরা সবাই মিলে আহতদের হাসপাতালে পৌঁছে দিয়েছি।

স্থানীয় বাসিন্দা সিরাজুল ইসলাম বলেন, সরকারি উদ্ধারকর্মীরা পৌঁছার আগেই আমরা এলাকাবাসী মিলে প্রায় ৫০ ভাগ মানুষকে উদ্ধার করে ফেলি। পরে পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস ও অন্যান্য বাহিনী এসে উদ্ধার কাজ শুরু করে। আমরা তখনো তাদের সাহায্য করেছি। এলাকার মানুষ এগিয়ে না এলে নিহতের সংখ্যা আরো বাড়তো বলে জানান তিনি।

দুর্ঘটনাকবলিত ট্রেনের ‘চ’ বগির যাত্রী চাঁদপুর জেলার বাসিন্দা মিজানুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, এলাকার মানুষের সহায়তায় আমরা প্রাণে রক্ষা পেয়েছি। তারা এসে আমাদের উদ্ধার করে আহতদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছে। অক্ষতদের নিজেদের বাড়িঘরে আশ্রয় দিয়েছেন। আমরা তাদের কাছে আজীবন কৃতজ্ঞ থাকব।

স্থানীয়দের এমন স্বেচ্ছায় অংশগ্রহণের প্রশংসা করেছে পুলিশ। কুলাউড়া সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ভারপ্রাপ্ত) রাশেদুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, আমরা খবর পেয়ে এলাকায় গিয়ে দেখেছি স্থানীয়রা এক-দু'জন করে যাত্রীদের উদ্ধার করে নিয়ে আসছেন। এটা সত্যিই প্রশংসনীয়। পুলিশসহ অন্যান্য বাহিনীকেও তারা সহায়তা করেছেন।

বাংলাদেশ সময়: ০৫২৭ ঘণ্টা, জুন ২৪, ২০১৯
এসএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।