রোববার (২৩ জুন) রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে তামাক বিরোধী জোট, ক্যান্সার সোসাইটি এবং নেটওয়ার্ক ফর টোবাকো ট্যাক্স পলিসি আয়োজিত এক সেমিনারে এসব আশঙ্কার কথা জানান দেশের বিশিষ্টজনেরা।
সেমিনারে জানানো হয়, বিশ্বের বেশি তামাক ব্যবহারকারী দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম বাংলাদেশ।
সাবেক সচিব রুহুল কুদ্দুস বলেন, আমাদের ভূমিকে বিশ্বের অন্যান্য দেশ তামাক পণ্য উৎপাদনের উত্তম স্থান হিসেবে নিচ্ছে। এতে দিনে দিনে হুমকিতে পড়ছে জনস্বাস্থ্য। তিনি বলেন, জাপান টোব্যাকো কোম্পানি প্রায় সাড়ে ১২ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে, তারা ওয়েবসাইটে প্রচার করছে নতুন নতুন পণ্য আনার। তারা আবার একটা ক্যান্সার হাসপাতালও তৈরি করবে। এর অর্থ হলো তারা সিগারেটের মাধ্যমে আমাদের অসুস্থ করবে আবার তাদের হাসপাতালে চিকিৎসা করাবে। এতে তারা দুই দিক থেকে লাভবান হবে, আর ক্ষতিগ্রস্ত হবো আমরা, স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়বে গোটা জাতি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যঅপক এস এম আব্দুল্লাহ বলেন, আমরা আশা করেছিলাম সরকার সামগ্রিক ক্ষতির কথা বিবেচনায় নিয়ে সিগারেটের ওপর উচ্চকর বাড়াবে, তা হয়নি। ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেটে আমাদের প্রস্তাবনা অনুসারে কর হার বাড়ালে প্রায় ৩ দশমিক ২ মিলিয়ন প্রাপ্তবয়স্ক ধূমপায়ী ধূমপান ছেড়ে দিতে উৎসাহী হতেন, সিগারেটের ব্যবহার ১৪ থেকে হ্রাস করে সাড়ে ১২ শতাংশে আনা যেতো, দীর্ঘ মেয়াদে ১ মিলিয়ন বর্তমান ধূমপায়ীর অকাল মৃত্যুরোধ করা সম্ভব হতো। পাশাপাশি ৬ হাজার ৬৮০ কোটি থেকে ১১ হাজার ৯৮০ কোটি টাকার মধ্যে অতিরিক্ত রাজস্ব আয় হতো। কিন্তু প্রস্তাবিত শুল্ক-করের প্রস্তাব তামাক কোম্পানিগুলো নানা সুবিধা পাবে।
অ্যাডভোকেট সৈয়দ মাহবুবুল আলম বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটে প্রত্যাশা ছিলো সিগারেটের মূল্য ৪টি স্তর থেকে কমিয়ে ২ স্তরে এনে নিম্ন সিগারেটের ১০ শলাকার দাম ৫০ টাকা করে ৬০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা। আর উচ্চস্তরের সিগারেটের ১০ শলাকা সিগারেটের মূল্য ১০৫ টাকা নির্ধারণ করে ৬০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা এবং প্রতিক্ষেত্রে ১০ শলাকা সিগারেটে ৫ টাকা সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা। কিন্তু প্রস্তাবিত বাজেটে মধ্যম, উচ্চ এবং প্রিমিয়াম স্তরে সিগারেটের সম্পূরক শুল্ক ৬৫ শতাংশ অপরিবর্তিত রেখে ১০ শলাকা সিগারেটের মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৬৩ টাকা, ৯৩ টাকা এবং ১২৩ টাকা। আর নিম্নস্তরের ১০ শলাকা সিগারেটের দাম মাত্র ২ টাকা বৃদ্ধি করে ৩৭ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এটা প্রত্যাশা ছিলো না আমাদের।
তিনি বলেন, ধোয়াবিহীন তামাকে (জর্দা ও গুল) ট্যারিফ ভ্যালু প্রথা বিলুপ্ত করে প্রতি ১০ গ্রাম জর্দার খুচরা মূল্য ৩৫ টাকা ও ১০ গ্রাম গুলের খুচরা মূল্য ২০ টাকা নির্ধারণ করে ৪৫ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক ও জর্দার ওপর ৫ টাকা ও ১০ গ্রাম গুলের ওপর ৩ টাকা সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা দরকার। তবে প্রস্তাবিত বাজেটে প্রতি ১০ গ্রাম জর্দার মূল্য ৩০ টাকা এবং ১০ গ্রাম গুলের মূল্য ১৫ টাকা নির্ধারণ করে ৫০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা হয়েছে।
অনুষ্ঠানে আলোচকরা বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটে করারোপের ফলে আরোপিত সম্পূরক শুল্ক অপরিবর্তিত থাকায় এবং কোম্পানির সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক আরোপ না করায় এর একটা বড় অংশ কোম্পানির ঘরে উঠবে। সরকারের এই প্রদক্ষেপের কারণে কোম্পানিগুলোর আয় ৩১ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পাবে।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন ক্যান্সার সোসাইটির পরিচালক অধ্যাপক ডা. গোলাম আহমেদ ফারুক, নাটাবের নির্বাহী পরিচালক কামাল উদ্দিন, স্ট্রাটেজিসের কান্ট্রি ম্যানেজার নাসর উদ্দিন শেখ প্রমুখ।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৩৬ ঘণ্টা, জুন ২৩, ২০১৯
ইএআর/জেডএস