ঢাকা, শনিবার, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

পত্রদূত সম্পাদক হত্যাকাণ্ডের বিচার হয়নি ২৩ বছরেও

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৪০৮ ঘণ্টা, জুন ২০, ২০১৯
পত্রদূত সম্পাদক হত্যাকাণ্ডের বিচার হয়নি ২৩ বছরেও দৈনিক পত্রদূত সম্পাদক শহিদ স. ম আলাউদ্দিন

সাতক্ষীরা: ২৩ বছর পেরিয়ে গেলেও সাতক্ষীরার দৈনিক পত্রদূত সম্পাদক শহিদ স. ম আলাউদ্দিন হত্যাকাণ্ডের বিচার হয়নি আজও। বিচারের বাণী কাঁদছে নীরবে, নিভৃতে।

১৯৯৬ সালের ১৯ জুন রাত ১০টা ২৩ মিনিটে নিজ পত্রিকা অফিসে কর্মরত অবস্থায় সাতক্ষীরার গডফাদারদের ভাড়া করা কিলারের কাটা রাইফেলের গুলিতে নির্মমভাবে নিহত হয়েছিলেন সাবেক প্রাদেশিক পরিষদ সদস্য, দৈনিক পত্রদূত সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা শহিদ স. ম আলাউদ্দিন।

সাতক্ষীরা আদালত সূত্রে জানা গেছে, দৈনিক পত্রদূত সম্পাদক স. ম আলাউদ্দিনকে হত্যার ঘটনায় তার ভাই স. ম নাসির উদ্দিন একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।

পাঁচদিন পর পুলিশ হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত কাটা রাইফেলসহ সাতক্ষীরা শহরের সুলতানপুরের আব্দুল ওহাবের ছেলে যুবলীগ কর্মী সাইফুল ইসলামকে গ্রেফতার করে।

সে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়ে হত্যাকাণ্ডের কারণ এবং এরসঙ্গে জড়িত হিসেবে সাতক্ষীরার শীর্ষ চোরাকারবারী গডফাদার আলিপুরের আব্দুস সবুর, সাতক্ষীরা শহরের সুলতানপুরের গডফাদার খলিলুল্লাহ ঝড়ু, তার ভাই সন্ত্রাসী মোমিন উল্লাহ মোহন ও সাইফুল্লাহ কিসলু, কিসলুর সহযোগী এসকেন্দার মির্জা, প্রাণসায়রের সফিউর রহমান, সুলতানপুরের কাজী সাইফুল ইসলাম, তালা উপজেলার নগরঘাটা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুর রউফ, তার শ্যালক সাতক্ষীরা শহরের কামালনগরের সন্ত্রাসী আবুল কালাম ও কিসলুর ম্যানেজার আতিয়ারের নাম প্রকাশ করে।

এরপর প্রায় এক বছর তদন্ত শেষে ১৯৯৭ সালের ১০ মে সিআইডির খুলনা জোনের এএসপি খন্দকার মো. ইকবাল উপরিউক্ত ব্যক্তিদের আসামি শ্রেণীভুক্ত করে চাঞ্চল্যকর এই হত্যা মামলার চার্জশিট দাখিল করেন।

আসামিদের মধ্যে কারাগারে থাকা অবস্থায় সাইফুল্লাহ কিসলুর অপমৃত্যু হয়েছে। এছাড়া কিসলুর ম্যানেজার আতিয়ারকে আজও খুঁজে পাওয়া যায়নি।

আদালত সূত্র আরও জানায়, সাতক্ষীরা দায়রা জজ আদালতে আসামিদের বিরুদ্ধে মামলাটির অভিযোগ গঠনের পর ঝড়ু, সবুরসহ কয়েকজন আসামি উচ্চ আদালতে কোয়াশমেন্টের আবেদন করলে মামলাটির বিচার কার্যক্রম স্থগিত হয়ে যায়। পরবর্তীতে হাইকোর্ট ডিভিশন এবং অ্যাপেলিট ডিভিশনের আদেশে দীর্ঘদিন মামলাটির কার্যক্রম বন্ধ ছিল।

একপর্যায়ে অ্যাপেলিট ডিভিশন বিষয়টির নিষ্পত্তি করে সব আসামির বিরুদ্ধে মামলাটি দ্রুত বিচারের নির্দেশ দেন। এ পর্যায়ে মামলাটি সাতক্ষীরা দায়রা জজ আদালতে ফের বিচার কার্যক্রম শুরুর সময় ফের সবুর, ঝড়ুসহ কয়েকজন আসামি সাতক্ষীরা জেলার পরিবর্তে মামলাটি অন্য কোনো জেলায় বিচারের জন্য উচ্চ আদালতে আবেদন করলে বিচার কার্যক্রম আবারো স্থগিত হয়ে যায়।

হাইকোর্ট ডিভিশন আসামিদের আবেদন নামঞ্জুর করে আদেশ দিলে আসামিরা ঐ আদেশের বিরুদ্ধে অ্যাপেলিট ডিভিশনে যায়। সেখানে শুনানির পর আসামিদের আবেদন নামঞ্জুর হয়। সে আদেশ নিম্ন আদালতে আসার পর মূলত ২০১২ সালে মামলাটির সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়। কিন্তু মামলাটির বিচার কাজ আজও শেষ হয়নি। খুনিরা জামিনে থেকে আজও আস্ফালন করে বেড়াচ্ছেন সাতক্ষীরা শহরে।

সূত্র জানায়, মামলাটির ৩৮ জন সাক্ষীর মধ্যে এরইমধ্যে ২২ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়েছে। বেশ কয়েকজন সাক্ষীকে ওয়ারেন্ট দেওয়ার পরও তাদেরকে মামলার বিবরণে উল্লিখিত ঠিকানায় খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।

সূত্র আরো জানায়, এরইমধ্যে মামলাটির অভিযোগপত্রে উল্লিখিত সাক্ষীদের মধ্যে ৭-৮ জন মারা গেছেন। হুমকি দেওয়া হয়েছে কয়েকজন সাক্ষীকে।

আর তাতে দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে বিচারপ্রত্যাশী শহিদ স. ম আলাউদ্দিনের স্বজনসহ সাতক্ষীরার ২০ লাখ মানুষের অপেক্ষা।

যদিও বর্তমানে মামলার বাদীপক্ষের বিচারক পরিবর্তনের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে মামলার কার্যক্রম স্থগিত রয়েছে।

শহিদ স. ম আলাউদ্দিনের মেয়ে দৈনিক পত্রদূতের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক লায়লা পারভীন সেজুতি বাংলানিউজকে বলেন, ঘাতকেরা নানাভাবে বিচার কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত করেছে। বছরের পর বছর ঘুরছি। এখনো হত্যাকারীরা আস্ফালন করে বেড়ায়। আর আমরা থাকি নিরাপত্তাহীনতায়। এর আগে মামলার সাক্ষীদের হুমকি দেওয়া হয়েছে। আসলে কি বিচার পাবো?

আধুনিক সাতক্ষীরার স্বপ্নদ্রষ্টা, শহিদ স. ম আলাউদ্দিন শুধু পত্রদূতের সম্পাদক ছিলেন না, তিনি একাধারে সাতক্ষীরার ব্যবসা-বাণিজ্যের সম্ভাবনার দ্বার ভোমরা স্থলবন্দর, সাতক্ষীরা চেম্বার অব কমার্স, সাতক্ষীরা ট্রাক টার্মিনাল ও বঙ্গবন্ধু পেশাভিত্তিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রতিষ্ঠাতা।

স. ম আলাউদ্দিন ১৯৭০ সালের নির্বাচনে সাতক্ষীরার তালা-কলারোয়া নির্বাচনী এলাকা থেকে প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে তিনিই সর্বকনিষ্ঠ প্রাদেশিক পরিষদ সদস্য।

প্রাদেশিক পরিষদ ও জাতীয় পরিষদের যেসব সদস্য সরাসরি মুক্তিযুদ্ধের রণাঙ্গনে অস্ত্র হাতে যুদ্ধ করেন তাদের মধ্যে অন্যতম শহিদ স. ম আলাউদ্দিন। যিনি একাধারে মুক্তিযুদ্ধের সংগঠকও।

মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি তালা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন।

এদিকে দৈনিক পত্রদূত সম্পাদক স. ম আলাউদ্দিনের ২৩তম শাহাদৎবার্ষিকী উপলক্ষে সাতক্ষীরা প্রেসক্লাব ও পত্রদূত পরিবার বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।

বাংলাদেশ সময়: ০০০৭ ঘণ্টা, জুন ২০, ২০১৯
জেডএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।