ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

জাতীয়

জান্নাতিকে পুড়িয়ে হত্যার ঘটনায় রিমান্ডে আসামিরা 

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১৩২ ঘণ্টা, জুন ২০, ২০১৯
জান্নাতিকে পুড়িয়ে হত্যার ঘটনায় রিমান্ডে আসামিরা 

নরসিংদী: নরসিংদীর হাজিপুরে মাদক ব্যবসায় জড়িত না হওয়ায় দশম শ্রেণির স্কুলছাত্রীকে পেট্রোল ঢেলে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে হত্যার ঘটনায় অভিযুক্ত জান্নাতির স্বামী শিপলু মিয়ার চার দিন ও বাকি তিন আসামির দুই দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। 

বুধবার (১৯ জুন) দুপুরে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শাহিনা আক্তারের আদালতে তাদের রিমান্ড মঞ্জুর করা হয়।

মঙ্গলবার (১৮ জুন) রাতে মাদক ব্যবসায়ী শান্তি বেগম ওরফে ফেন্সী রানী ও তার ছেলে শিপলু মিয়াসহ চার জনকে নাটোর জেলার নারায়ণপুর পুকুরপাড় এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়।

বুধবার দুপুরে জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে সংবাদ সম্মেলন করে এ তথ্য জানান পুলিশ সুপার মিরাজ উদ্দিন আহম্মেদ।
গ্রেফতারকৃতরা হলেন-নিহত জান্নাতির শাশুড়ি শান্তি বেগম ওরফে ফেন্সী রানী (৪৫), ছেলে সাব্বির আহামেদ শিপলু ওরফে শিবু (২৩), মেয়ে ফাল্গুনী বেগম (২০) ও শ্বশুর হুমায়ন মিয়া (৫০)। সবাই নরসিংদী চরহাজিপুরের খাসেরচর গ্রামের বাসিন্দা।

সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার মিরাজ উদ্দিন আহম্মেদ বলেন, পারিবারিক মাদক ব্যবসায় সম্পৃক্ত না হওয়ায় জান্নাতুল ফেরদৌসি ওরফে জান্নাতিকে পুড়িয়ে হত্যা করে শ্বশুরবাড়ীর লোকজন। এ ঘটনায় গত ১৫ই জুন শনিবার নিহতের বাবা শরিফুল ইসলাম বাদী হয়ে সদর মডেল থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।  

এ ঘটনায় ওই দিন রাতেই ছয় জনকে আটক করে পুলিশ। পরে তাদের দেয়া তথ্য মতে পুলিশ ও ডিবি পুলিশের একটি চৌকস দল নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ, টঙ্গি, চাঁপাইনবাবগঞ্জ অভিযান পরিচালনা করে। সেখানে না পেয়ে নাটোর জেলায় অভিযান চালানো হয়। সেখান থেকে মঙ্গলবার রাতে এজাহারভুক্ত চার আসামি মাদক ব্যবসায়ী শান্তি বেগম ওরফে ফেন্সী রানীসহ হত্যার ঘটনায় জড়িতদের গ্রেফতার করা হয়। বুধবার তাদের আদালতে সোপর্দ করে আদালতের অনুমতির প্রেক্ষিতে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।  

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন সদ্য পদোন্নতি প্রাপ্ত পুলিশ সুপার জাকির হোসেন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শফিউর আলম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বেলাল হোসেন, সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সৈয়দুজ্জামান, ডিবি পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা গোলাম মোস্তফা, গ্রেফতার অভিযানে নেতৃত্ব দেয়া উপ-পরিদর্শক নাইমুল ইসলাম মোস্তাক প্রমুখ।  

এদিকে হত্যার সঙ্গে জড়িত আসামিদের বুধবার দুপুরে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শাহিনা আক্তারের আদালতে সোপর্দ করা হয়। অধিকতর জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশ বিজ্ঞ আদালতের বিচারকের কাছে ১০ দিনের রিমান্ডের আবেদন জানান। বিচারক নিহত জান্নাতির স্বামী শিপলু মিয়ার চারদিন ও বাকি তিন আসামির দুই দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন।  
 
উল্লেখ্য, প্রায় ১ বছর আগে নরসিংদী সদর উপজেলার হাজিপুর গ্রামের শরীফুল ইসলাম খানের দশম শ্রেণিতে পড়ুয়া মেয়ে জান্নাতি আক্তারের (১৬) সঙ্গে পার্শ্ববর্তী খাসেরচর গ্রামের হুমায়ুন মিয়ার ছেলে শিপলু মিয়ার প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। কিছুদিন পরই পরিবারের অমতে তারা পালিয়ে বিয়ে করেন। বিয়ের কিছুদিন যেতে না যেতেই স্বামীর আসল রূপ বেরিয়ে আসে। পারিবারিক মাদক ব্যবসায় সম্পৃক্ত করতে শাশুড়ি শান্তি বেগম ও শিপলু তাকে চাপ প্রয়োগ করতে থাকে। এতে রাজি হয়নি জান্নাতি। ফলে জান্নাতির ওপর নেমে আসে কঠোর নির্যাতন। যৌতুকের টাকা না দেয়াসহ মাদক ব্যবসায় জড়িত না হওয়ায় চলতি বছরের ২১শে এপ্রিল রাতে ঘুমন্ত অবস্থায় শান্তি বেগম, তার মেয়ে ফাল্গুনী বেগম ও শিপলু  জান্নাতির শরীরে পেট্রোল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়।  দগ্ধ হয়ে ছটফট করলেও তাকে হাসপাতালে নিয়ে যায়নি। পরে এলাকাবাসীর চাপে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অবস্থার অবনতি হলে তাকে ঢাকা মেডিকেলের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়। দীর্ঘ ৪০ দিন মৃত্যু যন্ত্রণার পর  গত ৩০ মে  ঢামেকের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।  

এদিকে ঘটনার চার দিন পর ২৫ এপ্রিল নিহতের দাদা মুক্তিযোদ্ধা সিরাজুল ইসলাম খান নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে জান্নাতির শাশুড়িসহ চার জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে মামলা দায়ের করেন।  

আদালত পুলিশ ব্যুরো-অব-ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) সাত দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন। দীর্ঘ ৫১ দিন তদন্ত শেষে এ ঘটনায় শান্তি বেগম, শিপলু, ফাল্গুনী বেগম ও হুমায়ন মিয়া জড়িত উল্লেখ করে গত রোববার দুপুরে আদালতে প্রাথমিক তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করে পিবিআই।

বাংলাদেশ সময়: ঘণ্টা, জুন ১৯, ২০১৯
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।