ইউএনএইচসিআরের গ্লোবাল ট্রেন্ড রিপোর্টের উপাত্ত অনুসারে, প্রায় ৭ কোটি ৮ লাখ মানুষ বর্তমানে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত। এ সংখ্যা ২০ বছরের মধ্যে দ্বিগুণ হয়েছে এবং গত বছরের তুলনায় এ বছর প্রায় ২৩ লাখ বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে।
ইউএনএইচসিআর জানায়, সংখ্যার হিসেবে ৭ কোটি ৮ লাখ এখনো রক্ষণশীল, যেহেতু বিশেষ করে ভেনেজুয়েলার সংকটের চিত্র এখনও আংশিকভাবে প্রতিফলিত হয়েছে মাত্র। ২০১৫ সাল থেকে সব মিলিয়ে ৪০ লাখের মতো ভেনেজুয়েলান তাদের দেশ ছেড়ে পালিয়েছে, যার ফলে এটি সাম্প্রতিক বিশ্বে সবচেয়ে বড় বাস্তুচ্যুতির সংকট হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশনার ফিলিপো গ্র্যান্ডি বলেন, আমরা এই পরিসংখ্যানগুলোতে যা দেখছি তা যুদ্ধ, সংঘর্ষ ও নিপীড়ন থেকে নিরাপত্তা প্রয়োজন মানুষের সংখ্যার দীর্ঘমেয়াদী ক্রমবর্ধমান প্রবণতার আরও নিশ্চিতকরণ। যদিও শরণার্থী এবং অভিবাসীদের ঘিরে প্রায়শই বিভক্তিকর ভাষা বিদ্যমান, কিন্তু আমরা উদারতা এবং একাত্মতার উদ্দীপনাও দেখছি, বিশেষ করে সেই জাতিগুলির মধ্যে যারা নিজেরা বড় সংখ্যক শরণার্থীকে আশ্রয় দিচ্ছে। এছাড়া আমরা নতুন নতুন দাতা সংস্থা যেমন উন্নয়ন সংস্থা, ব্যক্তিগত ব্যবসা এবং ব্যক্তি পর্যায়েরও অভূতপূর্ব অংশগ্রহণ দেখছি, যা শরণার্থীদের ওপরে গ্লোবাল কম্প্যাক্টের প্রেরণাকে কেবল প্রতিফলিতই করছে না, পাশাপাশি প্রতিদানও দিচ্ছে।
গ্লোবাল ট্রেন্ডস রিপোর্টে ৭ কোটি ৮ লাখের যে সংখ্যা দেওয়া হয়েছে সেখানে তিনটি বড় দল রয়েছে । প্রথম দলটি হচ্ছে শরণার্থী, যার মানে হচ্ছে সেসব মানুষ যারা সংঘর্ষ, যুদ্ধ ও নিপীড়নের কারণে নিজের দেশ ছেড়ে পালাতে বাধ্য হন। ২০১৮ সালে বিশ্বব্যাপী শরণার্থীর সংখ্যা ২ কোটি ৫৯ লাখে পৌঁছেছে, যা ২০১৭ সালের তুলনায় ৫ লাখ বেশি। এই সংখ্যার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত আছে ৫৫ লাখ ফিলিস্তিনি শরণার্থী, যারা জাতিসংঘের রিলিফ অ্যান্ড ওয়ার্কস এজেন্সির অধীনে সেবা পাচ্ছেন।
দ্বিতীয় দলটি হচ্ছে আশ্রয় প্রার্থী। এরা সেসব মানুষ, যারা নিজ দেশের বাইরে অবস্থান করছেন এবং আন্তর্জাতিক সুরক্ষা গ্রহণ করছেন, কিন্তু শরণার্থী মর্যাদা পাওয়ার আবেদনের চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছেন। ২০১৮ সালের শেষ নাগাদ বিশ্বব্যাপী আশ্রয় প্রার্থীর সংখ্যা ৩৫ লাখ।
তৃতীয় এবং সর্ববৃহৎ দলটি হচ্ছে সেসব মানুষ যারা নিজ দেশের ভেতরেই বাস্তুচ্যুত, যাদের সংখ্যা ৪ কোটি ১৩ লাখ। এ দলটিকে সাধারণত অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত মানুষ বলা হয়ে থাকে ।
বাস্তুচ্যুত মানুষের জন্য যেভাবে সমাধান পাওয়া যাচ্ছে, এর চেয়েও বেশি হারে বাড়ছে সামগ্রিক বাস্তুচ্যুতির পরিমাণ। শরণার্থীদের ক্ষেত্রে সবচেয়ে ভালো সমাধান হছে স্বেচ্ছায়, নিরাপদে এবং সম্মানের সঙ্গে স্বদেশে ফিরে যেতে পারা। অন্যান্য সমাধানের মধ্যে রয়েছে আশ্রয় প্রদানকারী স্থানীয় জনগোষ্ঠীর সঙ্গে অন্তর্ভুক্তিকরণ অথবা তৃতীয় কোনো দেশে স্থানান্তরিত হওয়া। কিন্তু ২০১৮ সালে মাত্র ৯২ হাজার ৪০০ শরণার্থীকে স্থানান্তর করা গেছে। ৫ লাখ ৯৩ হাজার ৮০০ শরণার্থী নিজ দেশে ফিরে যেতে পেরেছেন এবং ৬২ হাজার ৬০০ জন স্থায়ীভাবে বসবাসের সুযোগ পেয়েছেন।
ফিলিপো গ্র্যান্ডি আরও বলেন, প্রতিটি শরণার্থী পরিস্থিতির সঙ্গে, যেখানেই হোক না কেন, যতোদিন ধরেই চলুক না কেন, সেখানে সমাধানের ওপর জোর দেওয়া অব্যাহত থাকতে হবে এবং তাদের আপন গৃহে ফিরে যাওয়ার ক্ষেত্রে যেসব বাধা রয়েছে সেগুলো নির্মূল করতে হবে।
বাংলাদেশে ইউএনএইচসিআরের প্রতিনিধি স্টিভেন করলিস গ্লোবাল ট্রেন্ড রিপোর্টের বিষয়ে বলতে গিয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদাকে বাংলাদেশের প্রতি আরও সহমর্মিতা প্রদর্শন করতে বলেন। তিনি বলেন, বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গা যারা নিজের দেশ ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছিল তাদের নিরাপত্তা প্রদানের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সরকার এবং জনগণের উদারতারই প্রমাণ দেয় আজকে প্রকাশিত এই প্রতিবেদন।
বাংলাদেশ সময়: ১৯০৯ ঘণ্টা, জুন ১৯, ২০১৯
টিআর/এইচএ/