ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৭ রমজান ১৪৪৫

জাতীয়

শ্রেণিকক্ষে বন্যার পানি, বিঘ্নিত পাঠদান

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৪৫ ঘণ্টা, জুন ১৯, ২০১৯
শ্রেণিকক্ষে বন্যার পানি, বিঘ্নিত পাঠদান

লালমনিরহাট: হঠাৎ করে তিস্তার পানি বৃদ্ধি পেয়ে বন্যায় ডুবে গেছে নদী তীরবর্তী সব বিদ্যালয়। এতে পাঠদান মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে।

বুধবার (১৯ জুন) সকালে লালমনিরহাটের তিস্তার ডান তীরের বিদ্যালয়গুলোতে গিয়ে দেখা যায়, চারদিকে অথৈ পানি। রাস্তা ঘাট তলিয়ে যাওয়ার শিক্ষার্থীদের স্কুলে পাঠানো নিয়ে উদ্বিগ্ন অভিভাবকেরা।

তবে এ বিষয়ে কিছুই জানেন না জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার (ডিপিইও)।  

জেলার আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা ইউনিয়নে একটি উচ্চ বিদ্যালয়সহ পাঁচটি প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। বিদ্যালয়গুলো হচ্ছে- গোবর্দ্ধন হায়দারীয়া উচ্চ বিদ্যালয়, গোবর্দ্ধন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, আদর্শপাড়া এমএইচ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ইসমাইলপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বাহাদুর পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও গোবর্দ্ধন চর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। এছাড়াও জেলার অনেক বিদ্যালয় বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে।

স্থানীয়রা জানান, উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে মঙ্গলবার (১৮ জুন) হঠাৎ তিস্তার পানি বৃদ্ধি পেয়ে নদীর তীরবর্তী অঞ্চলগুলো প্লাবিত হয়। পানিবন্দি হয়ে পড়ে গোটা জেলার প্রায় ৮ হাজার পরিবার। বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে বেশকিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।

মহিষখোচা ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য মতিয়ার রহমান বাংলানিউজকে বলেন, এ ইউনিয়নের ছয়টি বিদ্যালয় পাঠদানের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। চারদিকে অথৈ পানিতে কোমলমতি শিশুদের বিদ্যালয়ে পাঠানো অনিরাপদ। এছাড়াও কয়েকটি বিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষে পানি প্রবেশ করায় পাঠদান সম্পূর্ণরূপে অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।

গোবর্দ্ধন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শরিফা আক্তার বাংলানিউজকে জানান, বিদ্যালয়ের চারদিকে পানি। যাওয়া-আসার রাস্তাও নেই। তাই স্থানীয়দের সহায়তায় কলাগাছের ভেলায় শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ে আনা হচ্ছে। বিষয়টি উপজেলা শিক্ষা অফিসারকে জানানো হয়েছে। তারপরও বিদ্যালয় চালিয়ে যেতে বলা হয়েছে। এজন্য অনিরাপদ হলেও ভেলায় করে শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ে আনা হচ্ছে।

গোবর্দ্ধন চর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কাজি শফিকুল ইসলাম বাংলানিউজকে জানান, বিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষে হাঁটু পানি হওয়ায় পাঠদানে সম্পূর্ণরূপে অনুপযোগী হওয়ায় শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ে আসেনি। নদীর কোল ঘেষা ও নিচু অঞ্চলে হওয়ায় সামান্য বন্যায় শ্রেণিকক্ষে পানি ঢুকে পড়ে।

শুধু আদিতমারী উপজেলায় নয়। জেলার পাঁচটি উপজেলায় তিস্তার ডান তীরের অনেক বিদ্যালয়ে এমন চিত্র বিরাজ করছে। তবে তিস্তায় পানি প্রবাহ কমে যাওয়ায় পাটগ্রাম ও হাতীবান্ধা উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতি কিছুটা উন্নতি ঘটলেও বাকি তিন উপজেলায় অপরিবর্তিত রয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, সন্ধ্যার মধ্যে পুরো জেলায় বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি ঘটবে।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার জাহাঙ্গীর আলম বাংলানিউজকে বলেন, বিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষে পানি বা জেলায় বন্যা চলছে সেটা আমার জানা নেই। কেউ বিষয়টি বলেনি। তবে উপজেলা শিক্ষা অফিসারদের মাধ্যমে খবর নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। জেলায় কতটি বিদ্যালয় বন্যা কবলিত এলাকায় রয়েছে সেটাও তার জানা নেই।

দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারাজের নির্বাহী প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, মঙ্গলবার তিস্তার পানি প্রবাহ বিপদসীমার ৩ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় বন্যার সৃষ্টি হয়। এ পয়েন্টে স্বাভাবিক পানি প্রবাহ ৫২ দশমিক ৬০ সেন্টিমিটার। তবে মধ্যরাত থেকে পানি প্রবাহ কমতে থাকে। বুধবার (১৯ জুন) সকাল ৯টায় এ পয়েন্টে পানি প্রবাহ রেকর্ড করা হয় ৫২ দশমিক ২৫ সেন্টিমিটার। যা বিপদসীমার ৩৫ সেন্টিমিটার নিচে। সন্ধ্যার মধ্যে গোটা জেলার বন্যা পরিস্থিতি উন্নতি ঘটবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৩৩৭ ঘণ্টা, জুন ১৯, ২০১৯
এনটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।