ঢাকা, শনিবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

‘কক্সবাজারের দুঃখ’ ঘুচবে কবে?

সুনীল বড়ুয়া, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৩১ ঘণ্টা, জুন ১৯, ২০১৯
‘কক্সবাজারের দুঃখ’ ঘুচবে কবে?

কক্সবাজার: সামান্য বৃষ্টি হলেই হাঁটুপানি, আর ভারি বর্ষণে রাস্তার ওপর সৃষ্টি হয় বন্যা! বাকি সময়টাতেও মনে হয়, শহরের সবচেয়ে কুৎসিত জায়গায় আছি। দেশের অন্যতম প্রধান পর্যটন শহর কক্সবাজারের প্রধান বাণিজ্যিক কেন্দ্র বাজারঘাটার চিত্র এটি। দুর্ভোগের শিকার মানুষদের মতে, চীনের দুঃখ যদি হয় হোয়াংহো নদী, কক্সবাজারের দুঃখ বাজারঘাটা। তাই এলাকাবাসীর প্রশ্ন, বাজারঘাটার দুঃখ ঘুচবে কবে?

স্থানীয়দের অভিযোগ, কক্সবাজারেরর বিভিন্নস্থানে পাহাড় কাটার কারণে পাহাড়ধোয়া মাটি এসে ড্রেন ভরাট হয়ে গেছে। কিছু কিছু এলাকায় ড্রেনের উপরিভাগ দখল করে পাকা তৈরি হয়েছে নানা স্থাপনা।

এতে, বাজারঘাটার জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তি মিলছে না পৌরবাসীসহ পর্যটকদের।

স্থানীয় সংবাদকর্মী শহিদুল্লাহ কায়সার বাংলানিউজকে বলেন, বছর দেড়েক আগে তৎকালীন পৌরসভার ভারপ্রাপ্ত মেয়র মাহবুবুর রহমান চৌধুরী বাজারঘাটা ও চাউল বাজার এলাকায় বড় বড় পাকা স্থাপনা উচ্ছেদ করে ড্রেন দখলমুক্ত করে খননকাজ চালিয়েছিলেন। সেসময় জলাবদ্ধতা কিছুটা কমলেও, বর্তমানে আবার আগের রূপে ফিরে এসেছে। বর্ষার প্রথমদিনের বৃষ্টিতেই ডুবে গেছে বাজারঘাটা।  

তিনি বলেন, বাজারঘাটার এ সমস্যা এক-দুইদিনের নয়। দীর্ঘদিন ধরে মানুষ এ দুর্ভোগ পোহাচ্ছে। অথচ, কক্সবাজার একটি বিখ্যাত পর্যটন শহর। এখানে সারা বছরই দেশি-বিদেশি পর্যটক আসা-যাওয়া করেন। সবচেয়ে বড় কথা, বাজারঘাটা পেরিয়েই পর্যটকদের  বিখ্যাত বার্মিজ মার্কেটে যেতে হয়।  

স্থানীয় ড. আছিং বাংলানিউজকে বলেন, আমার বাসা বাজারঘাটাতেই। সামান্য বৃষ্টি হলেই আর বাসা থেকে বের হতে পারি না। তখন অপেক্ষা করা অথবা ভিজতে ভিজতে বের হওয়া ছাড়া আর কোনো উপায় থাকে না। বিশেষ করে, সকালে বৃষ্টি হলে যন্ত্রণা আরও বেড়ে যায়। ছেলে ঠিক সময়ে স্কুলে যেতে পারে না, আমারও অফিস যেতে সমস্যা হয়।

তিনি বলেন, বৃষ্টির সময় জলাবদ্ধতা তো আছেই, এর কারণে প্রধান সড়ক, উপ-সড়কগুলোতে মারাত্মক যানজটের সৃষ্টি হয়। তখন শুধু বাজারঘাটা এলাকা পার হতেই লেগে যায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা। আর, যানজটের সময় ড্রেনের পচা দুর্গন্ধযুক্ত পানি উপরে চলে আসায় পায়ে হেঁটে রাস্তা পার হতেও অস্বস্তি লাগে।

সোমবার (১৭ জুন) সরেজমিনে দেখা যায়, বাজারঘাটার মিষ্টাঙ্গনের সামনে থেকে আবু সেন্টার পর্যন্ত সড়কের ওপর পানি জমে আছে, আর সড়কের দু’পাশে ময়লা-আবর্জনার স্তূপ। ব্যবসায়ীরা নিজেদের প্রতিষ্ঠানের সামনে চার থেকে ছয় ফুট উচ্চতায় দেয়াল নির্মাণ করে নিয়েছেন, যাতে বৃষ্টি হলে পানি ভেতরে ঢুকতে না পারে।

বাজারঘাটা এলাকার এক ব্যবসায়ী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাংলানিউজকে বলেন, কক্সবাজারের প্রধান বাণিজ্যিক কেন্দ্র বাজারঘাটা। কিন্তু, সড়কের এ চিত্র দেখলেই বোঝা যায়, আমরা কী দুর্ভোগের মধ্যে আছি। বৃষ্টি হলেই বেচাকেনা বন্ধ হয়ে যায়।

তিনি বলেন, সব সমস্যার সমাধান আছে। এটিও চিরস্থায়ী সমস্যা নয়। মূলত দায়িত্বশীলদের মধ্যে আন্তরিকতার অভাবেই এর সমাধান হচ্ছে না।

‘অনেক জায়গায় ড্রেনের মুখ খোলা পড়ে আছে। যে কারণে, জলাবদ্ধতার সময় ড্রেন আর রাস্তা বোঝা যায় না। এতে, প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটছে। বাজারঘাটার মিষ্টাঙ্গন থেকে আবু সেন্টার পর্যন্ত সড়কে পড়ে প্রতিদিন ১০ থেকে ২০ জন আহত হচ্ছেন। ’

ওই বাসিন্দারা বলেন, জলাবদ্ধতার জন্য বাজারঘাটচার ব্যবসায়ীরাও সমান দায়ী। তারা দোকানের সব ময়লা-আবর্জনা রাস্তার ওপর জমা রাখেন। বৃষ্টি হলেই এসব ময়লা ড্রেনে গিয়ে বাধে। অনেক সময় ময়লার কারণে ড্রেনের উপরিভাগে পানি ঢোকার পথও বন্ধ হয়ে যায়। এর কারণেও জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে। এ সমস্যা নিরসনে সবাইকেই সচেতন হতে হবে।

এ বিষয়ে কক্সবাজার পৌরসভার মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, বারবার খনন করার পরও ড্রেনগুলো পরিষ্কার রাখা যাচ্ছে না, নানা কারণে ভরাট হয়ে হচ্ছে। এর জন্যই বাজারঘাটায় জলাবদ্ধতা সমস্যার স্থায়ী সমাধান পাওয়া যাচ্ছে না। তবে, এ সমস্যা স্থায়ীভাবে দূর করতে পরিকল্পনা চলছে।  

তিনি বলেন, শুধু পৌরসভাকে দায়ী করলে হবে না। এর জন্য জনসাধারণেকেও এগিয়ে আসতে হবে।

বাংলাদেশ সময়: ০৯৩১ ঘণ্টা, জুন ১৯, ২০১৯,
এসবি/একে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

জাতীয় এর সর্বশেষ