ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

জান্নাতি হত্যা: অভিযুক্ত ৪জনকে নাটোর থেকে গ্রেফতার 

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮৩০ ঘণ্টা, জুন ১৯, ২০১৯
জান্নাতি হত্যা: অভিযুক্ত ৪জনকে নাটোর থেকে গ্রেফতার  জান্নাতি আক্তার

নরসিংদী: নরসিংদীর হাজিপুরে ১০ম শ্রেণির ছাত্রী জান্নাতি আক্তারকে (১৬) পুড়িয়ে হত্যার ঘটনায় চারজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

মঙ্গলবার (১৮ জুন) রাতে নাটোরের পুকুরপার এলাকা থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতার চারজন হলেন-নিহত জান্নাতির শাশুড়ি শান্তি বেগম ওরফে ফেন্সী রানি (৪৫), ফেন্সী রানির ছেলে শিপলু ওরফে শিবু (২৩), মেয়ে ফাল্গুনী বেগম (২০) ও শ্বশুর হুমায়ন মিয়া (৫০)।

সবাই চর হাজিপুরের খাসেরচর গ্রামের বাসিন্দা। মাদক ব্যবসায় জড়িত না হওয়ায় জান্নাতির শরীরে পেট্রোল ঢেলে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে হত্যা করা হয় বলে তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে।

নরসিংদী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সৈয়দুজ্জামান বাংলানিউজ বলেন, থানায় মামলা হওয়ার পর থেকেই পুলিশ সুপার স্যারের নিদের্শনা মোতাবেক অত্যন্ত গুরুত্বসহকারে মামলার তদন্ত ও গ্রেফতার অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। তাদের গ্রেফতার করতে দেশের বিভিন্ন স্থানে পুলিশি অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে।

অপরাধীরা খুবই চতুর। এক স্থানে বেশিক্ষণ অবস্থান করেননি। তাই তাদের গ্রেফতার করতে পুলিশের বেশ বেগ পেতে হয়েছে। তারপরও আমরা সফল হয়েছি। বুধবার সকালে পুলিশ সুপার মিরাজ উদ্দিন স্যার সংবাদ সম্মেলন করে বিস্তারিত জানাবেন।

প্রায় ১ বছর আগে নরসিংদী সদর উপজেলার হাজিপুর গ্রামের শরীফুল ইসলাম খানের মেয়ে জান্নাতির সঙ্গে পার্শ্ববর্তী খাসেরচর গ্রামের হুমায়ুন মিয়ার ছেলে শিপলু মিয়ার প্রেম হয়। কিছুদিন পরই পরিবারের অমতে তারা পালিয়ে বিয়ে করেন। বিয়ের কিছুদিন যেতে না যেতেই স্বামীর আসল রুপ বেরিয়ে আসে। স্ত্রী জান্নাতিকে পারিবারিক মাদক ব্যবসায় সম্পৃক্ত করতে মাদক ব্যবসায়ী শাশুড়ি শান্তি বেগম ও স্বামী শিপলু তাকে চাপ প্রয়োগ করতে থাকেন। এতে রাজি হয়নি জান্নাতি। ফলে জান্নাতির উপর নেমে আসে কঠোর নির্যাতন। যৌতুকের টাকা না দেওয়াসহ মাদক ব্যবসায় জড়িত না হওয়া চলতি বছরের ২১ এপ্রিল রাতে ঘুমন্ত অবস্থায় ও শাশুড়ি শান্তি বেগম ও তার মেয়ে ফাল্গুনী বেগম ও স্বামী শিপলু জান্নাতির শরীরে পেট্রোল ঢেলে আগুন লাগিয়ে দেয়। দগ্ধ হয়ে ছটফট করলেও তাকে হাসপাতালে নিয়ে যায়নি। পরে এলাকাবাসীর চাপে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অবস্থার অবনতি হলে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করানো হয়। ঘটনার পর ২৫ এপ্রিল নিহতের দাদা মুক্তিযোদ্ধা সিরাজুল ইসলাম খান আদালতে মামলা দায়ের করেন। আদালত পুলিশ ব্যুরো-অব-ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) ৭ দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন। এরই মধ্যে দীর্ঘ ৪০দিন মৃত্যু যন্ত্রণার পর গত ৩০ মে  ঢামেকের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় জান্নাতির।

সর্বশেষ গত শনিবার রাতে জান্নাতিকে যৌতুকের জন্য নির্যাতন ও মাদক ব্যবসায় সম্পৃক্ত না হওয়ায় পুড়িয়ে হত্যার অভিযোগে শাশুড়ি শান্তি বেগম ,স্বামী শিপলু ওরফে শিবু ,ফাল্গুনী বেগম ও শ্বশুর হুমায়ন মিয়াকে আসামি করে সদর মডেল থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন নিহতের বাবা শরীফুল ইসলাম খান।  এরপরই পুলিশ বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে শনিবার রাতে মাদক ব্যবসায়ী শান্তি বেগমের বোন সাথী আক্তার, দেবর নওশের মিয়া, খালা পারুল বেগম,খালাতো ভাই টিউলিপ, মামা রতন মিয়া ও  খালাত ভাই জাহাঙ্গীরকে আটক করে।

এদিকে হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় অভিযুক্ত জান্নাতির শ্বশুর-শাশুড়ি, স্বামী ও ননদের সংশ্লিষ্টতা প্রমাণ পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছে পিবিআই। দীর্ঘ ৫১ দিন তদন্ত শেষে রোববার দুপুরে আদালতে প্রাথমিক প্রতিবেদন দাখিল করে পিবিআই। এরই প্রেক্ষিতে মঙ্গলবার রাতে নাটোর থেকে আসামিদের গ্রেফতার করে পুলিশ।

বাংলাদেশ সময়: ০৪২৮ ঘণ্টা, জুন ১৯, ২০১৯
এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।