ঢাকা, বুধবার, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

বেড়াতে আসাদের টার্গেট করে ছিনতাই

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০১০ ঘণ্টা, জুন ১৮, ২০১৯
বেড়াতে আসাদের টার্গেট করে ছিনতাই র‌্যাব কার্যালয়ে আটক ছিনতাই চক্রের সদস্যরা

ঢাকা: রাজধানীর উত্তরখান থানাধীন বাটুলিয়া এলাকার নদীর পাড়ে ঘুরতে আসা ব্যক্তিদের টার্গেট করে ছিনতাই কর্মকাণ্ড চালিয়ে আসছিল একটি চক্র। শুধু তাই নয়, চুক্তিতে টাকার বিনিময়ে জমি দখল-খুনের মতো অপরাধ করতো অনায়াসেই।

শাহীন মিয়া ওরফে ব্লাক শাহীনের (২৪) নেতৃত্বে ৫-৬ জন মিলে উত্তরা এলাকায় চক্রটি সক্রিয় ছিল। সবশেষ গত ১৫ জুন উত্তরখানে ছিনতাই করতে গিয়ে বাধার সম্মুখীন হওয়ায় দুই যুবককে ছুরিকাঘাত করে ব্লাক শাহিনসহ ৬-৭ জন।

এতে সাকিব নামে এক যুবক নিহত ও অপর বন্ধু শিপন আহত হন।

সোমবার (১৭ জুন) দিনগত রাতে রাজধানীর উত্তরা এলাকায় অভিযান চালিয়ে হত্যাকাণ্ডের মূল হোতা শাহীন মিয়া ওরফে ব্লাক শাহীনসহ (২৪), মঞ্জুরুল ইসলাম ওরফে মিজু (২৪) ও ফরহাদ হোসেনকে (২৬) আটক করে র‌্যাব-১।

মঙ্গলবার (১৮ জুন) কারওয়ানবাজারে র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান র‌্যাব-১ এর অধিনায়ক (সিও) লে. কর্নেল সারওয়ার বিন কাশেম।

তিনি বলেন, গত ১৫ জুন বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে রাজধানীর উত্তরখান থানাধীন নদীর পাড় বাটুলিয়া এলাকায় বেড়াতে যায় সাকিব হোসেন (২০) ও শিপন (১৯)। এসময় ছিনতাইকারীরা তাদের কাছ থেকে মোবাইল-টাকা ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। এতে বাধা দিলে ছিনতাইকারীরা সাকিব হোসেনের বুকে ও পিঠে এবং শিপনের পিঠে ছুরিকাঘাত করে গুরুতর জখম করে।

এরপর তাদের উদ্ধার করে ঢামেক হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত ডাক্তার সাকিব হোসেনকে মৃত ঘোষণা করে। তবে শিপন এখনো হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।  

আটকদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে তিনি বলেন, উত্তরখানে ঘুরতে আসা লোকদের অস্ত্রের ভয়-ভীতি দেখিয়ে টাকা-পয়সা, মোবাইল, স্বর্ণালংকার ছিনতাই করা চক্রটির পেশায় পরিণত হয়েছিল। তারা ভাড়ায় খুন, জমি দখলের মতো ঘটনায় জড়িত বলেও তথ্য পাওয়া গেছে।

নিহত সাকিব হোসেন দুই ভাই-বোনের মধ্যে বড়। ছোটবেলায় তার মা মারা যাওয়ার পর তার বাবা সন্তানদের ভবিষ্যতের কথা ভেবে আর বিয়ে করেননি। সাকিব এসএসসি পাস করার পর অর্থাভাবে পড়ালেখা বন্ধ করে দেন। তিনি উত্তরার ৭ নম্বর সেক্টরে অবস্থিত ‘ফড়িং’ নামে পোশাকের শো-রুমে কাজ করতেন। নিহত সাকিব হোসেন ছিলেন পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি।

আহত ভিকটিম শিপন মিয়া (১৯) পাঁচ ভাই-বোনের মধ্যে দ্বিতীয়। তার বড় এক ভাই ও ছোট তিন বোন আছে। তার বাবা সুলতান মিয়া পেশায় একজন রাজমিস্ত্রি। এত বড় পরিবারের খরচ বাবার একার পক্ষে বহন করা সম্ভব নয় বিধায় তিনি উত্তরা ৩ নম্বর সেক্টরের ‘সাইনটেক্স’ নামে একটি পোশাকের শো-রুমে চাকরি করছিলেন।

আটক শাহীন মিয়া ২০১৫ সালে টঙ্গী সিরাজ উদ্দিন সরকার বিদ্যানিকেতন থেকে এসএসসি পাস করার পর পড়ালেখা বন্ধ করে দিয়ে বিভিন্ন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েন। মাদক সেবনের পাশাপাশি মাদক বিক্রিতেও জড়িত। তার বিরুদ্ধে উত্তরখান ও দক্ষিণখান থানায় একাধিক ছিনতাই, মারামারি ও মাদক মামলা রয়েছে।

হত্যাকাণ্ডের দিন ব্লাক শাহিন, মিজু, ফরহাদ, জিয়া, তানভীর, রুবেল, মিঠু, সবুজসহ ৭/৮ জন ঘটনাস্থলে ইয়াবা ও গাঁজা সেবন করছিল।

আটক মঞ্জুরুল ইসলাম ওরফে মিজুও সিরাজ উদ্দিন সরকার বিদ্যা নিকেতন থেকে নবম শ্রেণী পর্যন্ত পড়ালেখা করেছেন। পেশায় বাইপাইল-সায়েদাবাদ রুটে দোয়েল পরিবহনের হেল্পার। এর আগে তিনি আশুলিয়া বেড়িবাঁধ এলাকায় ফ্লেক্সিলোডের ব্যবসা করতেন। তিনি এই চক্রের সঙ্গে দীর্ঘদিন জড়িত। ফরহাদ হোসেন পেশায় একজন টিউবওয়েল মিস্তি। তিনি প্রায় পাঁচ বছরের বেশি সময় ধরে মাদকাসক্ত। এছাড়া দীর্ঘদিন ইয়াবা ব্যবসার সঙ্গে জড়িত।

বাংলাদেশ সময়: ১৬০৪ ঘণ্টা, জুন ১৮, ২০১৯
পিএম/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।