ঢাকা, শনিবার, ৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

‘পণ্যের মান পরীক্ষায় লেনদেনের তথ্য পেলে সোজা জেলখানায়’

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৩১২ ঘণ্টা, জুন ১৭, ২০১৯
‘পণ্যের মান পরীক্ষায় লেনদেনের তথ্য পেলে সোজা জেলখানায়’ হাইকোর্ট/সংগৃহীত ছবি

ঢাকা: পণ্যের মান পরীক্ষায় লেনদেন এর তথ্য পেলে দুদকে না পাঠিয়ে সোজা জেলখানায় পাঠিয়ে দেওয়া হবে বলে মন্তব্য করেছেন হাইকোর্ট।

বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশনের (বিএসটিআই) পরীক্ষায় অকৃতকার্য হওয়া নামিদামি কোম্পানি ও প্রতিষ্ঠানের নিম্নমানের (সাব-স্ট্যান্ডার্ড) পণ্য বাজার থেকে সরাতে করা এক রিটের শুনানিতে রোববার (১৬ জুন) এমন মন্তব্য করেন বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের হাইকোর্ট বেঞ্চ।

আদালতে রিট আবেদনের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন ব্যারিস্টার শিহাব উদ্দিন খান।

রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোখলেছুর রহমান।

নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যানের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী কামাল-উল আলম ও এ এম আমিন উদ্দিন। সঙ্গে ছিলেন ব্যারিস্টার মুহাম্মদ ফরিদুল ইসলাম। ভোক্তা অধিকারের পক্ষে ছিলেন কামরুজ্জামান কচি।

আদালতের প্রশ্নের জবাবে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তা বলেন, একটি হটলাইন নাম্বার চালুর জন্য টেন্ডার প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। এখন ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের একটি নম্বর (০১৭৭৭৭৫৩৬৬৮) রয়েছে। এটি অফিসিয়াল টাইমে খোলা থাকে। এছাড়া এটুআই প্রকল্পের প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের ৩৩৩ এবং জাতীয় হটলাইন ৯৯৯ এর মাধ্যমেও ভোক্তারা যেকোনো বিষয়ে অভিযোগ করতে পারেন।

এরপর নিম্নমানের ও ভেজাল পণ্যের বিরুদ্ধে উপজেলা, ইউনিয়ন পর্যায়সহ সব জায়গায় সারাবছর (ছুটির দিনসহ) অভিযান পরিচালনা করতে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরকে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। পাশাপাশি ভোক্তারা যাতে অভিযোগ জানাতে পারে সেজন্য দু'মাসের মধ্যে একটি হটলাইন চালু করতে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরকে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। এই হটলাইন চালু না হওয়া পর্যন্ত মোবাইল ফোন নম্বর (০১৭৭৭৭৫৩৬৬৮) ছুটির দিনসহ ২৪ ঘন্টা খোলা রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।    

এছাড়া দ্বিতীয় দফায় দেওয়া বিএসটিআইয়ের প্রতিবেদনের ভিত্তিতে পাওয়া নিম্নমানের ২২টি পণ্য বাজার থেকেও প্রত্যাহার করতে বলা হয়েছে। এ বিষয়ে আদালত বলেছেন, আমরা নতুন করে আদেশ দিচ্ছি না। আগের আদেশ অনুযায়ী এসব পণ্য প্রত্যাহার করতে হবে। এছাড়া যেসব পণ্য মান পরীক্ষায় উত্তীর্ন হয়েছে সেসব পণ্যসহ সকল পণ্যের মান নিয়মিতভাবে পরীক্ষা করতে বিএসটিআইকে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। আদালত আগামী ১৯ আগস্ট পরবর্তী আদেশের জন্য দিন ধার্য করেছেন। ওইদিন ওই তিন সংস্থাকে প্রতিবেদন দিতে বলেছেন।

এদিকে হাইকোর্টের তলবে হাজির হয়ে আদালতের কাছে নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মাহফুজুল হক।

বিএসটিআই'র পরীক্ষায় অকৃতকার্য হওয়া নামি-দামি কোম্পানি ও প্রতিষ্ঠানের নিম্নমানের (সাব-স্ট্যান্ডার্ড) ৫২ পণ্য বাজার থেকে অবিলম্বে না সরানোয় গত ২৩ মে তাকে তলব করেছিলেন হাইকোর্ট।

পরে ফরিদুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, ২৩ মে’র আদেশ অনুসারে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মাহফুজুল হক হাজির ছিলেন। উপস্থিত হয়ে তিনি নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন। আমরা গতবার (২৩ মে) যে হলফনামা দিয়েছি সেখানে ভুলবশত প্রপারলি আমাদের কার্যক্রমের রিফ্লেকশনটা হয়নি। আজকে তার একটা সাপ্লিমেন্টারি দিয়ে বলেছি সারা বাংলাদেশে আদালতের নির্দেশমতো যে ড্রাইভ দিয়েছি তার একটা রিপোর্ট সাবমিট করেছি। আদালত আমাদের রিপোর্টে এবং আবেদনে সন্তুষ্ট হয়ে তাকে (মাহফুজুল হক) ব্যক্তিগত হাজিরা থেকে অব্যাহতি দিয়েছেন। ওনার বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার যে রুল হয়েছিলো সেটা থেকেও অব্যাহতি দিয়েছেন।

শিহাব উদ্দিন খান বলেন, চেয়ারম্যানকে বেশ কিছু কন্ডিশন দিয়ে ব্যক্তিগত হাজিরা থেকে অব্যাহতি দিয়েছেন। উনি ভবিষ্যতে আদালতের কোনো স্পেসিফিক অর্ডার ভায়োলেশন করবেন না, এখন থেকে নিয়মিত ভেজালবিরোধী অভিযান পরিচালনা করবেন। ওনার লোকবল সংকট থাকলে অন্যান্য এজেন্সির সহায়তা নিয়ে অভিযান পরিচালনা করবেন। এ কন্ডিশন দিয়ে ফর দ্য টাইম বিং ওনাকে আদালত অবমাননার দায় থেকে অব্যাহতি দিয়েছেন।

শিহাব উদ্দিন খান আরও বলেন, রি-স্টেটিংয়ের বিষয়ে আদালত একটি বিষয় উল্লেখ করেছেন। অভিযোগ রয়েছে, আমিও এটি আদালতে উল্লেখ করেছি ..... মান নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মান দেয়ার ক্ষেত্রে তাদের সাথে নেগোসিয়েশনের বিভিন্ন অভিযোগ আছে। আদালত বলেছেন-এ জাতীয় বিষয় যদি প্রমাণিত হয়, বা আদালতের গোচরীভূত হয় সোজা জেলে পাঠিয়ে দিবেন।  

২৩ মে মোহাম্মদ মাহফুজুল হকের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার রুলও জারি করেছিলেন হাইকোর্ট।

সম্প্রতি ৪০৬টি খাদ্যপণ্যের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করে বিএসটিআই। এর মধ্যে ৩১৩টি পণ্যের পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করা হয়। ৩১৩টির মধ্যে ৫২ পণ্য মানহীন বলে প্রতিবেদন দেয় মান নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থাটি। বাকি ৯৩ পণ্যের পরীক্ষার ফলাফল প্রতিবেদন ১৬ তারিখের মধ্যে দিতে বিএসটিআইকে নির্দেশ দেন আদালত। সে অনুসারে বিএসটিআই ৯৩ পণ্যের মান পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করে। এর মধ্যে ২২টি পণ্য নিম্নমানের বলে জানায় তারা।

এর আগে, গত ১২ মে এক রিট আবেদনের শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট বাজার থেকে আইনানুসারে এসব পণ্য সরিয়ে নিতে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ ও জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরকে নির্দেশ দেন। একইসঙ্গে ওই আদেশ বাস্তবায়ন করে ২৩ মে আদালতে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়।

২৩ মে আদেশ বাস্তবায়নের প্রতিবেদন দেয় নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ ও ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। প্রতিবেদনে ৫২ পণ্যের একটির প্যাকেটও জব্দ করার বিষয়টি না থাকায় নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার রুল জারি করে তাকে তলব করা হয়।

তবে সারাদেশে ৫২ পণ্য জব্দের প্রতিবেদন দেওয়ায় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরকে সাধুবাদ জানান আদালত।

গত ৮ মে ভোক্তা অধিকার সংস্থা ‘কনসাস কনজুমার্স সোসাইটি’র (সিসিএস) নির্বাহী পরিচালক পলাশ মাহমুদের পক্ষে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার শিহাব উদ্দিন খান এ রিট করেন।

বিএসটিআই'র পরীক্ষায় ওইসব কোম্পানির ভেজাল ও নিম্নমানের পণ্য ধরা পড়ে।

বাংলাদেশ সময়: ২৩১১ ঘণ্টা, জুন ১৬, ২০১৯
ইএস/এমএইচএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।