শনিবার (১৫ জুন) রাতে নিহত জান্নাতির বাবা বাদী হয়ে শাশুড়ি শান্তি বেগমকে প্রধান আসামি করে ৪ জনের নামে সদর মডেল থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। এঘটনায় পুলিশ বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে এ পর্যন্ত ৬ জনকে গ্রেফতার করেছে।
মামলার আসামিরা হলেন- নিহত জান্নাতির শাশুড়ি শান্তি বেগম (৪৫), স্বামী শিপলু ওরফে শিবু (২৩), ফাল্গুনী বেগম (২০) ও শ্বশুর হুমায়ুন মিয়া (৫০)। সবাই চর হাজিপুরের খাসেরচর গ্রামের বাসিন্দা।
আটককরা হলেন- মাদক ব্যবসায়ী শান্তি বেগমের বোন সাথী আক্তার, দেবর নওশের মিয়া, খালা পারুল বেগম, খালাতো ভাই টিউলিপ, মামা রতন মিয়া ও খালাত ভাই জাহাঙ্গীর।
পুলিশ জানায়, প্রায় ১ বছর আগে নরসিংদী সদর উপজেলার হাজিপুর গ্রামের শরীফুল ইসলাম খানের দশম শ্রেণীতে পড়ুয়া মেয়ে জান্নাতি আক্তারের সঙ্গে পার্শ্ববর্তী খাসেরচর গ্রামের হুমায়ুন মিয়ার ছেলে শিপলু মিয়ার প্রেম হয়। কিছুদিন পরই পরিবারের অমতে তারা পালিয়ে বিয়ে করেন। বিয়ের কিছুদিন যেতে না যেতেই জান্নাতিকে পারিবারিক মাদক ব্যবসায় সম্পৃক্ত করতে শাশুড়ি শান্তি বেগম ও স্বামী শিপলু চাপ প্রয়োগ করতে থাকে। এতে রাজি হয়নি জান্নাতি। ফলে জান্নাতির ওপর নেমে আসে কঠোর নির্যাতন। মাদক ব্যবসায় জড়িত না হওয়া চলতি বছরের ২১ এপ্রিল রাতে ঘুমন্ত অবস্থায় শাশুড়ি শান্তি বেগম, তার মেয়ে ফাল্গুনী বেগম ও স্বামী শিপলু জান্নাতির শরীরে পেট্রোল ঢেলে আগুন লাগিয়ে দেয়। দগ্ধ হয়ে ছটফট করলেও তাকে হাসপাতালে নিয়ে যায়নি। পরে এলাকাবাসীর চাপে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অবস্থার অবনতি হলে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করানো হয়। ঘটনার পর ২৫ এপ্রিল নিহতের দাদা মুক্তিযোদ্ধা সিরাজুল ইসলাম খান বাদী হয়ে আদালতে মামলা দায়ের করেন। আদালত পুলিশ ব্যুরো-অব-ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) ৭ দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন। কিন্তু পৌনে দুই মাসেও আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেনি পিবিআই। এরই মধ্যে ৪০ দিন পর ৩০ মে ঢামেকের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় জান্নাতির মৃত্যু হয়। ঘটনার পৌনে দুই মাস পার হলেও আসামিরা গ্রেফতার হয়নি।
সর্বশেষ শনিবার রাতে জান্নাতিকে যৌতুকের জন্য নির্যাতন ও মাদক ব্যবসায় সম্পৃক্ত না হওয়ায় পুড়িয়ে হত্যার অভিযোগে শ্বশুর-শাশুড়িসহ আরও কয়েকজনকে আসামি করে সদর মডেল থানায় হত্যা মামলা দায়ের করা হয়।
নরসিংদী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সৈয়দুজ্জামান বলেন, থানায় মামলা দায়েরর পর পরই আসামি গ্রেফতারে পুলিশের চিরুনি অভিযান শুরু করে। বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে ৬ জনকে আটক করা হয়। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তদন্তের স্বার্থে এখনই সব বলা যাচ্ছে না। তবে অচিরেই আসামিদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনা হবে।
বাংলাদেশ সময়: ২০০০ ঘণ্টা, জুন ১৬, ২০১৯
এসএইচ