ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

‘আমময়’ হয়ে উঠেছে আমের রাজধানী

শরীফ সুমন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০১১ ঘণ্টা, জুন ১৬, ২০১৯
‘আমময়’ হয়ে উঠেছে আমের রাজধানী আম বিক্রিতে ব্যস্ত চাষিরা। ছবি: বাংলানিউজ

রাজশাহী: রাজশাহীর আম, নামেই যার খ্যাতি। আর রাজশাহীকে বলা হয় আমের রাজধানী। তবে কেবল নামেই কি আমের রাজধানী? মোটেও নয়। দর্শন, গুণ ও ফলেই পরিচয়। তাইতো বছর ঘুরে চির চেনা রূপ নিয়ে ফিরেছে রাজশাহী। সর্বত্রই এখন আম আর আম। মৌসুমের শেষ মুহূর্তে ‘আমময়’ হয়ে উঠেছে পদ্মাপাড়ের এ ছোট্ট পরিপাটি শহরটি। 

হাটে-মাঠে, পথে-প্রান্তরে, বাগানে-বাগানে, পাড়ার অলিগলিতে এখন শুধুই আমের হাঁক-ডাক। রাজশাহীর বিভিন্ন সড়ক ও মোহনাগুলো এখন কাঁচা-পাকা আমে ছেয়ে গেছে।

বড় বড় ঝুড়ি ও প্লাস্টিকের খাঁচা বোঝাই করে আম আসছে রাজশাহী ও এর আশপাশের এলাকার নতুন-পুরোনো বাগান থেকে।

তাই রাজশাহীর বাতাসে এখন আমের ম-ম সৌরভ ভেসে বেড়াচ্ছে। তবে ঝড়, তাপদাহ ও শিলাবৃষ্টিতে এ বছর কমেছে আমের ফলন, বেড়েছে দাম।  

রাজশাহীর স্বাদের আমে এখনও লোভের থাবা বসাতে পারেনি মৌসুমি ব্যবসায়ীরা। তাই অপরিপক্ক আমে কেমিক্যালের মিশ্রণ নয়, বেঁধে দেওয়া সময়েরও পরেই পরিপক্ক আম ভাঙা হচ্ছে গাছ থেকে। জ্যৈষ্ঠ মাসের শেষে হাট-বাজার থেকে বিদায় নিয়েছে গোপালভোগ ও মোহনভোগ। তার স্থলাভিষিক্ত হয়েছে ক্ষিরসাপাত, ল্যাংড়া, আম্রপালিসহ নানান জাতের বাহারি নামের স্বাদের আম।  

বিরামহীন বেচাকেনা চলছে প্রাচীন এই জনপদে। রাজশাহীজুড়ে এখন কেবল আমেরই রাজত্ব। বাগানে বাগানে চলছে গাছ থেকে আম ভাঙার কাজ। এতে শেষ মুহূর্তে চাঙ্গা হয়ে উঠেছে ব্যবসা।  

কেবল হাট-বাজার নয়, আম কেন্দ্রীক ব্যবসা-বাণিজ্য পাল্টে দিয়েছে এ অঞ্চলের গ্রামীণ জনপদের অর্থনীতিও। রাজশাহী অঞ্চলের দুইটি বড় আমের মোকাম রাজশাহীর বানেশ্বর ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের কানসাটে প্রতিদিন বেচাকেনা হচ্ছে দুই কোটি টাকার আম। আমের কারবার নিয়ে রাজশাহী অঞ্চলের প্রায় ৫০ হাজার মানুষের মৌসুমি কর্মসংস্থানও হয়েছে। মধুমাস জ্যৈষ্ঠের পরও পুরো জুন মাস জুড়েই চলবে ‘আম বাণিজ্য’। তাই আম বাগানের শ্রমিক ও আমের ঝুড়ি বানানোসহ নানা সহায়ক কাজে নিয়োজিত লোকজনের কর্মসংস্থানে উত্তরের এ জনপদ কর্মব্যস্ত হয়ে উঠেছে। আমের হাট।  ছবি: বাংলানিউজ এবছরও রোজার মধ্যে শুরু হয় আমের মৌসুম। তবে তখন ব্যাপকভাবে আম না ভাঙায় ঈদের পর জমে ওঠে রাজশাহীর আম বাজার। এখন বাজারে রয়েছে ক্ষিরসাপাত (হিমসাগর) ও ল্যাংড়া জাতের আম। সঙ্গে রয়েছে লক্ষণভোগসহ নতুন নতুন জাতের গুটি আম। দাম চড়া হলেও আমের বেচাকেনা বেড়েছে।

রাজশাহীর সবচেয়ে বড় আমের মোকাম পুঠিয়া উপজেলার বানেশ্বরে সরেজমিনে দেখা যায়, গোপালভোগ আম নেই। ক্ষিরসাপাত বা হিমসাগর আম আছে। আর চলতি সপ্তাহে বেশি উঠেছে ল্যাংড়া জাতের আম। রয়েছে লক্ষণভোগও। চাষিরা গাছ থেকে আম নামিয়ে ঝুড়ি বা প্লাস্টিকের খাঁচায় করে এ আম হাটে আনছেন। দর-দামের পর ঝুড়িসহ তা কিনে নিয়ে যাচ্ছেন রাজধানী ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা, সিলেটসহ দূর-দুরান্ত থেকে আসা পাইকারি ব্যবসায়ীরা। দিন-রাত সমানতালে চলছে আমের কারবার। এবার ফলন কম হলেও দাম বেশি পাওয়ায় আম চাষি ও ব্যবসায়ীরা খুশি।  

বানেশ্বর বাজারের আম ব্যবসায়ী হোসেন আলী জানান, রোববার বাজারে প্রতি মণ ক্ষিরসাপাত (হিমসাগর) আম ২ হাজার ৮০০ টাকা থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ৩ হাজার ২০০ টাকা এবং ল্যাংড়া আম ২ হাজার ৪০০ থেকে সর্বোচ্চ ২ হাজার ৬০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া প্রতি মণ লক্ষণভোগ আম বিক্রি হচ্ছে ৯০০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা দরে। আর আম্রপালি ১ হাজার ৮০০ থেকে ২ হাজার টাকা মণ দরে বিক্রি হচ্ছে। আম বিক্রিতে ব্যস্ত চাষিরা।  ছবি: বাংলানিউজদাম বেশি কেন প্রশ্নে হোসেন আলী বলেন, এবার মৌসুমের শুরুতেই ঘন কুয়াশা ও পরে ঝড়, শিলাবৃষ্টি এবং টানা তাপদাহের কারণে এবার আমের ফলন কমেছে। তাই সরবরাহ কম, দাম একটু বেশি। গত বছর এসব আমের দাম প্রতি মণে ২০০ থেকে ৪০০ টাকা কম ছিল। তবে ভালো জাতের আমের দাম বেশি হলেও বিভিন্ন জাতের গুটি ও নতুন জাতের আমের দাম কম। এসব আম ৯০০ থেকে ১ হাজার টাকা মণ দরে বিক্রি হচ্ছে।

রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক মো. শামসুল হক বাংলানিউজকে জানান, চলতি মৌসুমে রাজশাহীতে প্রায় ২ লাখ ১৮ হাজার মেট্রিক টন আমের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। ফলন কমের কারণে শেষ পর্যন্ত লক্ষ্যমাত্রা অর্জন না হলেও কোনো সমস্যা হবে না। যে ফলন হবে তা দিয়ে রাজশাহীসহ সারাদেশে আমের চাহিদা পূরণ সম্ভব বলেও করেন কৃষি বিভাগের এ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা।

রাজশাহী জেলা প্রশাসক (ডিসি) এস এম আব্দুল কাদের বাংলানিউজকে বলেন, জেলা প্রশাসনের বেধে দেওয়া সময় অনুযায়ী আম চাষি ও ব্যবসায়ীরা আম ভাঙতে এখন পর্যন্ত কোনো সমস্যার মুখে পড়েননি। অনেকে নির্ধারিত সময়ের পরে আম ভাঙছেন। তাই রাজশাহীর আম ভেজাল ও কেমিক্যাল মুক্ত, পরিপক্ক এবং নিরাপদ বলেও মন্তব্য করেন ডিসি কাদের।

রাজশাহীতে সাধারণত সবার আগে পাকে গুটি জাতের আম। এবার জেলা প্রশাসনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী গত ১৫ মে থেকে গুটি আম নামান চাষিরা। আর উন্নতজাতের আমগুলোর মধ্যে গোপালভোগ নামছে গত ২০ মে, ক্ষিরসাপাত বা হিমসাগর ২৮ মে এবং লক্ষণভোগ বা লখনা ২৬ মে নামানো হয়েছে। এছাড়া ল্যাংড়া ও আম্রপালি আম গত ৬ জুন থেকে নামাতে শুরু হয়েছে। রোববার থেকে ফজলিও নামানো যাবে। সবার শেষে আগামী ১৭ জুলাই থেকে নামানো যাবে আশ্বিনা জাতের আম।

বাংলাদেশ সময়: ১৬০৮ ঘণ্টা, জুন ১৬, ২০১৯
এসএস/আরআইএস/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।