ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

গুরুদাসপুরে মামলার সাক্ষীকে হাত-পা কেটে হত্যা

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৪৮ ঘণ্টা, জুন ১৩, ২০১৯
গুরুদাসপুরে মামলার সাক্ষীকে হাত-পা কেটে হত্যা

নাটোর: নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলায় একটি হত্যা মামলায় সাক্ষী দিতে আদালতে যাওয়ার সময় জালাল উদ্দিন (৫০) নামে এক ব্যক্তিকে কুপিয়ে হত্যা করেছে প্রতিপক্ষের লোকজন।

বৃহস্পতিবার (১৩ জুন) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে উপজেলার বিয়াঘাট ইউনিয়নের সাবগাড়ী এলাকায় ওই ঘটনা ঘটে। এসময় প্রতিপক্ষের লোকজন ধারালো অস্ত্র নিয়ে তার ওপর হামলা চালিয়ে ডান হাত কেটে নেয় এবং বাম হাতসহ পা কেটে জখম করে।

এ অবস্থায় প্রথমে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। পরে অবস্থার অবনতি হলে তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় দুপুর একটার দিকে তার মৃত্যু হয়।

নিহত জালাল উদ্দিন উপজেলার যোগিন্দ্র নগর গ্রামের আমজাদ হোসেন ওরফে আনন্দ মণ্ডলের ছেলে।

তিনি ওই এলাকার মোমিন মণ্ডল হত্যা মামলার ১ নম্বর আসামি। গত ৮ বছর ধরে সপরিবারে তিনি ঢাকায় বসবাস করেন এবং একটি হত্যা মামলার হাজিরা দেওয়ার জন্য মঙ্গলবার (১২ জুন) বাড়িতে এসেছেন বলে জানা গেছে।
 
গুরুদাসপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোজাহারুল ইসলাম বাংলানিউজকে জানান,  ২০১৩ সালের ১৩ মে উপজেলার যোগিন্দ্র নগর গ্রামের স্বামী পরিত্যাক্তা এক নারীকে শারীরিক নির্যাতনের পর হত্যা করে নদীতে ফেলে দেয় সন্ত্রাসীরা। এ ঘটনায় নিহত সফুরার ভাই বাদী হয়ে সাইফুল ইসলাম, শরিফুল ইসলাম রফিকুল ইসলামসহ আরও কয়েকজনকে অভিযুক্ত করে আদালতে মামলা দায়ের করেন। মামলায় জালাল উদ্দিনকে প্রধান সাক্ষী করা হয়। সেই সফুরা হত্যা মামলায় বৃহস্পতিবার আদালতে সাক্ষীর হাজিরার নির্ধারিত দিন ছিল।  

সকাল ১০টার দিকে জালাল উদ্দিন আদালতে যাওয়ার জন্য বাড়ি থেকে বের হলে পথিমধ্যে সাবগাড়ী বাঁধ এলাকায় পৌঁছালে একই গ্রামের মোমিন মণ্ডলের ছেলে আশরাফুল ইসলাম, রফিক ইসলাম, আক্কাছ মণ্ডলের ছেলে শরিফুল ইসলাম, সাইদুর রহমান ও তাদের সহযোগিরা পথরোধ করে ধারালো অস্ত্র নিয়ে তার ওপর হামলা চালায়। এ সময় তারা জালাল উদ্দিনের ডান হাত কেটে নেয় এবং বাম হাতসহ পা কেটে জখম করে।

পরে স্থানীয়রা আহত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে প্রথমে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন। পরে অবস্থার অবনতি হলে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।

ওসি বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। নিহত ব্যক্তির মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হবে। এ ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি চলছে এবং হত্যাকারীদের গ্রেফতারে পুলিশি অভিযান চলছে। তবে কেটে নেওয়া হাত এখনও উদ্ধার করা যায়নি।  

এদিকে স্থানীয় বিয়াঘাট ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মোজাম্মেল হক বাংলানিউজকে জানান, যারা ওই ঘটনা ঘটিয়েছে তারা প্রকৃতই সন্ত্রাসী। তারা দেশের বিভিন্ন জায়গায় ডাকাতিসহ বিভিন্ন অপকর্মের সঙ্গে জড়িত।

স্থানীয় ইউপি সদস্য আব্দুল মালেকসহ অনেকে বাংলানিউজকে জানান, যোগেন্দ্রনগর গ্রাম এখন ক্রাইমজোনে পরিণত হয়েছে। শক্ত পদক্ষেপ না নিলে এলাকায় শান্তি ফিরে আসবেনা।  

তিনি বলেন, হাত পা কেটে নেয়া, হত্যা করা, ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দেওয়ার মতো নানা ঘটনায় এলাকার মানুষ এখন ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়েছেন। গত তিনমাস আগেও ওই গ্রামের শুকুর আলীর ছেলে মমিনের (৩৭) হাত কেটে নেওয়া হয়। তারআগে একই গ্রামের কোবাদ হাজির ছেলে মোজামের (৩৮), ওসমানের ছেলে খালেক (৩৬) ও করম আলীর ছেলে খালেকের (৫৭) হাত কেটে নেওয়া হয়। আর এসব ঘটনা পারিবারিক কলহের জের ধরেই ঘটেছে। মাত্র পাঁচ-ছয়টি পরিবারের মধ্যে এ ঘটনা ঘটে চলেছে।

এরআগে ২০০১ সালে রাজনৈতিক কলহে জালারের পরিবার ৫ বছর এলাকা ছাড়া ছিল। ওই সময় জালালের জমিজমা দখল করে নেয় প্রতিপক্ষের লোকজন। ওই সময়ে বৃদ্ধ মোমিন মণ্ডলকে হত্যা করা হয়। এর ৬ মাসের মধ্যে পাগল সফুরাকেও হত্যা করা হয়। সেই থেকে পরিবার দু’টিতে হত্যা মামলা চলে আসছে।  

বাংলাদেশ সময়: ১৫৪১ ঘণ্টা, জুন ১৩, ২০১৯
এসএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।