সোমবার (১০ জুন) মামলার তদন্ত সংস্থা পিবিআই আসামিদের আদালতে হাজির করে অভিযোগপত্র দাখিল করলে ফেনীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মামুনুর রশিদ তা গ্রহণ করেন।
মামলায় গ্রেপ্তার ২১ আসামির মধ্যে ৫ জনকে অব্যাহতি দিয়ে ১৬ জনকে অভিযুক্ত করা হয়।
বাদীপক্ষের আইনজীবী এম শাহজাহান সাজু সাংবাদিকদের বলেন, বাদীর আপত্তি না থাকায় আজকে আদালত চার্জশিট গ্রহণ করেছেন। মামলার তদন্ত প্রতিবেদনে অব্যাহতিপ্রাপ্তরা হলেন- নুসরাতের সহপাঠী আরিফুল ইসলাম, নূর হোসেন, কেফায়াত উল্লাহ জনি, মোহাম্মদ আলা উদ্দিন, শাহিদুল ইসলাম।
অভিযুক্তরা হলেন- সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদরাসার সাবেক অধ্যক্ষ এসএম সিরাজ উদ-দৌলা (৫৭), নুর উদ্দিন (২০), শাহাদাত হোসেন শামীম (২০), কাউন্সিলর ও সোনাগাজী পৌর আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মাকসুদ আলম ওরফে মোকসুদ কাউন্সিলর (৫০), সাইফুর রহমান মোহাম্মদ জোবায়ের (২১), জাবেদ হোসেন ওরফে সাখাওয়াত হোসেন (১৯), হাফেজ আব্দুল কাদের (২৫), আবছার উদ্দিন (৩৩), কামরুন নাহার মনি (১৯), উম্মে সুলতানা ওরফে পপি ওরফে তুহিন ওরফে চম্পা/শম্পা (১৯), আব্দুর রহিম শরীফ (২০), ইফতেখার উদ্দিন রানা (২২), ইমরান হোসেন ওরফে মামুন (২২), সোনাগাজী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও মাদরাসা পরিচালনা কমিটির সাবেক সহ-সভাপতি রুহুল আমিন (৫৫), মহিউদ্দিন শাকিল (২০) ও মোহাম্মদ শামীম (২০)।
আইনজীবী সাজু আরও জানান, আদালতে ৭ জন আসামি জামিন আবেদন করে। আদালত বাদী ও আসামি এবং রাষ্ট্রপক্ষের শুনানি শেষে তাদের জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেন। আগামী ২০ জুন এ মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের দিন ধার্য করেছেন আদালত। ২০ জুন অভিযোগ গঠন হলে সাক্ষ্য পর্ব ও মামলার বিচার প্রক্রিয়া শুরু হবে।
মামলার বাদী নুসরাতের বড় ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান বলেন, তদন্ত প্রতিবেদনে আমরা সন্তুষ্ট। আমাদের কোনো আপত্তি নেই। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মামলাটি তদারকি করছেন। আশা করি শিগগির ওসি মোয়াজ্জেম হোসেন গ্রেপ্তার হবেন।
আসামিপক্ষের আইনজীবী গিয়াস উদ্দিন নান্নু বলেন, বিচারক আংশিক ন্যায়বিচার করলেও ন্যায়বিচার করেননি। যারা ছাদে নুসরাতের গায়ে আগুন দিয়েছিলো সেই ছয়জন ছাড়া বাকি ১০ জনকে একই গ্রাউন্ডে জামিন দেওয়া উচিত ছিলো। মামলার তদন্ত প্রতিবেদনটি পক্ষপাতপুষ্ট ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। এই মামলায় যে অর্ডার হয়েছে তা আইনসম্মত নয়, বরং বেআইনি।
খুবই স্পর্শকাতর এ মামলার অভিযোগপত্র ও প্রায় ৮০৮ পৃষ্ঠার সামগ্রিক নথি গত ২৮ মে ফেনীর জ্যেষ্ঠ বিচার বিভাগীয় হাকিম জাকির হোসাইনের আদালতে দাখিল করেন পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) কর্মকর্তারা।
আদালত সূত্রের তথ্য মতে, সেদিন অভিযোগপত্রসহ কেস ডকেট (সার্বিক নথি) জমা দিলেও বিচারক অভিযোগপত্রটি পর্যবেক্ষণ করে ফেনীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মামুন উর রশিদের আদালতে পাঠিয়ে দেন। এরপর গত ৩০ মে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আদালতে আসামিদের হাজির করা হলেও বিচারক সেদিন অভিযোগপত্র গ্রহণের ওপর শুনানি না করে ১০ জুন শুনানির তারিখ ধার্য করেন।
অধ্যক্ষ সিরাজ উদ-দৌলার বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির মামলায় করা হয় সোনাগাজীর ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদরাসার আলিম পরীক্ষার্থী নুসরাতকে হত্যার উদ্দেশ্যে গত ৬ এপ্রিল গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। পরে ১০ এপ্রিল চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায় সে। এ ঘটনায় নুসরাতের ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান বাদী হয়ে সোনাগাজী থানায় মামলা করেন। ১২ এপ্রিল মামলাটি তদন্তের জন্য পিবিআইতে পাঠানো হয়। পুলিশ ও পিবিআই এ ঘটনায় ২১ জনকে গ্রেপ্তার করে। এদের মধ্যে ১২ জন আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়। ৫ জনকে অব্যাহতি দিয়ে এবং ১৬ জনের ফাঁসির আবেদন করে গত ২৮ মে আদালতে অভিযোগপত্র দেয় পিবিআই।
বাংলাদেশ সময়: ১৪০২ ঘণ্টা, জুন ১০, ২০১৯
এসএইচডি/এইচএ/
** নুসরাত হত্যা: চলছে মামলার অভিযোগপত্র গ্রহণের শুনানি