বিদ্যমান সড়কের ধারণ ক্ষমতা ০ দশমিক ৩ মিলিয়ন হলেও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) হিসাব অনুসারে নিবন্ধিত যানবাহনের সংখ্যা ০ দশমিক ৯ মিলিয়ন। এর মধ্যে জটলা নিরসনে ঢাকা শহরে নেওয়া হয়েছে নানা উদ্যোগ।
এ লক্ষ্যে ২০১৪-১৫ অর্থবছরে একটি রিভাইজড স্ট্র্যাটেজিক ট্রান্সপোর্ট প্ল্যান (আরএসটিপি) অনুমোদন করেছে সরকার। যাতে পাঁচটি পাতাল রেললাইন, দুটো দ্রুতগতির বাস রুট এবং এক হাজার ২০০ কিলোমিটার নতুন রাস্তা নির্মাণের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে; যা বর্তমান সড়ক নেটওয়ার্কের দ্বিগুণ।
সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, সড়ক নেটওয়ার্কের আওতায় ছয়টি এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে এবং তিনটি রিং রোড অন্তর্ভুক্ত আছে। আগামী ২০ বছরে এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সরকারের মোট ব্যয় হবে প্রায় ৩ লাখ ৫১ হাজার কোটি টাকা। ইতোমধ্যে আরএসটিপি’র অনেক উদ্যোগ বাস্তবায়িত হচ্ছে।
তবে এসব চলমান প্রকল্প দেখে অনেক সময় গোলক ধাঁধায় পড়েছেন ঢাকাবাসী। এমন অবস্থা দাঁড়িয়েছে কেউ কেউ মনে করছেন, সবই বুঝি মেট্রোরেল প্রকল্পের কাজ। আসলে নানা রুটে নানা প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে ঢাকায়। চলমান মেট্রোরেল রুট
ঢাকা মাস র্যাপিড ট্রানজিট (এমআরটি-৬) রুট বা মেট্রোরেল প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে। তৃতীয় পর্ব থেকে আগারগাঁও, ফার্মগেট, শাহবাগ হয়ে মতিঝিল পর্যন্ত ২০ দশমিক ১০ কিলোমিটার উড়াল রুট সম্পূর্ণভাবে খুলে দেওয়া হবে ২০২১ সালে। মেট্রোরেলের সার্বিক গড় অগ্রগতি ২৪ দশমিক ৬৯ শতাংশ। আর প্রথম পর্যায়ে নির্মাণের জন্য নির্ধারিত উত্তরা তৃতীয় পর্ব থেকে আগারগাঁও অংশের অগ্রগতি ৪০ দশমিক ৫৮ শতাংশ। বাস র্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) রুট
রাজধানীর বিমানবন্দর রেলস্টেশন থেকে জয়দেবপুর চৌরাস্তা পর্যন্ত ২০ দশমিক ৫০ কিলোমিটার আসা-যাওয়া করতে সময় লাগবে মাত্র ২০ মিনিট। ‘গ্রেটার ঢাকা সাসটেনেবল আরবান ট্রান্সপোর্ট’ প্রকল্পের আওতায় এরই মধ্যে কাজ শুরু হয়েছে। ২০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে।
প্রকল্পটি বাস্তবায়নকারী কর্তৃপক্ষ সড়ক ও জনপথ অধিদফতর (সওজ)। সড়ক প্রশস্তকরণ, সার্ভিস সড়ক ও গাজীপুরে তিন কিলোমিটার ড্রেনেজ নির্মাণ, আট লেনের টঙ্গী সেতু ও ফ্লাইওভার নির্মাণ হবে প্রকল্পের আওতায়।
তবে ২০ দশমিক ৫০ কিলোমিটার আলাদা রুটের কাজ এক শতাংশও বাস্তবায়ন হয়নি। ছয়টি ফ্লাইওভারের ৫ শতাংশ ও উড়াল সড়কের ১০ শতাংশ কাজ এগিয়েছে। তবে ৬৮ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে বাস ডিপোর। তবে বাস ডিপো ছাড়া বিআরটি রুটের কাজ তেমন একটা চোখে পড়ার মতো না। ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে (উড়াল সড়ক)
রাজধানীর যানজট নিরসনে সরকারের সবচেয়ে বড় প্রকল্প ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের (উড়াল সড়ক) নির্মাণ কাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলেছে। হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের বিপরীতে এয়ারপোর্ট রোডের কাওলা থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুতুবখালী পর্যন্ত সংযোগ সড়কসহ ২৬ কিলোমিটার দীর্ঘ হবে এক্সপ্রেসওয়েটি।
প্রকল্পের রুটগুলো হচ্ছে- শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর-কুড়িল- বনানী-মহাখালী-তেজগাঁও-মগবাজার-কমলাপুর-সায়েদাবাদ-যাত্রাবাড়ী-ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়ক (কুতুবখালী)। বিমানবন্দর থেকে কুতুবখালী যেতে সর্বোচ্চ সময় লাগবে ২০ মিনিট। প্রথম ধাপে এক্সপ্রেসওয়েটি বিমানবন্দর থেকে শুরু হয়ে বনানী পর্যন্ত খুলবে চলতি বছরে। এ রুটের দৈর্ঘ্য ৭ দশমিক ৪৫ কিলোমিটার। ইসিবি চত্বর থেকে কালশী পর্যন্ত ফ্লাইওভার
মিরপুর ইসিবি চত্বর থেকে কালশী রোডে চলছে মহাযজ্ঞ। অনেকে মনে করছেন, এটা হয়তো মেট্রোরেলের রুট। আসলে ঢাকার মিরপুরে ইসিবি চত্বর থেকে কালশী মোড় পর্যন্ত নতুন একটি ফ্লাইওভার নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।
এটির দৈর্ঘ্য হবে ৮৪৪ দশমিক ১২ মিটার। সেই সঙ্গে সড়কও সম্প্রসারণ করা হচ্ছে। এতে মিরপুর, পল্লবী, ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট, উত্তরা, মহাখালী ও রামপুরার মধ্যে সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত হবে।
ঢাকায় একগুচ্ছ প্রকল্প বাস্তবায়ন প্রসঙ্গে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, আরএসটিপি অনুযায়ী ঢাকা শহরে একাধিক উন্নয়ন প্রকল্প চলছে। শুধু একটি মেট্রোরেল দিয়ে ঢাকার যানজট নিরসন হবে না। তাই আমরা মেট্রোরেলের পাশাপাশি এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, ফ্লাইওভার ও সড়ক প্রশস্তকরণের কাজ করছি।
‘একটি প্রকল্প আরেকটির সঙ্গে সম্পৃক্ত। সব প্রকল্পের কাজ যখন সম্পন্ন হবে তখনই ঢাকা যানজট মুক্ত হবে। সব প্রকল্পই আমরা পরিকল্পনা অনুযায়ী বাস্তবায়ন করছি। ’
বাংলাদেশ সময়: ০৩০১৫ ঘণ্টা, জুন ০৯, ২০১৯
এমআইএস/এমএ