পদ্মাসেতুর অদূরে চৌরাস্তা মোড় সংলগ্ন এলাকায় অবস্থিত পুনর্বাসন সাইট কুমারভোগ। পুনর্বাসন কেন্দ্রে গাছ থেকে তখন আম পাড়ছিলেন মধ্যবয়সী শাহিন ব্যাপারী।
বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সেতু নির্মাণের লক্ষ্যে পদ্মার উভয়পাড় মুন্সিগঞ্জ, শরীয়তপুর ও মাদারীপুরে মোট ২ হাজার ৮৬৬ হেক্টর ভূমি অধিগ্রহণ করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে ২ হাজার ৬৬ হেক্টর জমি অধিগ্রহণ করা হয়ে গেছে। উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে ৭টি পুনর্বাসন কেন্দ্র নির্মাণের। ইতোমধ্যে মুন্সিগঞ্জের লৌহজং উপজেলায় দু’টি, মাদারীপুর জেলায় একটি ও শরীয়তপুর জেলায় একটি করে মোট ৪টি পুনর্বাসন কেন্দ্র বানো হয়েছে। এছাড়া পুনর্বাসনের আওতায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের মধ্যে বিতরণ করা হয়েছে ৬৩২ কোটি টাকা। ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনের জন্য মোট ২ হাজার ৫৯২টি প্লটটি করা হচ্ছে। এরমধ্যে ৬৬৭টি ভূমিহীন পরিবারকে বিনামূল্যে প্লট দেওয়া হয়েছে। ৬৪৫ জন ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিকে ভিটে-উন্নয়ন সহায়তা দেওয়া হয়েছে। একাধিক পুনর্বাসন কেন্দ্র ঘুরে দেখা যায়, প্রবেশপথেই রকমারি ফলজ, ওষুধি ও ফুল গাছের বাগান। প্রতিটি কেন্দ্রে একটি মসজিদ, একটি বাজার, বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের জন্য একটি পানির ট্যাংক, একটি পুকুর, একটি স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় আছে। এছাড়া পুনর্বাসন কেন্দ্রগুলোকে যেন এক সবুজ বেষ্টনী হিসেবে গড়ে তোলা হয়েছে।
নাওডোবা পুনর্বাসন কেন্দ্রের সবুজ বেষ্টনীর মধ্যে দুই সন্তান নিয়ে বসবাস করেন আক্কাস মাতবর ও শায়লা বেগম দম্পতি। আক্কাসের সেভাবে মাথা গোঁজার কোনো ঠাঁই ছিল না। তবে সেতু এলাকায় নামকাওয়াস্তে একটা ঠিকানা ছিলো। অথচ সেই আক্কাস পুনর্বাসন এলাকায় প্লট নিয়ে বসবাস করছেন মনের আনন্দে।
আক্কাস বলেন, আমার কিচ্ছু ছিল না। শেখের বেটি (প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা) পদ্মাসেতু করায় কোনো ট্যাকা পয়সা ছাড়াই প্লট পাইছি। ৪ নং ওয়ার্ড কুমারভোগের বাসিন্দা ছিলেন ধলু মিয়া। তার সাড়ে ১৪ শতাংশ জমি সরকার পদ্মাসেতু প্রকল্পের আওতায় অধিগ্রহণ করেছে। বিনিময়ে কুমারভোগ পুনর্বাসন কেন্দ্রে ধলু মিয়াকে ৫ শতক জমি দিয়েছে। এছাড়া ক্ষতিপূরণ বাবদ নগদ ১৩ লাখ টাকা এবং প্রতি শতাংশ বাবদ ১ লাখ ৭৫ হাজার টাকা করে দিয়েছে তাকে। ১৩ শতাংশ জমির পরিবর্তে যা পেয়েছেন তা নিয়ে সন্তুষ্ট ধলু মিয়া।
তিনি বাংলানিউজকে বলেন, আল্লাহ সুখে রাখছে। এক সময় ঝড়ে বাড়ি ঘর উড়াই নিছে। সকাল হলেই টিনের খোঁজে বের হতাম। আল্লাহর রহমতে সেই ঝামেলা নাই। ১৩ শতাংশ জমির বদলে জমি, নগদ টাকাসহ নিরাপত্তা পেয়েছি।
বাংলাদেশ সময়: ১০২০ ঘণ্টা, জুন ০৯, ২০১৯
এমআইএস/এইচএ/