ঢাকা, শুক্রবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

বিনোদনের স্বর্গরাজ্য বসুন্ধরার আলটিমেট ফান ফ্যাক্টরি

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০৫৮ ঘণ্টা, জুন ৯, ২০১৯
বিনোদনের স্বর্গরাজ্য বসুন্ধরার আলটিমেট ফান ফ্যাক্টরি

ঢাকা: দেশের অভিজাত শপিং কমপ্লেক্স বসুন্ধরা সিটির ১৪ থেকে ১৯ তলায় বিভিন্ন বয়সী বিনোদনপ্রেমীদের ভিড়। লক্ষ্যণীয় উপস্থিতি দেখা গেলো কিশোর-কিশোরীদের। টিকিট কেটে সবাই প্রবেশ করছে দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে বড় গেমিং জোন ‘বসুন্ধরা আলটিমেট ফান ফ্যাক্টরি’তে। ভেতরে ঢুকতেই মনে হলো যেন মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর বা হংকংয়ের মতো অগ্রগামী দেশের কোনো ইনডোর বিনোদন পার্ক। 

পবিত্র ঈদুল ফিতরের ছুটিতে কিশোর-কিশোরী ও তরুণ-তরুণীরা শহুরে জীবনের ক্লান্তি আর একঘেঁয়েমি কাটাতে এসেছেন এ পার্কে। পার্কে ঢুকেই সবাই মজে যাচ্ছেন বিভিন্ন গেম বা রাইডে।

 

শনিবার (৮ জুন) বসুন্ধরা সিটিতে এই গেমিং জোনে ঢুকে এমন চিত্রই দেখা যায়। ‘আনলেশ ইউর ইনার হিরো’ স্লোগান যেন সাহসী করে তুলছিল সবাইকে। আবালবৃদ্ধবনিতা সবাই বিভিন্ন গেম-রাইডে অংশ নিয়ে ভার্চুয়াল জগতে হারিয়ে যাচ্ছেন। সবার বাঁধভাঙা আনন্দে উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করছিল ফান ফ্যাক্টরি।

প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তাদের ভাষ্যে, ভার্চুয়াল রিয়্যালিটির (ভিআর প্রযুক্তি) ইনডোর এন্টারটেইনমেন্টের সর্বাধুনিক সংস্করণ এখানেই রয়েছে। উন্নত বিশ্বের ট্রেন্ডিং ভার্টিক্যাল এন্টারটেইনমেন্টের ধারণা থেকেই বসুন্ধরা সিটির ছয়টি ফ্লোরজুড়ে এ আলটিমেট ফান ফ্যাক্টরি গড়ে তোলা হয়েছে।

বেসরকারি একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আশিকুর রহমান, সায়মান পলাশ ও আদনান বসুনিয়া। তিন বন্ধু মিলে ঈদের বিনোদন পেতে এসেছেন বসুন্ধরা আলটিমেট ফান ফ্যাক্টরিতে। বসুন্ধরা আলটিমেট ফান ফ্যাক্টরির একটি রাইডে একজন বিনোদনপ্রেমী।  ছবি: জিএম মুজিবুরফ্লাইং সিমুলেটরে বসে আছেন আশিকুর রহমান। তিনি প্লেনে চড়ে আকাশে ওড়ার বাসনা মেটাচ্ছেন। এই মডেল সিমুলেটরের সিটে বসে ভিআর চশমা পরার সঙ্গে সঙ্গেই যেন বসে পড়লেন পাইলটের সিটে। এরপর তিনি যেন মেঘ ফুঁড়ে প্লেন ওড়াচ্ছিলেন। বাতাসে ভেসে বেড়ানোর সত্যিকারের উত্তেজনায় উচ্ছ্বসিত দেখা গেলো তাকে।

অন্যদিকে ওয়ার জোনে ব্যস্ত আদনান বসুনিয়া। ভিআর চশমা পরে যুদ্ধ করার পর আদনান বলেন, ওয়ার জোন অনেক দারুণ লেগেছে। এখানে শুট করতে পারবেন প্রতিপক্ষকে। ওয়ার গেমসের স্বাদ একেবারেই নতুন করে পাওয়া গেছে ভার্চুয়াল রিয়্যালিটিতে। নিজেকেই আবিষ্কার করেছি যুদ্ধের ময়দানে। সবকিছু দেখে অবাক হয়েছি। আমি পরিবারের সঙ্গে থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়া গিয়েছি। সেসব দেশের তুলনায় বসুন্ধরা আলটিমেট ফান ফ্যাক্টরি অনেক জোশ। বন্ধুরা সত্যি অনেক মজা করেছি। আমাদের দেশে এমন বিনোদন গেমিং জোন আছে আগে কল্পনাও করিনি।

একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সেলস কর্মকর্তা আতিকুর রহমান। স্পোর্টস সিমুলেটর উপভোগ করেছেন তিনি। বসুন্ধরা সিটির লেভেল ১৮ জুড়ে রয়েছে স্পোর্টস সিমুলেটর। বাংলাদেশে প্রথম স্পোর্টস সিমুলেটর আনা হয়েছে ইংল্যান্ড থেকে। এখানে ফুটবল, ক্রিকেট, গলফ খেলার আসল স্বাদ পাওয়া যাবে। বড় স্ক্রিনের সামনে দাঁড়িয়ে ফুটবল পায়ে নেমে পড়তে পারবেন এখানে। গোলপোস্টে দাঁড়াবে বিশ্বের সেরা গোলকিপার।

আতিকুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, ঈদের ছুটিতে প্রতিবছর এখানে আসি। তবে ফান ফ্যাক্টরিতে এই প্রথম বিভিন্ন রাইড চালালাম। ভালোই লাগলো। কিছু সময়ের জন্য হলেও ভার্চুয়াল জগতে হারিয়ে গিয়েছিলাম। স্পোর্টস সিমুলেটর দারুণ উপভোগ করেছি।

একটি গ্রুপের ভাইস প্রেসিডেন্ট ও সিইও সৌমিক রহমান মেহেদী। শুক্রবারের (৭ জুন) শনিবারও এখানে এলেন তিনি। সৌমিক বাংলানিউজকে বলেন, এখানে প্রবেশ করলে সময়টা ভালোভাবে কাটে। একটার পর একটা রাইড চালালাম, ভালো লাগলো। কিছুটা সময়ের জন্য হলেও শৈশবে ফিরে গিয়েছিলাম। বসুন্ধরা আলটিমেট ফান ফ্যাক্টরির একটি রাইডে একজন বিনোদনপ্রেমী।  ছবি: জিএম মুজিবুরএই ফান ফ্যাক্টরিতে রয়েছে আরও নানা গেম ও রাইড। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো-
রেসিং সিমুলেটর: বসুন্ধরা সিটির লেভেল ১৪ সাজানো হয়েছে রেসিং ও ফ্লাইং সিমুলেটর দিয়ে। ফেরারি মডেলের গাড়িতে দুরন্ত গতিতে বিনোদনপ্রেমীরা ছুটছেন রেসিং সিমুলেটরে।
 
লেজার ট্যাগ: ফান ফ্যাক্টরির হার্ট বলা যেতে পারে লেজার ট্যাগ। এ গেম খেলার জন্য প্রতিদিনই হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন শত শত তরুণ-তরুণী। দুই দলে ভাগ হয়ে মোট ২০ জন এ খেলায় অংশ নিতে পারেন। লাল ও নীল নিয়ন বাতিযুক্ত ভেস্ট পরে খেলোয়াড়রা প্রবেশ করেন একটি অন্ধকার রুমে। ৪ হাজার বর্গফুটের রুমের ভেতর লুকিয়ে থাকার জন্য রয়েছে নানা অবস্টাকল বা লুকোনোর জায়গা। খেলোয়াড়দের হাতে থাকা লেজার গান দিয়ে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করে পয়েন্ট জোগাড় করার জন্য সারাক্ষণই কাটাতে হয় উত্তেজনা আর উদ্বেগের মিশেলে।

আরকেড জোন: বসুন্ধরা সিটির ১৭ তলায় বেশ কয়েকটি গেম নিয়ে গড়ে তোলা হয়েছে বিশাল আরকেড জোন। এখানে রয়েছে আইস হকি, স্কেটিং, গোস্ট রাইড, শুটিং, মনস্টার রাইড, হান্টিংসহ নানা ধরনের রাইড।

ভার্চুয়াল রোলার কোস্টার: অ্যাড্রেনালিন ক্ষরণের জন্য ভার্চুয়াল রিয়েলিটির চেয়ে সেরা আর কী আছে? ভিআর চশমা চোখে পরে চড়তে পারেন রোলার কোস্টারে। সিমুলেটরের ঝাঁকুনি আর বাঁক নেওয়ায় মনেই হবে না আপনি বসে আছেন একটি ঘরে। আর হাজার ফুট প্রশস্ত রোলার কোস্টার ট্র্যাকে তীব্র গতিতে ছুটে যাওয়ার উত্তেজনায় থাকবেন বুঁদ হয়ে।

বসুন্ধরা আলটিমেট ফান ফ্যাক্টরির একটি রাইডে একজন বিনোদনপ্রেমী।  ছবি: জিএম মুজিবুরভার্চুয়াল জুরাসিক পার্ক: ভার্চুয়াল রোলার কোস্টারের মতো ভার্চুয়াল জুরাসিক পার্কের উত্তেজনাও জীবন্ত মনে হবে। ভিআর প্রযুক্তি আপনাকে সারাক্ষণ জানান দেবে আপনি ঢুকে পড়েছেন জুরাসিক পার্কে। যে কোনো সময় দেখা হয়ে যাবে প্রাগৈতিহাসিক প্রাণীদের সঙ্গে।

নাইন ডি, সেভেন ডি ও ফাইভ ডি সিনেমাস: ফান ফ্যাক্টরি সবাইকে বিস্মিত করে চলেছে পাঁচ, সাত ও নয় ডাইমেনশনের সিনেমা দেখিয়ে।  আর গ্লাসের জাদুতে সিনেমার পর্দা হয়ে উঠবে জীবন্ত। ডাইনোসর, বাঘ ও হিংস্র প্রাণীরা ঘুরে বেড়াবে আপনার চারপাশে।
 
এতোসব আয়োজনের বিষয়ে বসুন্ধরা আলটিমেট ফান ফ্যাক্টরি ও টগি ওয়ার্ল্ড এর ইনচার্জ সবুজ প্রিন্স বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের এখানে ৬০টিরও বেশি রাইড রয়েছে। ফান ফ্যাক্টরি এবারই প্রথম ঈদ আয়োজন করেছে। এ বছর আমরা ব্যাপক সাড়া পেয়েছি। আগামীতে আরও বেশি সাড়া পাবো আশাবাদী।

তিনি বলেন, আমাদের দেশে মানুষের বিনোদনের জায়গা কম। সেদিক থেকে এটা একটা ভালো জায়গা। চিত্তবিনোদনের জন্য সবাই এখানে আসছেন। এখানে এলে সবার মন ফুরফুরে হয়।

সরকারি ছুটির দিনগুলোতে বিশেষ করে শুক্র-শনিবার ভিড় একটু বেশি থাকে বসুন্ধরা আলটিমেট ফান ফ্যাক্টরিতে। ১০০ থেকে ৩০০ টাকার মধ্যে সব ধরনের বিনোদনের ব্যবস্থা রয়েছে এখানে।

বাংলাদেশ সময়: ২০৩৪ ঘণ্টা, জুন ০৮, ২০১৯
এসএমএকে/এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।