ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

যাত্রী সমাগমে কর্মচঞ্চল হয়ে উঠেছে সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল

গৌতম ঘোষ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩১১ ঘণ্টা, জুন ৮, ২০১৯
যাত্রী সমাগমে কর্মচঞ্চল হয়ে উঠেছে সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে ঢাকামুখী মানুষের ভিড়। ছবি: ডিএইচ বাদল

ঢাকা: ফের কর্মচঞ্চল হয়ে উঠেছে সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল। পরিবারের সঙ্গে ঈদ শেষে ফিরতে শুরু করেছে নগরবাসী। শনিবার (০৮ জুন) ভোর থেকে লঞ্চের হর্ন ও যাত্রীদের পদচারণায় সদরঘাট আগের রূপে ফিরেছে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ব্যস্ততাও বাড়তে থাকে আশপাশের এলাকার।

সকাল ৯টা পর্যন্ত ৬০টি লঞ্চে এক লাখেরও বেশি যাত্রী ঢাকায় প্রবেশ করেছে। ফলে লঞ্চ ও যাত্রীদের চাপে টার্মিনালে জনজট ও লঞ্চজট দেখা গেছে।

টার্মিনালে ভিড়তে না পেড়ে অনেক লঞ্চ অন্য লঞ্চের ভেতর দিয়ে যাত্রী নামাতে হয়েছে। ফলে নৌ পরিবহন কতৃপক্ষে মাইকিং করতে শোনা গেছে, দ্রুত যাত্রী নামিয়ে টার্মিনাল ত্যাগ করারও নিদের্শনা দিচ্ছে। আবার ফিরতি যাত্রী না নিয়ে খালি লঞ্চ ছেড়ে যেতে দেখা গেছে। যা দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ঈদ শেষে শহরমুখী যাত্রীর উদ্দেশ্যে।

শনিবার রাজধানীর সদর ঘাট লঞ্চ টার্মিনালে গিয়ে দেখা যায়, ঈদের চতুর্থদিন এসে সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে রাজধানীমুখী যাত্রীদের ভিড় বাড়ছে। সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে ঢাকামুখী মানুষের ভিড়।  ছবি: ডিএইচ বাদলযাত্রীদের পদচারণায় সদরঘাট যেন তার স্বরূপে ফিরে এসেছে। ভোর থেকেই হকারদের হাঁকডাক, লঞ্চের হর্ন, রিকশা, সিএনজিচালকদের হাঁকডাকে কর্মচঞ্চলতা ফিরে পেয়েছে।

ভোর থেকে বরিশাল, ভোলা, ঝালকাঠী, পিরোজপুর, বরগুনা, চরফ্যাশন, হুলারহাট, ভান্ডারিয়া, লালমোহনসহ দেশের বিভিন্ন রুটের যাত্রীবোঝাই লঞ্চ টার্মিনালে ভিড়তে থাকে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে টার্মিনালে লঞ্চ ও যাত্রী বাড়তে থাকে। এসময় টার্মিনালে লঞ্চজটের সৃষ্টির ফলে অনেক লঞ্চকে টার্মিনালে ভিড়তে ঘণ্টারও বেশি অপেক্ষা করতে দেখা গেছে।

কোনো কোনো লঞ্চ টার্মিনালে ভিড়তে না পড়ে অন্য লঞ্চের মাধ্যমে যাত্রীদের নামাতে দেখা গেছে। একই সময়ে অনেক লঞ্চ চলে আসায় টার্মিনালের অতিরিক্ত চাপ কমাতে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) কর্মকর্তাদের বার বার মাইকিং করে দ্রুত যাত্রী নামিয়ে টার্মিনাল ছাড়ার নির্দেশ দিতে শোনা যাচ্ছে। যাতে ঘাটে আসা অন্য লঞ্চগুলোও যাত্রীদের নিরাপদে নামাতে পারে। লঞ্চগুলোও দ্রুত যাত্রী নামিয়ে ঈদ ফেরত যাত্রী আনতে আবার নির্দিষ্ট গন্তব্যে চলে যাচ্ছে।

এদিন ভোর ৪টা থেকে সকাল সাড়ে ৯টা পর্যন্ত টার্মিনালে ভিড়েছে ৬০টির মতো লঞ্চ। শুক্রবার যে লঞ্চগুলো ২০০ যাত্রী নিয়ে আসতে দেখা গেছে। শনিবার সেখানে ২ হাজার যাত্রী নিয়ে ঢাকায় ফিরছে। এতে প্রায় এক লাখের ওপরে নরগরবাসী পরিবারের সঙ্গে ঈদ শেষে ঢাকায় ফিরেছে। আর যাত্রী নিয়ে ঘাট থেকে ছেড়ে যেতে দেখা গেছে ১৬টি লঞ্চ। তবে ভোরে আসা বিভিন্ন রুটেরলঞ্চগুলো যাত্রী ছাড়াই চলে যেতে দেখা গেছে ঈদ ফেরত নগরবাসীদের আনতে। তবে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতায় সবার লঞ্চ সময় মতো ছেড়েছে। পাশাপাশি অতিরিক্ত যাত্রী দেখা যায়নি কোনে লঞ্চে। সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে ঢাকামুখী মানুষের ভিড়।  ছবি: ডিএইচ বাদলপরিবারের সঙ্গে ঈদ শেষে বরিশাল থেকে ঢাকায় ফিরেছেন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত তৌফিক ইসলাম। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, রোববার থেকে কার্যালয় খোলা তাই চলে আসতে হলো। অনেক দিন পর পর দেখা হয় পরিবারের সঙ্গে। তাই মনটা একটু খারাপ লাগছে। তারপরও কি আর করার পড়ের চাকরি করি। তবে লঞ্চে অতিরিক্ত যাত্রী না থাকলেও কোনো ফাঁকা ছিলো না। ঈদের পর ভিড় তো একটু থাকবেই। এটাই স্বাভাবিক। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতায় কোনো লঞ্চে অতিরিক্ত যাত্রী আসেনি বা ভাড়াও বেশি নেয়নি। পথে কোথাও কোনো সমস্যা হয়নি।

তিনি বলেন, সদরঘাট এসেছি এক ঘণ্টা হলো। আর এখন নামতে পাড়লাম। কারণ একসঙ্গে অনেক লঞ্চ চলে আসায় লঞ্চজটের সৃষ্টি হয়েছে। ফলে টার্মিনালে ভিড়কে পারছিলনা লঞ্চ। শুধু আমাদেরটা না এ ধরনের অনেক লঞ্চ রয়েছে।

ভোলা থেকে ঢাকায় আসলেন তিতাস গ্যাসে কর্মরত মুরাদ হাসান। তিনি বাংলানিউজকে  বলেন, এবার বাড়ি যাওয়ার সময়ও ভালোভাবে গেছি। আসলামও ভালোভাবে। কোনো ধরনের সমস্যা হয়নি। কোথাও কোনো অতিরিক্ত ভাড়া বা লঞ্চে অতিরিক্ত যাত্রী ছিলো না। তবে লঞ্চ যাত্রীবোঝাই ছিলো। আজ একটুু চাপ কম আগামীকাল অনেক বেশি চাপ হবে। এখনও একদিনের ছুটি রয়ে গেছে। এ ছুটি শেষে সবাই রোববার ঢাকায় আসবে। এছাড়া যাত্রীদের নিরাপত্তার জন্য টার্মিনাল ও নৌযানে পুলিশ, র‌্যাব ও আনসার বাহিনীর সদস্যদের কঠোর নজরদারি ছিলো বলে যোগ করেন তিনি।

পিরোজপুর থেকে ঢাকায় মেয়ের বাসায় এসেছেন মনজিল বেগম। তিনি বলেন, বাবা লঞ্চে তো ভিড় থাকবোই ঈদের মৌসুমে। যারা বাড়ি গেছে তারা তো ঢাকায় ফিরবোই। কিন্তু আজ এতো লঞ্চ আসছে টার্মিনালে ভিড়তে পারে নাই আমগো লঞ্চ। এজন্য অন্য লঞ্চের ভিতর দিয়া নামাই আবার চইলা গেছে। এছাড়া পথে কোনো সমস্যা হয় নাই। তবে লঞ্চ মালিকরা এ সুযোগে ভাড়া বেশি নিচ্ছে। আমি রোজার আগে ঢাকায় আসছি ২০০ টাকা ভাড়া দিয়ে। এখন আসলাম ৩০০ টাকা দিয়ে। সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে ঢাকামুখী মানুষের ভিড়।  ছবি: ডিএইচ বাদলনিউমার্কেটের ব্যবসায়ী নিরঞ্জন দেবনাথ এসেছেন লালমোহন থেকে। তিনি বলেন, ঈদের ছুটি শেষে গ্রাম থেকে ফিরলাম। এসময় বাড়ি যেতে আসতে অনেক কষ্ট হয়। তবে এবার ছুটি বেশি হওয়ায় তেমন কোন কষ্ট হয়নি। লঞ্চে যাত্রীদের ভিড় ছিলো সেটা অতিরিক্ত না। ঈদের সময় যেমন হওয়ার কথা তেমনই হয়েছে। তবে অন্যান্য ঈদের থেকে অনেক ভালোভাবে এবার যেতো এবং আসতে পেরেছি।

নৌযান সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শনিবার ঘাটে গত দু’দিনের তুলনায় লঞ্চ ও যাত্রী একটু বেশি। রোববার (৯ জুন) থেকে সরকারি কার্যালয় পুরোদমে শুরু হলে ভিড় আরও বাড়বে।

সদরঘাট নৌ নিরাপত্তা ও ট্রাফিক বিভাগের ইন্সপেক্টর (বিআইডব্লিউটিএ) এসএম শফিকুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, আজ (শনিবার) বলা যায় ঈদের ফিরতি যাত্রা শুরু হয়েছে। তবে সবচেয়ে বেশি ভিড় হবে রোববার ও সোমবার। আজ শনিবার সকাল ৯টা পর্যন্ত মাত্র ৬০টি লঞ্চ টার্মিনালে ভিড়ছে। আজ প্রায় প্রতিটি লঞ্চে যাত্রী ছিলো ১৫শ থেকে ২ হাজার জন। সে হিসাবে গড়ে এক লাখের বেশি যাত্রী শনিবার ঢাকায় প্রবেশ করেছে।

তিনি বলেন, এবারের ঈদের যাত্রা স্বস্তির হয়েছে। নৌপথে কোথাও কোনো দুরঘটনা খবর পাওয়া যায়নি। একইসঙ্গে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের খবরও আমরা পায়নি। ভাড়ার ক্ষেত্রে যেটা হয়। লঞ্চ মালিকরা প্রতিযোগিতা করে যাত্রী টানতে বছরের অন্যান্য সময় সরকারের নিধারিত বরিশালের ভাড়া ৩০৫ টাকা সেটা না নিয়ে কমিয়ে ২০০ টাকা রাখে। কিন্তু ঈদে ৩০৫ টাকাই রাখে। তখন যাত্রীরা বলে ভাড়া বেশি নিচ্ছে। এছাড়া অজ্ঞান পার্টি, ছিনতাইকারী, পকেটমারদের খপ্পরে পড়েছে এমন কোনো খবরই পায়নি। সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে ঢাকামুখী মানুষের ভিড়।  ছবি: ডিএইচ বাদলদেশের মুসলিমদের সর্ববৃহৎ ধর্মীয় উৎসব ঈদুল ফিতর উদযাপন করা হয় ৫ জুন।   ঈদুল ফিরত উপলক্ষে এবার সরকারি ছুটি ২ জুন শুরু হলেও নগরবাসী চাকরিজীবীরা তাদের পরিবার নিয়ে গ্রামের উদ্দেশে ৩০ মে থেকেই রাজধানী ছাড়তে শুরু করে। ঢাকা মহানগর পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, ৪ জুন পর্যন্ত প্রায় ৫০-৬০ লাখ মানুষ ট্রেন, বাস ও লঞ্চে রাজধানী ছেড়ে যান।

বাংলাদেশ সময়: ০৯০১ ঘণ্টা, জুন ০৮, ২০১৯
জিসিজি/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।