এভাবে দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত আনন্দ উল্লাস করে ঈদ পরবর্তী ছুটির দিন কাটিয়ে দিলেন এ দম্পতি। অনেকটা শহুরে বন্দি জীবন থেকে বেরিয়ে এসে একদিনের জন্য হলেও ছুটির এ দিনটিকে বিনোদন উপভোগের দিনে পরিণত করলেন তারা।
কেননা শুরুতেই তাদের জীবন ইট-পাথরে ঘেরা টোপে অনেকটা আটকা। ইচ্ছে থাকলেও এ ঘেরা টোপ থেকে বের হওয়া যায় না। তাহলে আনন্দ বিনোদনের সময় বের হবে কি করে। কারণ শামীম চাকরি করেন একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে। অপরদিকে স্ত্রী ব্যস্ত থাকেন ছেলে-মেয়েকে নিয়ে। এরমধ্যে ছেলে আবিদ স্কুলে যাওয়া শুরু করেছে।
শুক্রবার (৭ জুন) বিকেলে বগুড়ার ওয়ান্ডারল্যান্ড শিশুপার্কে এ দম্পতির সঙ্গে আলাপচারিতায় এমনটা তথ্য ওঠে আসে।
এ দম্পতির ভাষ্য, ‘শহুরে জীবন মানেই এক ধরনের বন্দি জীবন। ইচ্ছে থাকলেও সময় বের করা যায় না। আবার একটু সময় বের হলেও কাছে কূলে কোথাও বিনোদনের জায়গা নেই। তাই শহুরে মানুষগুলো ঈদের সময়টাকে ঘোরাঘুরির জন্য ইচ্ছেমতো কাজে লাগিয়ে থাকেন।
বিনোদনের জন্য পার্কসহ নানা ধরনের আকর্ষণীয় স্থান ঘুরতে বের হন এ মানুষগুলো। এ দম্পতিও অন্যদের মতোই ঈদের ছুটি কাজে লাগিয়ে কিছুটা সময় সন্তানদের নিয়ে আনন্দ উল্লাস করলেন। ’
বগুড়া শহরের সেউজগাড়ি বটতলা এলাকা থেকে দক্ষিণে খান্দার পর্যন্ত চলে গেছে শহর কেন্দ্রিক একটি সড়ক। খান্দা পৌঁছার আগেই দেখা মিলবে চারমাথা। সেখান থেকে সোজা পশ্চিমে এগোলে দেখা মিলবে বগুড়া শহীদ চান্দু স্টেডিয়ামের। স্টেডিয়ামে যাওয়ার এ সড়কে দক্ষিণ লাগোয়ায় ওয়ান্ডারল্যান্ড শিশুপার্কের অবস্থান।
এ পার্কে বিনোদন নিতে আসা আফসানা মিমি বাংলানিউজকে জানান, প্রাকৃতিকভাবে গড়ে ওঠা বিনোদনকেন্দ্রগুলো সবসময়ই সংশ্লিষ্টদের অযত্ন-অবহেলার শিকার হয়ে আসছে। শুধু অবহেলার কারণে অনেক ঐতিহ্যময় বিনোদন স্থান বিলুপ্তপ্রায়। এ অবস্থায় কৃত্রিমভাবে গড়ে ওঠা বিনোদনকেন্দ্রগুলোই এখন বিনোদনের একমাত্র ভরসাস্থল। তাই তার পরিবারের সঙ্গে এখানে আসা।
তাসলিমা হোসেন নামে আরেক দম্পতি বাংলানিউজকে জানান, এ পার্কটি ইট-পাথরে গড়ে তোলা এ কথা ঠিক। তবে ভেতরের পরিবেশটা অত্যন্ত আকর্ষণীয়। সবুজের আবহে গড়ে তোলা হয়েছে চারপাশটা। বলতে গেলে পুরো ভেতরটাই যেন সবুজে ঘেরা। প্রাকৃতিক আমেজ দেওয়ার জন্য পার্কের ভেতরে অনেক কিছু দৃশ্যমান। দৃশ্যগুলো দেখে ভীষণ মুগ্ধ তারা যোগ করেন এ দম্পতি।
কাহালু উপজেলা শহর থেকে আসা শাহজামাল বাংলানিউজকে জানান, কৃত্রিম পার্কটিকে প্রাকৃতিক পরিবেশ দিতে কর্তৃপক্ষ অনেক কিছু করেছে। যা তাকে ভীষণভাবে মুগ্ধ করেছে।
পার্কের প্রবেশদ্বারের দেয়ালে শোভা পাচ্ছে আকর্ষণীয় রংয়ের বাহার। সম্মুখভাগে দেয়ালের মাঝ বরাবর লাগিয়ে রাখা হয়েছে কার্টুন আকৃতির মানুষ। পার্কের প্রবেশ করার আগেই যা আপনাকে মুগ্ধ করবে বৈকি।
সেই পার্কের ভেতরে পা ফেলতেই দেখা যাবে দু’টো বক। যদিও কৃত্রিমভাবে তৈরি। একটু দূর থেকে দেখলে মনে হয় যেন বাস্তব বক দু’টো উড়াল দিচ্ছে। চারপাশে সৌন্দর্য ছড়াচ্ছে শোভাবর্ধনকারী নানা গাছপালা। পরিপাটি করে সাজানো পুরো পরিবেশটা। বাহারি রংয়ের আঁচড় লাগানো পার্কের ভেতর ও বাইরের প্রতিটি দেয়াল। রংয়ের ম্যাচিং ঘটিয়ে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে সৌন্দর্য। বিনোদনপ্রেমীদের আকর্ষণ বাড়াতে এতো সব আয়োজন।
বিনোদন নিতে দুপুর থেকেই এ পার্কে আসতে শুরু করেন নানা শ্রেণীপেশার নারী-পুরুষ। বিকেল হওয়া মাত্র পুরো পার্ক বিনোদনপ্রেমীদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে ওঠে। কেউ একা এসেছেন। আবার অনেকেই পরিবার নিয়ে এসেছেন। সবমিলে সবাইকে আনন্দ, উল্লাস করতে দেখা যায় এ পার্কে।
এ পার্কে মেরিগোরাইন্ড, টুইস্টার, বাম্পারকার, সুপার চেয়ার, ভয়েজার বোর্ড, ফ্রকজাম, ওয়ান্ডার হুইল, প্যারাটোপা, প্রপ্রোচি, ট্রেন, গেমস গ্যালারি, প্যাডেল বোর্ডসহ নানা ধরনের বিনোদন রাইড রয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ২০২০ ঘণ্টা, জুন ০৭, ২০১৯
এমবিএইচ/আরবি/