কিন্তু এদিন ট্রেন না থাকায় মাথায় হাত পড়েছে তাদের। রেলওয়ে স্টেশনে এদিক-ওদিক ঘুরপাক ‘স্বপ্ন যাবে বাড়ি আমার’ গানটিকে স্মরণ করিয়ে দেয়।
বুধবার (৫ জুন) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে নগরের রেলওয়ে স্টেশন ও পাটগুদাম ব্রিজ মোড় বাসস্ট্যান্ড এলাকা ঘুরে দেখা গেছে এমন চিত্র।
স্ত্রী ও দুই সন্তানকে নিয়ে ব্যাগ হাতে হন্ত-দন্ত হয়ে নগরের রেলওয়ে স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে ছোটাছুটি করছিলেন একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকুরে ওয়ালিদ হোসেন (৪৫)। চাকরির সুবাদে থাকেন নগরের কেওয়াটখালী এলাকায়।
নাড়িপোতা ভিটা পিরোজপুরে। ঈদের দিনে ভোগান্তি ছাড়াই বাড়ি যাওয়া সম্ভব হবে এজন্য ঈদযাত্রার জন্য বেছে নিতে এসেছিলেন ট্রেনকে।
কিন্তু ঈদের দিনে ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকার বিষয়টি জানা নেই ওয়ালিদের। ‘ভাই আজকে ঢাকার ট্রেন কোথায়?’ হাঁক দিয়ে বার বার নানাজনের কাছে জানতে চাচ্ছিলেন ওয়ালিদ। কিন্তু স্টেশনে অবস্থানরত লোকজনের কাছে ট্রেন না থাকার বিষয়টি জানতে পেরেই মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়লো তার।
ওয়ালিদের স্ত্রী ফারহানা আক্তার বাংলানিউজকে জানান, ঈদের আগে সড়ক বা রেল সব জায়গাতেই তো তিল ঠাঁই থাকে না। তাই বাধ্য হয়েই পরিবারের সঙ্গে ঈদ করতে ট্রেনের ওপর নির্ভরশীল ছিলাম। কিন্তু ভাগ্য খারাপ! এখন তো সড়ক পথেই যেতে হবে।
ময়মনসিংহ রেলওয়ে স্টেশনের সুপারিনটেনডেন্ট জহিরুল ইসলাম বাংলানিউজকে জানান, ঈদের দিনে সব ট্রেন বন্ধ। শুধুমাত্র রাত ২টার দিকে ঢাকা থেকে দেওয়ানগঞ্জের উদ্দেশে ময়মনসিংহ এসে পৌঁছবে ভাওয়াল এক্সপ্রেস এবং একইভাবে দেওয়ানগঞ্জ থেকে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে যাবে।
তিনি জানান, বৃহস্পতিবার (৬ জুন) ময়মনসিংহ রেলওয়ে স্টেশন থেকে যমুনা, ব্রহ্মপুত্র ও হাওর এক্সপ্রেস ট্রেন নির্ধারিত সময়ে ছেড়ে যাবে।
রেলওয়ে স্টেশনের মতো নগরের পাটগুদাম ব্রিজ মোড় বাসস্ট্যান্ড এলাকাতেও ঈদের দিনে বাড়ি ফিরতে ভিড় করছেন অনেক যাত্রীরা। ফাঁকা সড়কে যানজট সমস্যামুক্ত হলেও অতিরিক্ত ভাড়ার কারণে যাত্রীরা বাসচালক ও হেলপারদের সঙ্গে বচসায় জড়িয়ে পড়ছেন।
এ ব্রিজ মোড়ে বাসের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে রাজধানী ঢাকা থেকে আসা বাবুল ভূঁইয়া (৪২), সুলতানা (৪৫) ও জান্নাতুল (২০) সহ কয়েকজনকে। মিনিট বিশেক আগে ঢাকা থেকে এখানে এসে নেমেছেন। যাবেন নেত্রকোণার কলমান্দা উপজেলার ধীতপুর সুনই গ্রামে।
সুলতানা বাংলানিউজকে জানান, বাসে আসন না পেয়ে আগের দিন ফিরতে পারিনি। এদিন সকাল ৬টার দিকে বাসে উঠেছি। কিন্তু ১০০ টাকার ভাড়া ২৫০ টাকা দিতে হয়েছে। সুযোগ বুঝে চালকরা যাত্রীদের পকেট কাটলেও দেখার কেউ নেই, অভিযোগের সুরে বলছিলেন সঙ্গেই দাঁড়িয়ে থাকা মুদি দোকানি কর্মচারী আরিফ (২৫)।
তিনি জানান, নেত্রকোণা পর্যন্ত যেতে জনপ্রতি ৬০ থেকে ৭০ টাকা করে দাবি করছেন চালক। কিন্তু বনিবনা না হওয়ায় এখানে দাঁড়িয়ে সময় কাটাতে হচ্ছে।
তবে এ বিষয়ে স্থানীয় সাদিয়া পরিবহনের চালক নাম না জানিয়ে বাংলানিউজকে বলেন, ‘ঈদের দিন ট্রেন চলে না। কিন্তু আমরা ঠিকই বাস চালাইয়া মানুষরে সার্ভিস দেই। কিছু বেশি ভাড়া না নিলে তো স্টাফদের পুষবো না। ’
অন্যান্য দিন এ বাসস্ট্যান্ডে পা ফেলারও জায়গা না থাকলেও ঈদের দিন হওয়ায় কয়েকটি বাস ও হাতেগোনা কিছু যাত্রী ছাড়া পুরো স্ট্যান্ডটিই ফাঁকা মনে হয়েছে। মূলত বাসের সঙ্কটও বাড়তি ভাড়ার অন্যতম প্রধান কারণ বলে জানান এক বাসের হেলপার।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৪৩ ঘণ্টা, জুন ০৫, ২০১৯
এমএএএম/আরবি/