ঢাকা, শুক্রবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

ঈদে দর্শনার্থীদের ভিড় জমে মুহুরী প্রজেক্টে

সোলায়মান হাজারী ডালিম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০১৮ ঘণ্টা, জুন ৫, ২০১৯
ঈদে দর্শনার্থীদের ভিড় জমে মুহুরী প্রজেক্টে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম সেচ প্রকল্প এটি। ছবি: বাংলানিউজ

ফেনী: এক পাশে শান্ত নদী, অন্যপাশে জোয়ার ভাটায় উত্তাল নদী। মাঝখানে ফেনী রেগুলেটর। নদীর পাশেই ছায়া সুনিবিড় পার্ক। অদূরে বায়ু বিদ্যুৎ প্রকল্প। 

সবমিলিয়ে অসাধারণ আবহ ফেনী সোনাগাজীর মুহুরী প্রজেক্ট এলাকায়। প্রকৃতির এ সৌন্দর্য দেখতে পুরো বছরই দর্শনার্থীদের পদচারণায় মুখরিত থাকে পর্যটনকেন্দ্রটি।

ঈদ এলে দর্শনার্থীদের সেই সংখ্যা বেড়ে যায় কয়েকগুণ।  

বঙ্গোপসাগরের উপকূলে এ এলাকায় চিত্তাকর্ষক নৈসর্গিক শোভা ও মনোমুগ্ধকর অসংখ্য দৃশ্য রয়েছে এ এলাকায়। মিরসরাই-সোনাগাজী এলাকায় নির্মাণাধীন বঙ্গবন্ধু ইকোনোমিক জোনকে ঘিরে এ পর্যটন স্পটটির গুরুত্ব বাড়ছে দিনকে দিন।  

দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম এ সেচ প্রকল্প দীর্ঘদিন থেকে জেলার অন্যতম পর্যটন স্থান হিসেবে পরিচিত।

প্রায় ২শ কোটি টাকা ব্যয়ে ১৯৮২ সালে নির্মিত মুহুরী সেচ প্রকল্পের ৪০ গেট বিশিষ্ট রেগুলেটর ও ক্লোজার ড্যামটি দেখতেও বেশ আকর্ষণীয়। এছাড়া নদীর পাড়ে সবুজ বনানী ঘেরা মায়াবী পরিবেশ। শীতকালে অতিথি পাখির আগমন ও তাদের কলকাকলিতে মুখরিত হয়ে ওঠে এই এলাকা। গ্রীষ্মে প্রচন্ড গরমে এক একটু স্বস্তির বাতাসের জন্যও মানুষ এখানে ছুটে আসে।  

নদীর পানিতে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের নয়নাভিরাম দৃশ্য পর্যটকদের আকৃষ্ট করে দারুণভাবে। এই সেচ প্রকল্প এলাকায় চারপাশে রয়েছে সবুজের সামরোহ। এখানে পর্যটকদের নিরাপত্তা জোরদার করতে স্থাপন করা হয়েছে পুলিশ ফাঁড়িও।

মুহুরী নদীতে ব্যক্তিগত উদ্যোগে ভাসমান মাছ চাষ, নদীতে জাল ফেলে জেলেদের মাছ ধরার দৃশ্য, দেশের প্রথম বায়ু বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র, পরিকল্পিতভাবে মাছ চাষ, ডেইরি ফার্ম, ব্যক্তিগত পর্যায়ে নার্সারি ও অ্যাগ্রো খামারসহ ইত্যাদি চোখ জুড়ানো দৃশ্য মনে রাখার মতো।

জীবন জীবিকার তাগিদে খেটে খাওয়া মানুষদের হরেক রকম জীবন কর্মের দৃশ্যও দেশের অন্য অঞ্চলের মানুষের থেকে একটু ভিন্ন।  

লোনা পানিতে ভেসে চিংড়ি পোনা সংগ্রহের দৃশ্য সবার নজর কাড়বে। কিন্তু সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা বা ব্যক্তিগত উদ্যোক্তাদের সদিচ্ছার অভাবে কাঙ্ক্ষিত পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে গড়ে ওঠেনি এটি। থাকা খাওয়ার সুব্যবস্থার অভাবে নিরাশ হতে হয় অনেক পর্যটককে। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় আধুনিক একটি পর্যটনকেন্দ্র গড়ে উঠলে কোটি টাকা রাজস্ব আয় হতো বলে স্থানীয়দের দাবি।

৪০ গেট বিশিষ্ট রেগুলেটর ও ক্লোজার ড্যামটি দেখতে বেশ আকর্ষণীয়।  ছবি: বাংলানিউজ

সোনাগাজী মুহুরী সেচ প্রকল্প ১৯৭৭-৭৮অর্থ বছরে শুরু হয়ে ফেনী জেলার সোনাগাজী উপজেলায় ১৯৮৫-৮৬ অর্থ বছরে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম এই সেচ প্রকল্পের নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়।  

ফেনী নদী, মুহুরী নদী এবং কালিদাস পাহালিয়া নদীর সম্মিলিত প্রবাহকে আঁড়ি বাঁধ নির্মাণের মাধ্যমে ৪০ ফোক্ট বিশিষ্ট একটি বৃহদাকার পানি নিয়ন্ত্রণ কাঠামো তৈরি করে জেলার ফেনী সদর, ছাগলনাইয়া, পরশুরাম, ফুলগাজী, সোনাগাজী এবং চট্টগ্রাম জেলার মিরসরাই উপজেলার কিয়দংশ এলাকায় বর্ষা মৌসুমে বন্যার প্রকোপ কমানো ও আমন ফসলে অতিরিক্ত সেচ সুবিধা দেওয়ার উদ্দেশ্যে নির্মিত হয়েছিল মুহুরী সেচ প্রকল্প। সিডা, ইইসি, বিশ্বব্যাংকের অর্থ সহায়তায় জাপানের সিমুজু কোম্পানি ১৬৮ কোটি টাকা ব্যয়ে এই সেচ প্রকল্প নির্মাণ করে। ফলে ২০,১৯৪ হেক্টর এলাকায় সেচ সুবিধা এবং ২৭,১২৫ হেক্টর এলাকা সম্পূরক সেচ সুবিধার আওতায় আসে।

শেখ আবদুল হান্নান নামের সোনাগাজীর বাসিন্দা বাংলানিউজকে বলেন, এলাকাটি সরকারি-বেসরকারি পৃষ্ঠপোষকতার মাধ্যমে পর্যটন কেন্দ্রের আওতায় এলে এলাকাবাসীর জীবন যাত্রার মান আরো উন্নত হতো এবং সরকারও লাভবান হতো।

সোনাগাজী উপজেলা চেয়ারম্যান জহির উদ্দিন মাহমুদ লিপটন বলেন, ঈদে দর্শনার্থীদের নিরাপত্তার জন্য ওই এলাকায় নিরাপত্তায় থাকবে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এছাড়াও এ এলাকাকে একটি পরিকল্পিত পর্যটন স্পট হিসেবে গড়ে তোলার পরিকল্পনাও রয়েছে সরকারের।  

যাওয়ার পথ
মুহুরী প্রজেক্ট এলাকায় যেতে হলে ফেনী শহরের ট্রাংক রোড় থেকে সিএনজিচালিত অটোরিকশা যোগে মহিপাল থেকে বাস যোগে সোনাগাজী জিরো পয়েন্টে যেতে হবে। অটোরিকশার ভাড়া ৪০ টাকা, আর বাস ভাড়া ৩০ টাকা। সোনাগাজী পৌর শহরের জিরো পয়েন্ট এলাকা থেকে অটোরিকশায় মুহুরী প্রজেক্ট এলাকার ফেনী রেগুলেটরে প্রতিজনে ভাড়া নেবে ২০ টাকা।  

বাংলাদেশ সময়: ০৬১৮ ঘণ্টা, জুন ০৫, ২০১৯
এসএইচডি/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।