ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

ঘুরে আসুন সাতছড়ি-রেমা-কালেঙ্গা

বদরুল আলম, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮২৯ ঘণ্টা, জুন ৫, ২০১৯
ঘুরে আসুন সাতছড়ি-রেমা-কালেঙ্গা ছবি: বাংলানিউজ

হবিগঞ্জ: ‘পাহাড় টিলা হাওর বন, হবিগঞ্জের পর্যটন’ স্লোগানকে সামনে রেখে এ জেলার ব্র্যান্ডিং করা হয়েছে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যকে ঘিরে।

অপরূপ নদী, হাওর-বাওড়, টিলা ও বিস্তীর্ণ জলাভূমিসহ প্রাকৃতিক নৈসর্গ ঘেরা এ অঞ্চলে রয়েছে অভয়ারাণ্যগুলোতে কাছে থেকে হরেক রকম বণ্যপ্রাণী দেখার সুযোগ। ঈদের ছুটিতে ঘুরতে চাইলে বেছে নিতে পারেন ইতিহাস আর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য সমৃদ্ধ এই জেলাকে।

এখানকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের প্রধান আকর্ষণ হচ্ছে সাতছড়ি জাতীয় উদ্যান ও রেমা-কালেঙ্গা বন্যপ্রাণী অভয়াশ্রম। এছাড়াও রয়েছে তেলিয়াপাড়া চা বাগান, রেমা-কালেঙ্গা বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য, ঐতিহাসিক কমলারানীর দিঘী, বিথঙ্গল রামকৃষ্ণ জিউড় আখড়া ও লক্ষ্মী বাওর জলাবনসহ রয়েছে ২৪টি চা বাগান।

সাতছড়ি জাতীয় উদ্যান
জেলার চুনারুঘাট উপজেলার রঘুনন্দন পাহাড়ে অবস্থিত এই উদ্যান। উদ্যানের কাছাকাছি রয়েছে নয়টি চা বাগান। এর পশ্চিম দিকে সাতছড়ি চা বাগান এবং পূর্ব দিকে চাকলাপুঞ্জি চা বাগান অবস্থিত।

সাতছড়ি জাতীয় উদ্যান।  ছবি: বাংলানিউজ

উদ্যানের অভ্যন্তরে টিপরা পাড়ায় একটি পাহাড়ি উপজাতির ২৪টি পরিবার বাস করে। এই ক্রান্তীয় ও মিশ্র চিরহরিৎ পাহাড়ি বনভূমি ভারতীয় উপমহাদেশ এবং উন্দো-চীন অঞ্চলের সংযোগস্থলে অবস্থিত। সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানে রয়েছে প্রায় ২শ’রও বেশি গাছপালা। এর মধ্যে শাল, সেগুন, আগর, গর্জন, চাপালিশ, পাম, মেহগনি, কৃষ্ণচূড়া, ডুমুর, জাম, জামরুল, সিধাজারুল, আওয়াল, মালেকাস, ইউক্যালিপটাস, আকাশমনি, বাঁশ, বেত-গাছ ইত্যাদির বিশেষ নাম করা যায়।

জীববৈচিত্র্য
এ উদ্যানে ১৯৭ প্রজাতির জীব-জন্তু রয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ২৪ প্রজাতির স্তন্যপায়ী, ১৮ প্রজাতির সরীসৃপ ও ছয় প্রজাতির উভচর। আরও আছে প্রায় ১৫০-২০০ প্রজাতির পাখি। এটি বাংলাদেশের একটি সংরক্ষিত বনাঞ্চল এবং পাখিদের একটি অভয়াশ্রম। বনে লজ্জাবতী বানর, উল্লুক, চশমা পরা হনুমান, কুলু বানর, মেছো বাঘ, মায়া হরিণ ইত্যাদি। সরীসৃপের মধ্যে সাপ, পাখির মধ্যে কাও ধনেশ, বনমোরগ, লালমাথা ট্রগন, কাঠ ঠোকরা, ময়না, ভিমরাজ, শ্যামা, ঝুটিপাঙ্গা, শালিক, হলুদ পাখি, টিয়া প্রভৃতির আবাস রয়েছে। এছাড়া গাছে গাছে আশ্রয় নিয়েছে অগণিত পোকামাকড়। এদের মধ্যে অন্যতম ঝিঁঝিঁপোকা।

উদ্যানের ভেতর সাতটি ছড়া বা ঝর্ণা রয়েছে যেখান থেকে এর নামকরণ করা হয়েছে সাতছড়ি। এছাড়াও রয়েছে ট্রি অ্যাডভেঞ্চার। যা দিয়ে উড়ে উড়ে এক গাছ থেকে যাওয়া যায় অন্য গাছে। ছড়ার পথে হাঁটতে হাঁটতে চারদিকে চোখ রাখলে দেখতে পাবেন বিভিন্ন প্রজাতির বৃক্ষরাজি ও নাম না জানা অসংখ্য লতাপাতা। উল্লেখযোগ্য বৃক্ষের মধ্যে- চাপালিশ, আউয়াল, কাঁকড়া, হারগাজা, হরতকি, পাম, লটকন, আমড়া, গামার, কাউ, ডুমর ইত্যাদি। এ বৃক্ষগুলোর ফল খেয়ে বনে বসবাসকারী প্রাণীরা বেঁচে থাকে।  

কীভাবে যাওয়া যায়
ঢাকা থেকে সড়ক পথে এর দূরত্ব ১৩০ কিলোমিটার। সিলেটের বাস অথবা ট্রেনে করে শায়েস্তাগঞ্জে নামতে হয়। সেখান থেকে এক ঘণ্টার মধ্যেই ছোট বড় বিভিন্ন ধরনের গাড়ি পাওয়া যায় সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানে যাওয়ার জন্য।

থাকার ব্যবস্থা
সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানে রয়েছে একটি স্টুডেন্ট ডরমেটরি। এতে ১৮ জন মানুষ থাকার ব্যবস্থা রয়েছে। একরাতের জন্য মাথাপিছু দিতে হয় ১৫০ টাকা। এছাড়াও এখানে রয়েছে ঘরোয়া পরিবেশের দু’টি রেস্টুরেন্ট। যেগুলোতে শহরের তুলনায় অনেক কম দামে পাওয়া যায় ভাতসহ বিভিন্ন ধরনের খাবার। এছাড়াও সাতছড়ি জাতীয় উদ্যান থেকে ২২ কিলোমিটার দূরে শ্রীকুটা বাজারে রয়েছে দুটি কটেজ। এগুলোতেও ১৫০-২০০ টাকার মধ্যে একজন রাত্রিযাপন করতে পারেন। সাতছড়ি বাজার থেকে শ্রীকুটায় যেতে সিএনজি অটোরিকশা ভাড়া ৩০ টাকা নেওয়া হয়।

ট্রি অ্যাডভেঞ্চার।  ছবি: বাংলানিউজ

রেমা কালেঙ্গা অভয়ারণ্য
হবিগঞ্জ জেলার চুনারুঘাট উপজেলায় ছয় হাজার হেক্টর আয়তনের রেমা কালেঙ্গা অভয়ারণ্যটি বিরল প্রজাতির পশু পাখিদের বিচরণ ভূমি। সীমান্তবর্তী রেমা কালেঙ্গা টাওয়ার থেকে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্য ও বনের দৃশ্য উপভোগ করা যায়।  

এ বনভূমির আয়তন ৬ হাজার ২২ হেক্টর, এ বনে ৬৩৮ প্রজাতির গাছপালা, ১৭ প্রজাতির উভয়চর প্রাণী, ১৮ প্রজাতির সাপ, ১৬৭ জাতের পাখি, ৩৭ জাতের স্তন্যপায়ী প্রাণী ও বিলুপ্ত প্রায় শকুন প্রজাতি রয়েছে।

অবস্থান
চুনারুঘাট উপজেলা সদর থেকে আনুমিক ১৩ কিলোমিটার পূর্ব-দক্ষিণে গাজীপুর ইউনিয়নের রাণীগাঁও এলাকায় এর অবস্থান।

এছাড়াও, হবিগঞ্জে রয়েছে অনেকগুলো দর্শনীয় স্থান। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- তেলিয়াপাড়া চা বাগান, ঐতিহাসিক কমলারানীর দিঘী, বিথঙ্গল রামকৃষ্ণ জিউড় আখড়া ও লক্ষ্মী বাওড় জলাবন। হবিগঞ্জ জেলা শহর থেকে এসব স্থানে সড়ক পথে যেতে আধাঘণ্টা থেকে দেড় ঘণ্টা পর্যন্ত সময় লাগে। তবে লক্ষ্মী বাওড় জলাবনে যেতে হলে গাড়ি করে বানিয়াচং উপজেলা সদরে যেতে হয়। তারপর প্রায় এক ঘণ্টার পথ যেতে হবে নৌকায়। বিথঙ্গলের আখাড়ায় যেতেও হবিগঞ্জ শহরের পার্শ্ববর্তী কালারডুবা এলাকা থেকে নৌকায় ঘণ্টা দেড়েকের পথ পাড়ি দিতে হয়।

হবিগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) ফজলুল জাহিদ পাভেল বাংলানিউজকে বলেন, প্রকৃতিক সৌন্দর্য ভরপুর হবিগঞ্জ জেলা। এছাড়াও রয়েছে ভাল যোগাযোগ ব্যবস্থা। যে কারণে এখানে এসে সহজেই ঘুরে যেতে পারবেন প্রকৃতি প্রেমীরা।

বাংলাদেশ সময়: ০৪২৭ ঘণ্টা, জুন ০৫, ২০১৯
এনটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।