দ্বিতীয় দফা বৈঠকের পর মঙ্গলবার (৪ জুন) রাত সাড়ে ১১টার দিকে বায়তুল মোকাররম মসজিদে ইসলামিক ফাউন্ডেশন কার্যালয়ের সভাকক্ষে সংবাদ সম্মেলনে চাঁদ দেখার বিষয়ে নতুন সিদ্ধান্ত নিয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে কমিটির পক্ষ থেকে এ কথা জানানো হয়।
নতুন সিদ্ধান্ত শোনার আগে যারা তারাবি নামাজ পড়ে ঘুমিয়ে পড়েছেন ও সেহরি খেয়ে রোজা রাখবেন, তাদের কীভাবে চাঁদ দেখা ও ঈদ উদযাপনের বিষয়টি জানানো হবে- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে এ কথা জানান কমিটির সদস্যরা।
মঙ্গলবার (৪ জুন) রাত ৯টার দিকে প্রথম দফায় চাঁদ দেখা না যাওয়ার ঘোষণার মাত্র দুই ঘণ্টা পরই সিদ্ধান্ত বদলায় জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটি। রাত ১১টার পর দ্বিতীয় দফায় প্রেস ব্রিফিংয়ে তারা জানান, দেশের আকাশে হিজরি শাওয়াল মাসের চাঁদ দেখা গেছে। তাই মঙ্গলবার শেষ হয়েছে রমজান মাস, বুধবারই (৫ জুন) উদযাপিত হবে পবিত্র ঈদুল ফিতর।
নতুন সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে ধর্ম প্রতিমন্ত্রী ও চাঁদ দেখা কমিটির সভাপতি শেখ মো. আব্দুল্লাহ বলেন, আজ (মঙ্গলবার) রাত ৯টায় বায়তুল মোকাররমের সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটির সভায় ১৪৪০ হিজরি সালের পবিত্র শাওয়াল মাসের চাঁদ দেখা সম্পর্কে সব জেলা প্রশাসন, ইসলামি ফাউন্ডেশনের প্রধান কার্যালয়, বিভাগীয় কার্যালয়, বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদফতর, মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্র ও দূর অনুসন্ধান প্রতিষ্ঠান থেকে পাওয়া তথ্য পর্যালোচনা করে, বাংলাদেশের কোথাও চাঁদ দেখা যায়নি বলে ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল।
তিনি বলেন, পরবর্তীতে রাত ১০টার পরে কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী ও ভুরিঙ্গামারী উপজেলা, লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার শতাধিক ব্যক্তি ওইদিন সন্ধ্যায় পবিত্র শাওয়াল মাসের চাঁদ দেখেছেন বলে সংবাদ পাওয়া যায়। এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসনের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা হয়। এমতাবস্থায়, বুধবার (৫ জুন) থেকে পবিত্র শাওয়াল মাসের গণনা শুরু হবে। ওইদিনই সারাদেশে পবিত্র ঈদুল ফিতর উদযাপিত হবে।
শেখ আব্দুল্লাহ বলেন, পবিত্র মাগরিবের নামাজের পরই চাঁদ দেখা যাওয়ার কথা। সে মতে, আমরা মাগরিবের নামাজের পর দেশের ৬৪ জেলায় চাঁদ দেখা কমিটির সঙ্গে যোগাযোগ করি। এসব এলাকার জেলা প্রশাসক, ইউএনওসহ খ্যাতনামা আলেম-ওলামারা চাঁদ দেখা কমিটিতে আছেন।
ধর্ম প্রতিমন্ত্রী বলেন, কোনো ব্যক্তিগত স্বার্থে নয়, শরিয়ত মোতাবেক কোরআন ও হাদিস অনুযায়ী যা উচিৎ, আমরা সেটাই আগে ঘোষণা দিয়েছিলাম। আর নতুন করে আমরা যে ঘোষণা দিচ্ছি, সেটাও শরিয়ত মোতাবেক।
তিনি বলেন, প্রথমদিকে চাঁদ দেখার খবরটি পাওয়া যায়নি। পরে রাত ১০টা ১৫ মিনিটে বিভিন্ন জায়গা থেকে এ খবর আসা শুরু হয়। ইতোমধ্যে অনেক জায়গায় তারাবি হয়ে গেছে, আমরাও বায়তুল মোকাররম মসজিদে তারাবি পড়ার পরই চাঁদ দেখার খবর পেয়েছি।
শেখ আব্দুল্লাহ বলেন, এ খবরগুলো অত্যন্ত সুন্দরভাবে যাচাই-বাচাই করার জন্য সচিব মহোদয়সহ চাঁদ দেখা কমিটির অন্য সদস্যরা আবার বৈঠকে বসি। সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে, বুধবার (৫ জুন) পবিত্র ঈদুল ফিতর উদযাপিত হবে।
যে শতাধিক মানুষ চাঁদ দেখেছেন, তারা কি রাত ১০টা পর দেখেছেন? এমন প্রশ্নের জবাবে ধর্ম প্রতিমন্ত্রী বলেন, চাঁদ যখন দেখা যাওয়ার কথা, তখনই দেখেছেন। আপনারা জানেন, শরিয়ত অনুযায়ী কেউ বললেই কিন্তু বিশ্বাস করা যায় না। সেটাকে যাচাই-বাছাই করতে হয়। চাঁদ যখন দেখা যায়, তখনই তারা দেখেছেন। কিন্তু, খবরটা পৌঁছাতে দেরি করেছেন। যেহেতু নেতিবাচক খবর ছিল, তাই এর সত্যতা যাচাই করতে এতক্ষণ সময় লেগেছে।
সারাদেশের সাধারণ মানুষ দুই ধরনের ঘোষণায় যে বিভ্রান্তিতে পড়লো, এর দায়ভার কে নেবে? এর জবাবে প্রতিমন্ত্রী বলেন, দায়ভার জনগণই নেবে। এখানে দায়ভারের কী আছে, আমি বুঝলাম না। আপনারা জিনিসটাকে প্যাঁচানোর চেষ্টা করছেন। আপনাদের উদ্দেশ্য কী? কী বলতে চান? আমি প্রশ্ন করি, আপনাদের উদ্দেশ্যটা কী?
অনেকে তারাবি নামাজ পড়ে ঘুমিয়ে পড়েছেন, বিশেষ করে বয়স্করা। তারা তো ভোররাতে উঠে সেহরি খাবেন। এর জন্য কী করবেন? এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কী করা উচিত? আপনাদের সাজেশন্স (পরামর্শ) কী?
ঘুমন্তরা এখন কীভাবে জানবে কালকে ঈদ? এর জবাবে শেখ আবদু্ল্লাহ পাল্টা প্রশ্ন করে বলেন, আমরা যে ঘোষণা দিয়েছিলাম, সেখানেই বসে থাকা উচিৎ ছিল?
এ সময় এক সাংবাদিক ভারত ও পাকিস্তানে চাঁদ দেখার তথ্য শুরুতেই পাওয়ার কথা জানালে ধর্ম প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমরা যা পেরেছি, যে খবরগুলো পেয়েছি, সেটাই করেছি। আপনাদের যেটা ভালো হয়, সেটা গ্রহণ করুন।
বাংলাদেশ সময়: ০৩০৮ ঘণ্টা, জুন ০৫, ২০১৯
এমইউএম/একে