প্রতিবছর বিশেষ করে ঈদ মৌসুমে পর্যটকদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে ওঠে লাউচাপড়া বিনোদন কেন্দ্রটি।
প্রকৃতির রূপ, লাবণ্য মনোমগ্ধকর ছোট-বড় অসংখ্য সবুজ পাহাড়ে ঘেরা বকশীগঞ্জের গারো পাহাড়।
জামালপুর জেলা থেকে ৫০ কিলোমিটার এবং বকশীগঞ্জ উপজেলা সদর থেকে ১২ কিলোমিটার উত্তরে ভারতের তুরা পাহাড়ের পাদদেশে সরকারি প্রায় ১০ হাজার একর জায়গাজুড়ে গারো পাহাড়।
প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্যের লীলাভূমি এ পাহাড়ি বনভূমিতে জামালপুর জেলা পরিষদ ১৯৯৬ সালে ২৬ একর জায়গাজুড়ে গারো পাহাড়ের চূড়ায় নির্মাণ করেছে ক্ষণিকা নামে পর্যটন কেন্দ্রটি।
জেলার একমাত্র বিনোদন কেন্দ্রটি বকশীগঞ্জের কামালপুর মিদ্যাপাড়া মোড় থেকে লাউচাপড়া পর্যটন কেন্দ্র পর্যন্ত ৬ কিলোমিটার পাহাড়ি সড়কটি শেরপুর জেলা সড়ক ও জনপথ বিভাগের আওতাধীন।
সম্প্রতি প্রশস্ত রাস্তা ও বিদ্যুতায়নের ফলে ভোগান্তি অনেকটা কমে গেছে।
এ পর্যটন কেন্দ্রের ভেতরে যেকোনো যানবাহন রাখার ক্ষেত্রে প্রবেশ মূল্য দিতে হয় ৪০ টাকা। আর জনপ্রতি প্রবেশ মূল্য ১০ টাকা।
এ গারো পাহাড়ে এসে দেখা যাবে, হাজারো প্রশান্তির বৃক্ষরাজি পাখিদের কোলাহল, ঝরনার কলতানে মুখরিত এ পর্যটন কেন্দ্রে ১৫০ ফুট উঁচু পাহাড়ের চূড়ায় নির্মাণ করা হয়েছে ৬০ ফুট সুরম্য পর্যবেক্ষণ টাওয়ার, টুরিস্ট কমপ্লেক্সসহ নানা স্থাপনা।
টাওয়ারে দাঁড়িয়ে চারদিকে তাকালে চোখ পড়ে কাছের ও দূরের আকাশ ছোঁয়া পাহাড়ের উঁচু উঁচু চূড়া। এ যেন সবুজ গালিচার মোড়া প্রকৃতি। এসব পাহাড়ের নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে ছোট-বড় স্বচ্ছ পানির ঝরনার ধারা। শোনা যায়, অসংখ্য পাখির কলকাকলি। কোথাও গহীন জঙ্গল আবার কোথাও দেখা যায়, বৃক্ষহীন ন্যাড়া পাহাড়। আরো দেখা যায়, ওপারে সীমানা পেরিয়ে ভারতের মেঘালয়ের অসংখ্য পাহাড়। ভারত সীমান্ত পাহাড়ের কূলে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের অপূর্ব দর্শন। এছাড়া হেঁটে চারদিকে ঘুরে পাহাড়ের উঁচু-নিচু ও আঁকা-বাঁকা পথ চলতে চলতে দেখা যাবে সৌন্দর্যে মাখা বিস্তৃত অঞ্চল। এসব দৃশ্যাবলী দেখে মনে হবে কোনো নিপুন চিত্রকর তার রঙের ভাণ্ডার উজার করে পরম যত্নে অঙ্কন করেছেন মনোলোভা আল্পনা।
পাহাড়ের বিরাট এলাকাজুড়ে রয়েছে আকাশমনি, বেলজিয়াম, ইউক্যালিপটাস, উডলট, কড়ই ছাড়াও চেনা-অচেনা নানা জাতের লতাগুল্ম আর বাহারি গাছ গাছালির সৌন্দর্য মণ্ডিত সবুজের সমারোহ।
মাঝে মধ্যে বন্য হাতির দেখাও মিলে এ পাহাড়ে।
লাউচাপড়া , সাতানিপাড়া , দিঘলাকোনা , গারোপাড়া, বালিজোড়া, মেঘাদল শোখনাথপাড়া প্রভৃতি গ্রামের গহীন গারো পাহাড়ের চূড়ায় কিংবা পাশের কুল ঘেঁষে সবুজের আড়ালে খড়ের অথবা মাটির ঘরে বসবাসরত গারো কোচদের চোখে পড়বে। আর এরই টানে অসংখ্য পর্যটক শীতের কুহেলিকা আর গানের টানে এখানে এসে ভিড় জমায় প্রতিবছর।
শীত মৌসুমের প্রতিদিন অসংখ্য অতিথিদের পদভারে নির্ভিত অঞ্চলটি হয়ে ওঠে উৎসবমুখর।
এ বিশাল গারো পাহাড়ে রয়েছে নূড়ি পাথর, বোল্ডার পাথর, চিনামাটিসহ অনেক খনিজ সম্পদ। পাহাড়ি সম্পদ আহরণে সরকারি বা বেসরকারি সংস্থার উদ্যোগে বিশাল আকারের শিল্প গড়ে ওঠার উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে। তবে পাশেই কামালপুর স্থলবন্দর থাকলেও পর্যটন কেন্দ্রে বিদ্যুৎ ও বিশুদ্ধ খাবার পানি পর্যাপ্ত ব্যবস্থা না থাকায় প্রতিনিয়ত ভোগান্তির শিকার হচ্ছে পর্যটকরা।
একবার এলে ফিরে যাওয়ার ইচ্ছাটাই অনেক সময় হারিয়ে ফেলে দর্শনার্থীরা। বিনোদন কেন্দ্র দর্শন শেষে সঙ্গেই রয়েছে কামালপুর স্থলবন্দর। সেখান থেকে দেখা যায় ভারত।
লাউচাপড়া থেকে সামন্য কিছু দূরেই কামালপুরেই রয়েছে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের অন্যতম ১১নং সেক্টরের সদর দফতর। মুক্তিযুদ্ধে স্মৃতি বিজড়িত সম্মুখ সমর যুদ্ধে স্থান ও স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম জাতীয় পতাকা উত্তোলনের স্থানও দেখা যাবে অনায়াসেই।
যেভাবে আসবেন লাউচাপড়া বিনোদন কেন্দ্রে:
ঢাকা থেকে বাসে করে শেরপুর অথবা জামালপুর আসতে হবে। জনপ্রতি ভাড়া লাগবে আনুমানিক ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা। দুই জায়গা থেকেই লোকাল বা সিএনজিচালিত অটোরিকশায় আসতে হবে বকশীগঞ্জে। ভাড়া ২০ থেকে ৫০ টাকা। তারপর অটোরিকশাতে ২০ টাকা খরচ হবে পর্যটন কেন্দ্রে আসতে।
বাংলাদেশ সময়: ১৬২৩ ঘণ্টা, জুন ০৪, ২০১৯
আরবি/