মঙ্গলবার রাজধানীর গাবতলী বাস টার্মিনালে গিয়ে দেখা গেছে এমন চিত্র।
পরিবহন শ্রমিকদের মতে, এবারে ঈদযাত্রায় যাত্রীর চাপ ছিল শুধুমাত্র সোমবারেও।
এ বিষয়ে কুড়িগ্রামগামী শ্যামলী পরিবহনের চালক ইব্রাহীম বলেন, আমাদের কোম্পানি থেকে কোনো ঈদ বোনাস দেওয়া হয় না। কোম্পানিও জানে আমরা সিটের বাইরে অতিরিক্ত যাত্রী নিচ্ছি। এটাই আমাদের ঈদ বোনাস। এবার ঈদের অনেকদিন আগ থেকেই হালকা হালকা যাত্রীর চাপ ছিল। পরিবার পরিজনদের সবাই আগেই বাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছে। তাতে কোম্পানির লাভ হইছে কিন্তু আমাদের লোকসানই হইছে। আর দিনে বা রাতে ৪৮ ঘণ্টায় একটাই ট্রিপ পাই। যদিও ঈদে ২৪ ঘণ্টায় একটা পাওয়া যায়। তাহলে তাতে আর কত টাকা উপার্জন হয়। সেখানে আবার হেলপার ও সুপারভাইজার থাকে। সবমিলিয়ে এবারে ঈদটা আমাদের ভালো যাচ্ছে না। গাবতলী থেকে যেসব বাস দূরপাল্লার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাচ্ছে তাদের মধ্যে হাতে গোনা কয়েকটা পরিবহনের টিকিট কাউন্টার থেকে নির্ধারিত ভাড়া নেওয়া হয়। সেখানেও ঈদ উপলক্ষে কোম্পানিগুলোর নির্ধারিত ভাড়া যা অন্যান্য সময়ের চেয়ে ১শ টাকা বেশি ভাড়া নেওয়া হচ্ছে। তবে সেগুলোর বেশিরভাগ টিকিট অগ্রিম বিক্রি হয়ে গেছে।
এ বিষয়ে এসপি গোল্ডেন লাইন পরিবহনের কাউন্টার ম্যানেজার মেহেদী বাংলানিউজকে বলেন, অন্যান্যবার আমাদের ঈদের আগের দু’দিন অতিরিক্ত বাস থাকে। এবার তা নেই। কারণ যাত্রী নেই। যাত্রী হলে বাস প্রস্তুত আছে। এছাড়া অন্যান্য পরিবহনে বাসের সামনেই টিকিট বিক্রি করা হচ্ছে। সেখানে অনেক বেশি বাড়িয়ে ভাড়া নেওয়া হচ্ছে।
সাতক্ষীরাগামী মামুন পরিবহনের যাত্রী আরিফ এ বিষয়ে বলেন, অন্যান্য সময়ে ভাড়া সর্বোচ্চ ৫৫০ টাকা থাকে। এখন তা নিচ্ছে ৮৫০ টাকা করে। অনেকের কাছ থেকে ৯০০ পর্যন্ত রেখেছে। এক্ষেত্রে আমাদের কিছু করার নেই। বাড়িতে যেতে পারলেই শান্তি।
এদিকে সোমবার গাবতলীতে বিআরটিএ’র ভিজিলেন্স টিমের চালানো ভ্রাম্যমাণ আদালতের প্রভাব মঙ্গলবারও লক্ষ্য করা গেছে।
জানা গেছে, সোমবার সিট ও বাসের মোড়ার আসনের ভাড়া একই ছিল। ভ্রাম্যমাণ আদালতের জরিমানার কারণে মঙ্গলবার মোড়ার ভাড়া সিটের ভাড়ার অর্ধেক পরিমাণে রাখা হচ্ছে। যদিও আইনানুসারে বাসে মোড়ায় যাত্রী নিয়ে যাওয়া বেআইনি। তবুও ঈদ উপলক্ষে বিষয়টি যাত্রীরাও সহজে মেনে নেন। কেননা যাত্রীর তুলনায় বাসের সংখ্যা অপ্রতুল।
তবে অতিরিক্ত ভাড়ার ব্যাপারে গাবতলী বাস টার্মিনালের অবস্থিত ভ্রাম্যমাণ ভিজিলেন্স টিমের ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে তারা বলেন, তাদের কাছে কোনো লিখিত অভিযোগ নেই। তাছাড়া কেউ এসে মৌখিক অভিযোগ করলেও তারা ব্যবস্থা গ্রহণ করেন।
এ বিষয়ে যাত্রীদের মতামত, আমরা অভিযোগ করলে ওদের জরিমানা হবে। তাতে ওই বাস হয়তো আর যাবে না। তাতে আমাদের বাড়ি যেতে ভোগান্তি বাড়বে। এর চেয়ে দামাদামি করে যত কম ভাড়ায় বাড়ি যাওয়া যায় ততই আমাদের জন্য সুবিধা। এদিকে গাবতলী থেকে পাটুরিয়া ঘাটের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাওয়া রাজধানীতে চলাচলরত মিনিবাসগুলো যাত্রী বুঝে নিচ্ছে ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা। যেসব বাসের এই মহাসড়কের রুট পারমিট নেই এবং বাসের ফিটনেসও নেই।
গাবতলী থেকে বাবু বাজার রুটে চলাচলকারী প্রত্যয় পরিবহনের এমন একটি বাস যাচ্ছে পাটুরিয়া ঘাটে। বাসটির হেলপার রশিদ বাংলানিউজকে বলেন, আমরা দিনে একটাই ট্রিপ দিতে পারি। রাস্তায় অনেক জ্যাম। আর প্রতিটি স্টপেজে রয়েছে স্থানীয় নেতাদের চাঁদাবাজি। সেখানে অনেক টাকা দিতে হয়। ঘাটে পৌঁছানো মাত্র ২৫০ টাকা দেওয়ার নিয়ম থাকলেও আমাদের দিতে ৪০০ টাকা। সবমিলিয়ে আমাদের অতিরিক্ত ভাড়া নেওয়া ছাড়া উপায় নেই।
বাংলাদেশ সময়: ১৩০৭ ঘণ্টা, জুন ০৪, ২০১৯
এমএএম/এএটি