ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

ঈদের ছুটি কাটাতে পারেন দিনাজপুরে

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯০৮ ঘণ্টা, জুন ৩, ২০১৯
ঈদের ছুটি কাটাতে পারেন দিনাজপুরে দিনাজপুরের পার্ক ও প্রাচীন দর্শনীয় স্থান

দিনাজপুর: ঈদ আনন্দকে পরিবার ও আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে ভাগ করে নিতে ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থান থেকে নিজ গ্রামের বাড়িতে ছুটে আসছে মানুষ। ঈদের ছুটিতে আরও একটু বেশি আনন্দ দেয় পরিবার ও আপনজনদের নিয়ে বিভিন্ন পার্কে ঘুরে বেড়াতে। তাইতো ঈদের ছুটি কাটাতে পারেন দিনাজপুরে। কেননা, জেলাটি ধান-চাল ও লিচুর জন্য খ্যাতি অর্জন করলেও বিভিন্ন পার্কে ভরা। এর মধ্যে রয়েছে দেশের নামকরা পার্কগুলোর অন্যতম ‘স্বপ্নপুরী’। একইসঙ্গে পার্ক ছাড়াও রয়েছে অনেক প্রাচীন দর্শনীয় স্থান। 

পিকনিক স্পট স্বপ্নপুরীর মূল গেট
স্বপ্নপুরী: 

দিনাজপুরের নবাবগঞ্জ উপজেলার আফতাবগঞ্জে স্বপ্নপুরী পার্ক। প্রায় ৩০০ একর জমির ওপর নির্মিত এ পার্কে ঘুরে দেখার মতো অনেক কিছু রয়েছে।

এখানে বিভিন্ন রাইডস, চিড়িয়াখানা, রেস্ট হাউজ, বাগান, হ্রদ, বিভিন্ন প্রজাতির মাছ, ‘রংধনু’ আর্ট গ্যালারি, ‘মহামায়া ইন্দ্রজাল’ নামে জাদুর গ্যালারি এবং কেন্দ্রীয় পিকনিকের একটি কেন্দ্র রয়েছে।

এছাড়া রয়েছে কেবলকার, ঘোড়ার গাড়ি, চিড়িয়াখানা, কৃত্রিম চিড়িয়াখানা, কৃত্রিম মৎস্য জগত, রেস্তোরাঁ। বিনোদনের জন্য রয়েছে ছোট রাইডস। কৃত্রিম লেকে স্পিডবোটে চড়ে নিতে পারেন মজার অভিজ্ঞতা। প্রাণিজগতের এমি, মোরাল, ডাইনোসর এবং আরও অনেক অন্যান্য প্রাণীর মতো কৃত্রিম মূর্তিও রয়েছে। যে কেউ চাইলেই পরিবারসহ কৃত্রিম প্রাকৃতিক এ সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারেন।

যাবেন যেভাবে
দিনাজপুর থেকে প্রায় ৫৩ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত স্বপ্নপুরী পার্ক। দিনাজপুর শহর থেকে নিজস্ব গাড়িতে করে যেতে ফুলবাড়ী উপজেলা দিয়ে নবাবগঞ্জ উপজেলার আফতাবগঞ্জে যেতে পারেন। আর বাসে করে যেতে দিনাজপুর শহরের ফুলবাড়ী বাসস্ট্যান্ডে গিয়ে ফুলবাড়ী উপজেলার ঢাকা মোড় পর্যন্ত যেতে হবে। জনপ্রতি ৫০ টাকা করে ভাড়া নেবে। ফুলবাড়ীর ঢাকা মোড়ে নেমে ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক ও চার্জারভ্যান সরাসরি স্বপ্নপুরী গেটে নামিয়ে দেবে। জনপ্রতি ভাড়া নেবে ৩০ টাকা। আর স্বপ্নপুরীর মূল গেট অতিক্রম করতে টিকিটে মূল্য পরিশোধ করতে হবে জনপ্রতি ৫০ টাকা।
রামসাগর জাতীয় উদ্যানের মূল গেট রামসাগর জাতীয় উদ্যান:
এটি দিনাজপুর শহর থেকে মাত্র ৭ কিলোমিটার দূরে সদর উপজেলার আউলিয়াপুর ইউনিয়নের অবস্থিত। রামসাগরের নামকরণের পেছনে অনেক পুরাতন ইতিহাস রয়েছে। রামসাগর উদ্যানের প্রধান আকর্ষণ হলো বিশাল রামসাগর দিঘি। তটভূমিসহ রামসাগরের আয়তন ৪ লাখ ৩৭ হাজার ৪৯২ মিটার, দৈর্ঘ্য ১ হাজার ৩১ মিটার ও প্রস্থ ৩৬৪ মিটার। গভীরতা গড়ে প্রায় ১০ মিটার। পাড়ের উচ্চতা ১৩ দশমিক ৫ মিটার। দিনাজপুরের বিখ্যাত রাজা রামনাথ (রাজত্বকাল: ১৭২২-১৭৬০ খ্রিস্টাব্দ) পলাশীর যুদ্ধের আগে (১৭৫০-১৭৫৫ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে) এ রামসাগর দিঘি খনন করা হয়েছিল। সেই সময় দিনাজপুরে পানির তীব্র সংকট দেখা দেয়। তারই প্রেক্ষিতে ১৫ লাখ শ্রমিক নিয়োগ করে দিঘিটি খনন করা হয়। দিঘি খননের পরও পানি পাওয়া যায়নি। তারপর বিখ্যাত রাজা রামনাথ একদিন স্বপ্নে দেখেন, তিনি যদি খনন করা দিঘিতে নামেন তাহলে সেটি পানিপূর্ণ হবে। তারপর রাজা দিঘিটিতে নেমে পড়েন। নামার পরপরই দিঘিটি পানিপূর্ণ হয় এবং রাজা দিঘির পানিতে ডুবে মারা যান। তারপর থেকে এখন পর্যন্ত দিঘিটির পানি শুকায়নি। তারই নামানুসারে দিঘিটির নামকরণ করা হয় রামসাগর।  

যেভাবে যাবেন
নিজস্ব পরিবহনে করে যেতে দিনাজপুর শহরের বড়ময়দানের সামনের রাস্তা দিয়ে পুলহাট-সিকদারহাট-চেরাডাঙ্গী মোড়ের সামনে দিয়ে যেতে হবে। আর অন্যান্য পরিবহনে করে যেতে প্রথমে দিনাজপুর বড়মাঠের মাইক্রো স্ট্যান্ডের সামনে আসতে হবে। সেখান থেকে অটোরিকশা বা টেম্পু করে সরাসরি রামসাগর মোড়ে নামতে হবে। জনপ্রতি ভাড়া দিতে হবে ২০ থেকে ২৫ টাকা। রামসাগর মোড় থেকে পশ্চিম দিকে মাত্র ২০০ গজ হাঁটলে আপনি রামসাগর জাতীয় উদ্যানের মূল গেটের সামনে পোঁছে যাবেন। মূল গেটে জনপ্রতি ১০ টাকা করে নেওয়া হবে। রামসাগর জাতীয় উদ্যানে ১টি চিড়িয়াখানা রয়েছে। সেখানে চিত্রা হরিণ, বানর, বিভিন্ন ধরনের পাখি, অজগর সাপ রয়েছে। এছাড়াও সবচেয়ে আকর্ষণ হলো ২টি বিলুপ্ত প্রায় নীলগাই রয়েছে। বাংলাদেশে বর্তমানে ২টি নীলগাই রয়েছে।
সিংড়া শাল বনের ভেতরের দৃশ্য
বীরগঞ্জ সিংড়া শাল বন ও জাতীয় উদ্যান:

এটি দিনাজপুরের বীরগঞ্জ উপজেলার ভোগনগর ইউনিয়নে অবস্থিত। এ উদ্যানে বিভিন্ন প্রজাতির বৃক্ষ যেমন শাল, বেত, বাঁশ, শিমুল, শিশু, সোনালু দেখতে পাওয়া যায়। বিশাল আকৃতির বনটি পরিদর্শন করতে চাইলে আপনাকে দিনাজপুর থেকে যেতে হবে প্রায় ৪০ কিলোমিটার।  

যেভাবে যাবেন
সরাসরি নিজস্ব পরিবহনে করে যেতে পারেন আপনি। এছাড়াও বাসে করে যেতে দিনাজপুর কেন্দ্রীয় বাসস্ট্যান্ড বা সরকারি কলেজ মোড় থেকে পঞ্চগড়মুখী বাসে উঠতে হবে। গন্তব্য হবে বীরগঞ্জ উপজেলার বটতলী মোড়। জনপ্রতি ৫০/৫৫ টাকা ভাড়া নেবে। বটতলী মোড়ে নেমে অটোভ্যানে করে সিংড়া ফরেস্টে যেতে হবে। জনপ্রতি ১৫ টাকা করে খরচ হবে।  
ঐতিহাসিক কান্তজিউ মন্দির
ঐতিহাসিক কান্তজিউ মন্দির:

দিনাজপুরের কাহারোল উপজেলার সুন্দরপুর ইউনিয়নে এ মন্দির অবস্থিত। মন্দিরের উত্তর দিকের ভিত্তিবেদীর শিলালিপি থেকে জানা যায়, তৎকালীন দিনাজপুরের মহারাজা জমিদার প্রাণনাথ রায় তার শেষ বয়সে মন্দিরের নির্মাণ কাজ শুরু করেন। ১৭২২ খ্রিস্টাব্দে তার মৃত্যুর পরে তার শেষ ইচ্ছা অনুযায়ী তার পোষ্যপুত্র মহারাজা রামনাথ রায় ১৭৫২ খ্রিস্টাব্দে মন্দিরটির নির্মাণ কাজ শেষ করেন। শুরুতে মন্দিরের চূড়ার উচ্চতা ছিল ৭০ ফুট। ১৮৯৭ খ্রিস্টাব্দে মন্দিরটি ভূমিকম্পের কবলে পড়লে এর চূড়াগুলো ভেঙে যায়। মহারাজা গিরিজানাথ মন্দিরের ব্যাপক সংস্কার করলেও মন্দিরের চূড়াগুলো আর সংস্কার করা হয়নি।  

যেভাবে যাবেন
নিজস্ব পরিবহনে করে কান্তজিউ মন্দিরে যেতে পারেন। অথবা দিনাজপুর কেন্দ্রীয় বাসস্ট্যান্ড বা সরকারি কলেজ মোড় থেকে পঞ্চগড়মুখী বাসে উঠতে হবে। গন্তব্য হবে কান্তনগর মোড়। জনপ্রতি বাস ভাড়া ৩০ টাকা। কান্তনগরে নেমে প্রায় ১ কিলোমিটার হাঁটলে কান্তজিউ মন্দিরে পোঁছে যাবেন। এছাড়া চার্জারভ্যানেও যেতে পারেন। জনপ্রতি ভাড়া নেবে ১০ টাকা।  
ঐতিহাসিক নয়াবাদ মসজিদ
ঐতিহাসিক নয়াবাদ মসজিদ:

আপনি যদি কান্তজিউ মন্দিরে গিয়ে থাকেন তাহলে নয়াবাগ মসজিদটি থেকে বেশি দূরে নয়। মন্দির থেকে মাত্র দেড় কিলোমিটার দূরে এর অবস্থান। মসজিদের প্রবেশের মূল দরজার ওপর স্থাপিত ফলক থেকে জানা যায়, এটি সম্রাট দ্বিতীয় শাহ আলমের রাজত্বকালে ২ জৈষ্ঠ্য, ১২০০ বঙ্গাব্দে (ইংরেজি ১৭৯৩ সালে) নির্মাণ করা হয়। সেসময় জমিদার ছিলেন রাজা বৈদ্যনাথ। যিনি ছিলেন দিনাজপুর রাজ পরিবারের সর্বশেষ বংশধর।  

এলাকার অধিবাসীদের থেকে জানা যায়, ১৮ শতকের মাঝামাঝিতে কান্তনগর মন্দির তৈরির কাজে আগত মুসলমান স্থপতি ও কর্মীরা এ মসজিদটি তৈরি করেন। তারা পশ্চিমের কোনো দেশ থেকে এসে নয়াবাদে বসবাস শুরু করে এবং তাদের নিজেদের ব্যবহারের জন্য এ মসজিদটি তৈরি করে। তিন গম্বুজ বিশিষ্ট মসজিদটির চার কোনে ১২ দশমিক ৪৫ মিটার ও ৫ দশমিক ৫ মিটার আকারের চারটি অষ্টভুজ মিনার রয়েছে। দেয়ালগুলোর পুরুত্ব ১ দশমিক ১০ মিটার। উত্তর ও দক্ষিণের দেয়ালে একটি করে জানালা রয়েছে। পশ্চিম পাশের দেয়ালে মোট তিনটি মিম্বার রয়েছে, যেগুলো মসজিদের তিনটি প্রবেশ দরজা বরাবর তৈরি করা হয়েছে। মাঝের মিম্বারটি আকারে বড় (উচ্চতা ২৩০ মিটার এবং প্রস্থ ১ দশমিক ৮ মিটার) এবং অপর দু’টি মিম্বার একই আকারের।

মসজিদটি তৈরির সময় যেসব টেরাকোটা বা পোড়ামাটির কারুকার্য ব্যবহার করা হয়েছিল তার অধিকাশংই এখন নেই এবং যেগুলো রয়েছে সেগুলোও সম্পূর্ণ নেই। এখানে বর্তমান মোট ১০৪টি টেরাকোটা অবশিষ্ট রয়েছে। এগুলো আয়তত্রোকার এবং আকার ০ দশমিক ৪০ মিটার ও ০ দশমিক ৩০ মিটার। মসজিদটির পাশে একটি কবর রয়েছে। তবে কবর বা মসজিদে কোনো অংশেই এটি সম্পর্কিত কোনো তথ্য দেওয়া নেই। তবে কথিত আছে যে, এটি মসজিদের কোনো নির্মাণ শ্রমিকের কবর।

ঐতিহাসিক রাজবাড়ী:
দিনাজপুর শহরের রাজবাড়ী গ্রামে এটি অবস্থিত। দিনাজপুর যেসব রাজা ছিলেন, তারা এ রাজবাড়ীতেই থাকতেন। এখানে বহু প্রাচীন ভবন রয়েছে। এছাড়াও রাজবাড়ীতে রয়েছে রাণীপুকুর। স্থানীয়দের ভাষ্য অনুযায়ী- এই রাণীপুকুরে গোসল করার সময় পুকুরের পানিতে ডুবে মারা যান রাণী। রাজবাড়ীর পেছনেই রয়েছে সুখ সাগর পার্ক। এ পার্কের পাশে গড়ে তোলা হয়েছে শিশুদের চিত্ত বিনোদনের জন্য অনেক রাইট। এছাড়াও সুখ সাগরে পানিতে ভ্রমনণের জন্য রয়েছে ১টি বোর্ড।  

দিনাজপুর সদর উপজেলার অন্যান্য পার্কগুলো:
দিনাজপুর শহরের গোর-এ শহীদ বড়ময়দানে এশিয়া মহাদেশের সবচেয়ে বড় মিনার, বড়মাঠের অন্য প্রান্তে শিশুপার্ক ও বড়ময়দানের হেলিপ্যাড মাঠ, পুনর্ভবা নদীর চরের ওপর নির্মিত হয়েছে প্রমদতরী ও বাগান বিলাশ নামে ২টি পার্ক। এছাড়াও দিনাজপুর শহরের বাঙ্গীবেটা ঘাটের পাশেই গড়ে উঠেছে দিনাজপুর সিটি পার্ক।  

বিরল উপজেলার ছোট পার্কগুলো:
বিরল উপজেলার সদরে রয়েছে কড়াই বিল, কাঞ্চন মোড়ে নতুন নির্মাণ করা হয়েছে জীবন পার্ক। এছাড়াও রয়েছে ঢেড়াপাটিয়ায় এলজিইডির পার্ক।  

খানসামা উপজেলায় পার্ক ও ঐতিহ্য স্থানগুলো:
খানসামা উপজেলা সদরে একটি পার্ক রয়েছে। এছাড়াও রয়েছে অতিপ্রাচীন আওকড়া মসজিদ।  

বাংলাদেশ সময়: ১৫০৫ ঘণ্টা, জুন ০৩, ২০১৯
এসআরএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।