ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

ইতিহাসের অংশ তারাও

শাওন সোলায়মান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪২৫ ঘণ্টা, জুন ২, ২০১৯
ইতিহাসের অংশ তারাও পদ্মাপাড়ে সেতু নির্মাণকাজে ব্যস্ত শ্রমিকরা। ছবি: ডিএইচ বাদল

পদ্মাসেতু প্রকল্প এলাকা ঘুরে: ২০১৪ সালে নির্মাণ কাজ শুরু হওয়ার পর পূর্ণতা পেতে যাচ্ছে বাংলাদেশের গর্বের পদ্মা বহুমুখী সেতু। প্রায় দুই কিলোমিটার অংশ দৃশ্যমান হওয়া সেতুটির ওপর দিয়ে যানবাহন ও ট্রেন চলাচলের দৃশ্য দেখা যেন এখন সময়ের ব্যাপার। দেশের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় এ প্রকল্প বাস্তবায়নে নকশাকার এবং নির্মাতা প্রতিষ্ঠান হিসেবে যাদের নামই আগে আসুক না কেন, ইতিহাসের অংশ হয়ে থাকবেন সাধারণত শ্রমিকেরা।

৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এ বহুমুখী সেতু নির্মাণ করছে চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেড। সেতু নির্মাণ কাজে নেতৃত্ব দিচ্ছেন চীন এবং বাংলাদেশের স্থপতি এবং প্রকৌশলীরা।

তবে প্রকল্প বাস্তবায়নে বিভিন্ন বিভাগে কাজ করছেন প্রায় চার হাজার সাধারণ শ্রমিক।  

দেশ ও জাতির জন্য গর্বের এই ইতিহাসের অংশ এবং সাক্ষী হতে পেরে বেশ গর্বিত ও আনন্দিত এখানকার শ্রমিকেরা। সেতু নির্মাণে সরাসরি অবদান রাখতে পেরে বেশ পুলকিত বোধ করেন এখানকার কর্মচারীরা।

কথা হয় সেতু নির্মাণ প্রকল্পে কর্মরত বেশ কয়েকজন শ্রমিকের সঙ্গে। জানা যায়, লোডিং, ঢালাই, পাইলিংয়ের মত ভারী কনস্ট্রাকশনের কাজ থেকে শুরু করে প্রকল্প এলাকার বিভিন্ন অংশের দেখভালে কাজ করেন তারা। আবার প্রয়োজন হলে এলাকার সৌন্দর্যবর্ধন বা রঙের কাজও করেন এখানকার শ্রমিকেরা।  

প্রকল্প এলাকার বিভিন্ন ব্লক ঘুরে দেখা যায়, সেতু নির্মাণ কাজে কয়েক বছর ধরে কাজ করা শ্রমিক আছেন এখানে। আবার ২০১৪ সালের ৭ ডিসেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে পদ্মা সেতুর কাজ শুরু হওয়ার সময় থেকে কাজ করছেন; আছেন এমন শ্রমিকও। কেউ কেউ আছেন যারা প্রকল্পে কাজ শুরু করেছেন বেশিদিন হয়নি। এদের কারও স্থায়ী নিবাস মুন্সীগঞ্জের লৌহজংয়ে; আবার কেউ কেউ এসেছেন অনেক দূরের জেলা থেকেই।  

শুরু থেকেই প্রকল্পে কাজ করছেন গাইবান্ধার সদর উপজেলার বাসিন্দা মোহাম্মদ মকবুল। প্রকল্পের অদূরে দোহার উপজেলার শ্রীনগরে ভাড়া বাসায় পরিবার-পরিজন নিয়ে থাকেন মকবুল। পদ্মাসেতুর মতো প্রকল্পে কাজ করার অনুভুতি জানতে চাইলে তিনি বাংলানিউজকে বলেন, প্রকল্পের শুরু থেকেই কাজ করছি। এটা দেশের একটা গর্বের জিনিস। এখানে কাজ করছি ভাবতে ভালোই লাগে। শেষ পর্যন্ত কাজ করে যেতে পারলে আরও ভালো লাগবে।  

প্রায় চার বছর ধরে প্রকল্পে কাজ করছেন শ্রীনগরের বাসিন্দা মোহাম্মদ রুবেল। তিনি বলেন, এইডা অনেক বড় কাম (কাজ)। ভালাই লাগে। বিভিন্ন জেলার থিকা মানুষ আসে। সবার সাথে মিলজুল কইরা কাজ করি। তবে ছুটি পাওন যায় না। দেহন যায়, ২৬ দিন কাজ করলে ৪-৫ দিন ছুটি দেয়। তবুও ভালা লাগে কাজ করতে।  

দোহারের আরেক শ্রমিক মিঠুন দাস। ‘বড় স্যার’দের থেকে অনেক কিছু শিখতে পারছেন বলে জানান এই শ্রমিক। মিঠুন বলেন, এখানে কাজ করতে আনন্দই লাগে। সারাদিন সবাই মিলে হাসিখুশির মধ্যেই কাজ শেষ হয়। বড় স্যাররা আছেন। তাদের কাছে অনেক কিছু শিখি। অনেক সময় চীনারাও আমাদের কিছু বলেন। না বুঝলে স্যাররা বুঝিয়ে দেন। ভালোই লাগে।  

প্রকল্পে পিয়ারের কাজে নিয়োজিত মোহাম্মদ আতিক বলেন, এই সেতুতো পুরো দেশের জন্য। আমরাতো সাধারণ কর্মচারী। আমাদের কথা যে কেউ বলবে না বা মনে রাখবে না তাতো জানিই। কিন্তু আমরাতো জানি যে, আমরা কাজ করেছি এখানে। এই সেতুর ওপর দিয়ে যেদিন গাড়ি চলবে সেদিন গর্বে আমার বুকটাও ভরে যাবে। কেউ মনে রাখুক আর না রাখুক, ইতিহাসের অংশতো আমরাও।  

যদি জিজ্ঞেস করা হয় ভারতের বিখ্যাত তাজমহল কে নির্মাণ করেছেন তাহলে বিনা দ্বিধায় উত্তরে আসবে মোঘল সম্রাট শাহজাহানের নাম। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে যে, সম্রাট শাহজাহান তাজমল নির্মাণের মূল্য উদ্যোক্তা হলেও এটি তৈরি করেছেন প্রায় ২০ হাজার শ্রমিক। যাদের মধ্যে অন্তত ৮ জন ছিলেন নামীদামী স্থপতি। অর্থ্যাৎ শাহজাহান ইতিহাসের স্রষ্টা হলে এর অংশ ছিলেন সেই কারিগরেরা। তেমনি বাংলাদেশের গর্ব পদ্মাসেতুর ইতিহাস তৈরির অংশ হিসেবে থেকে যাবেন এই হাজারো শ্রমিক।  

বাংলাদেশ সময়: ১০২৫ ঘণ্টা, জুন ০২, ২০১৯
এসএইচএস/এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।