শনিবার (১ জুন) ভোর থেকে সকাল পর্যন্ত ভারী বর্ষণ ও দমকা হাওয়ার কারণে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
এদিকে পানির তোড়ে মাধবপুরে উপজেলার আলাবক্স এলাকায় সোনাই নদীর পূর্বপাড়ের বেশকিছু অংশ ধ্বসে পড়েছে।
দুপুরে সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, ভারী বর্ষণের কারণে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে মাধবপুর উপজেলার আলাবক্সবপুর, বহরা, কাশিমপুর, বেলাপুর, মনোহরপুর, মঙ্গলপুর, কমলাপুর, কৃষ্ণপুর, শ্রীধরপুর, মনতলাসহ অর্ধশতাধিক গ্রামের বাড়িঘরে হাঁটুপানি জমে গেছে। তালিয়ে গেছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ সবজি ক্ষেত এবং বিভিন্ন রাস্তাঘাট। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন স্থানীয় লোকজন। বিশেষ করে বিভিন্ন রাস্তাঘাট তলিয়ে যাওয়ায় চলাচলে ব্যাঘাত ঘটেছে ঘরমুখো মানুষের।
উপজেলার উপরূপা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মুজিবুর রহমান বাহার বাংলানিউজকে জানান, পানি জমে তার প্রতিষ্ঠানের আসবাবপত্র ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং তলিয়ে গেছে অন্তত ৫০ কৃষকের সবজির বাগান। এতে কৃষকসহ স্থানীয় বাসিন্দারা ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। সরকারি সহায়তার দাবি জানিয়েছে তারা।
এদিকে হবিগঞ্জ শহরের বিভিন্ন রোডে সৃষ্টি হয়েছে জলাবদ্ধতা। পানি উন্নয়নে বোর্ড কার্যালয়ের সমানের সড়ক, শায়েস্তানগর হকার্স মার্কেট, শায়েস্তাগঞ্জ আবাসিক এলাকা, শ্যামলী এলাকা, গরুর বাজার, ঘাটিয়া এলাকাসহ শহরজুড়ে বাসগুলোতে হাঁটুপানি জমেছে। এতে আসবাবপত্র নষ্ট হওয়াসহ দুর্বিসহ হয়ে উঠেছে জনজীবন। এ দুর্ভোগের কারণ হিসেবে পুরাতন খোয়াই নদীসহ বিভিন্ন ডোবা এবং নালা দখল ও অপরিকল্পিত আবাসনকে দায়ী করছেন সচেতন মহল।
ঈদের ছুটিতে শহরে শপিংয়ে আসা মেডিকেল শিক্ষার্থী শাকীল হাসান ও মুবিন ঠাকুর বাংলানিউজকে বলেন, একটা বছর পড়ালেখার চাপে বাড়ি ফিরতে পারিনি। ঈদ উপলক্ষে ফিরেছি। তাও জলাবদ্ধতার কারণে আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে যেতে পারছি না। ক্ষোভ প্রকাশ করে তারা বলেন, মনে হচ্ছে ঢাকায় ফিরে যাই।
এ ব্যাপারে পরিবেশ আন্দোলন বাপার হবিগঞ্জ জেলা সাধারণ সম্পাদক ও খোয়াই রিভার ওয়াটার কিপারের সভাপতি তোফাজ্জল সোহেল বাংলানিউজকে জানান, পুরাতন খোয়াই নদী দখল এবং অপরিকল্পিত ড্রেনেজ ব্যবস্থার কুফল শহরবাসী দীর্ঘদিন ধরে ভোগ করছে। নগারিক সমাজ নিয়মিত আন্দোলন এবং প্রশাসনের লোকদের সঙ্গে যোগাযোগ করলেও কার্যকর পদক্ষেপ নিচ্ছে না কেউই। এভাবে চলতে থাকলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে।
শহরের শায়েস্তানগর এলাকার বাসিন্দা এবং শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপক ড. জহিরুল হক শাকীল বাংলানিউজকে জানান, জলাবদ্ধতায় ময়লা ও দুর্গন্ধযুক্ত পানি ভেঙে শহরবাসী চলাচলে দেখা দিয়েছে দুর্ভোগ। পরিকল্পনার অভাবে সারাবছর তো দুর্ভোগ লেগেই থাকে।
হবিগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের বিভাগীয় উপ সহকারী প্রকৌশলী এমএল সৈকত বাংলানিউজকে জানান, শুনেছি সোনাই নদী পাড় ভেঙে এলাকা প্লাবিত হয়েছে। আমরা পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব। একই বক্তব্য উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান সৈয়দ মো. শাহজাহানের।
মাধবপুরের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তাসনূভা নাশতারান বাংলানিউজকে বলেন, আমি মৌলভীবাজারে একটি সরকারি মিটিয়ে রয়েছি। কর্মস্থলে ফিরে তালিকা করে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৮০২ ঘণ্টা, জুন ০১, ২০১৯
এসএইচ