ঢাকা, শনিবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

নুসরাত হত্যায় ওসির বিচার বিভাগীয় তদন্ত চায় টিআইবি

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০১৩ ঘণ্টা, জুন ১, ২০১৯
নুসরাত হত্যায় ওসির বিচার বিভাগীয় তদন্ত চায় টিআইবি নুসরাত জাহান রাফি ও টিআইবির লোগো

ঢাকা: মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত হত্যা মামলায় পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) দেওয়া অভিযোগপত্র থেকে সোনাগাজী থানার তৎকালীন ওসি মোয়াজ্জেম হোসেনকে অব্যাহতি দেওয়া প্রশ্নবিদ্ধ বলে মনে করে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।

শুক্রবার (৩১ মে) এক বিবৃতিতে সংস্থাটি নৃশংস এই হত্যাকাণ্ডে পুলিশের ভূমিকা বিশেষ করে তৎকালীন ওসির দায়দায়িত্ব নিরূপণে বিচার বিভাগীয় তদন্তের দাবি জানিয়েছে।  

টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বিবৃতিতে বলেছেন, নুসরাত হত্যাকাণ্ডের পর পিবিআই উল্লেখযোগ্য তৎপরতার সঙ্গে তদন্ত শেষ করে অভিযোগপত্র জমা দিলেও এর পরিপূর্ণতা ও বস্তুনিষ্ঠতা সম্পর্কে আমরা আশ্বস্ত হতে পারছি না।

কারণ নুসরাত যৌন হয়রানির শিকার হওয়ার পর তার পরিবারের মামলা দায়েরের দিন থেকে তার ওপর নৃশংস হামলার পুরো সময়ে সোনাগাজী থানার সাবেক ওসির প্রশ্নবিদ্ধ ভূমিকার কথা গণমাধ্যম সূত্রে দেশবাসী জানতে পেরেছে।  

বিশেষ করে তার বিরুদ্ধে ‘হত্যাকাণ্ডটিকে আত্মহত্যা বলে ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা’ এবং ‘হত্যাকারীদের সুরক্ষা দিতে যোগসাজশের’ সুনির্দিষ্ট অভিযোগ উত্থাপিত হয়েছে। এমন বাস্তবতায় অভিযোগপত্রে তাকে অব্যহতি দেওয়ার কোনো যুক্তিগ্রাহ্য কারণ রয়েছে কিনা বা আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার সদস্য হওয়ায় তাকে দায়মুক্তি দেওয়া হচ্ছে কিনা- সেই প্রশ্ন ওঠাটা অস্বাভাবিক নয়।

ওসি মোয়াজ্জেমের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা দেওয়াটা যথার্থ, তবে যথেষ্ট নয় উল্লেখ করে ড. ইফতেখারুজ্জামান আরো বলেন, ‘ব্যক্তির পরিচয়ের কারণে এক্ষেত্রে ‘গুরু পাপে লঘু দণ্ড’ দিয়ে দায় সারার চেষ্টা হচ্ছে কিনা এরূপ প্রশ্ন ওঠা অযৌক্তিক নয়। নুসরাতকে জিজ্ঞাসাবাদের সময় আইনকানুনের ধার ধারেননি ওসি। জিজ্ঞাসাবাদের যে ভিডিও এই পুলিশ কর্মকর্তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দিয়েছেন তাতে দেখা গেছে কোনো নারী পুলিশ সদস্য সেখানে উপস্থিত ছিলেন না। একের পর এক বিব্রতকর প্রশ্ন করে তাকে রীতিমতো হেনস্তা করা হয়েছে। একদিকে নুসরাতকে সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন করে বাস্তবে তার জন্য নির্যাতনকারীর সঙ্গে যোগসাজশ করা হয়েছে ও অন্যদিকে তার অভিযোগকে ভিত্তিহীন প্রমাণের অপচেষ্টা হয়েছে।

শুধু ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় সীমাবদ্ধ রাখা ওই পুলিশ কর্মকর্তার বহুমুখী বিতর্কিত ভূমিকার একটি অংশকে বিচ্ছিন্ন ঘটনা হিসেবে দেখানোর চেষ্টা হিসেবে বিবেচিত হতে পারে উল্লেখ করে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, একজন প্রভাবশালী যৌন নির্যাতনকারীর বিরুদ্ধে মামলা করার পর নুসরাতকে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে পুলিশ প্রশাসন। এমনকি মাদ্রাসার ছাদে তার হাত পা বেঁধে আগুন দিয়ে গুরুতর আহত করার ঘটনাকে আত্মহত্যার চেষ্টা বলে চালিয়ে দেওয়ার চেষ্টাও করেছেন ঐ পুলিশ কর্মকর্তা। এছাড়া অভিযুক্তদের কয়েকজন পুলিশকে ‘ম্যানেজ’ করার কথাও বলেছে যেটা গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়। কর্তব্যরত পুলিশ কর্মকর্তার এমন কর্মকাণ্ডকে কেবলমাত্র দায়িত্বে অবহেলা বলে চালিয়ে দেওয়া যাবে না। বরং ঘটনার পরম্পরা বিবেচনায় নিলে ওই কর্মকর্তার সঙ্গে ঘাতকদের যোগসাজশের ও অপরাধীদের সুরক্ষা দেওয়ার প্রয়াসের অভিযোগ অমূলক-এমনটা বলার সুযোগ নেই।

নুসরাত হত্যাকাণ্ডে স্থানীয় পুলিশ বাহিনী বিশেষ করে ওসি মোয়াজ্জেমের ভূমিকা নিয়ে বিচার বিভাগীয় তদন্তের দাবি জানিয়ে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, দেশে নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতা ভয়াবহ ও গভীরতম উদ্বেগজনক পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। আইনের কঠোরতম প্রয়োগ নিশ্চিত করা না গেলে এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের কোনো সম্ভাবনা নেই। এমন অবস্থায় নুসরাতের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগের নিরপেক্ষ বিচার বিভাগীয় তদন্তের বিকল্প নেই। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা ও পুলিশ কর্তৃপক্ষের প্রযোজ্য বিভাগীয় পদক্ষেপ যথার্থ, তবে যথেষ্ট নয়। এই অপরাধে পুলিশ কর্মকর্তার দায় কতটুকু তা পরিপূর্ণ ও বস্তুনিষ্ঠভাবে নির্ধারণ করে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নিশ্চিত করার জন্য নিরপেক্ষ বিচার বিভাগীয় তদন্ত  না হলে, তা হবে এ ধরনের জঘন্য অপরাধকে সুরক্ষা ও প্রণোদনা দেওয়ার সামিল।

বাংলাদেশ সময়: ২০১০ ঘণ্টা, মে ৩১, ২০১৯
টিআর/জেডএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

জাতীয় এর সর্বশেষ