ঈদুল ফিতর ঘিরে বাবুরহাট এখন তুমুল জমজমাট। একইসঙ্গে অন্যান্য সময় নিয়মিত এ হাটে ১৫০ থেকে ২০০ কোটি টাকার বিকিকিনি হলেও ঈদ উপলক্ষে এটা বেড়ে এখন দ্বিগুণেরও বেশি হয়ে গেছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, সারাবছর যেমন ব্যস্ততা থাকে, তার চেয়ে বেশি বর্তমানে। ঈদ সামনে রেখে বেড়েছে পাইকারি ক্রেতাদের ভিড়। হাটের প্রতিটি অলিগলি ক্রেতা-বিক্রেতার পদচারণায় মুখর। দোকানের থরে থরে বিভিন্ন রঙ ও ডিজাইনের তৈরি থান কাপড়, শাড়ি, থ্রি-পিস, লুঙ্গি, সাটিন কাপড়, বিছানা ও পর্দার কাপড়ের পসরা সাজিয়ে বসেছেন ব্যবসায়ীরা। যেখান থেকে পছন্দ করে কিনছেন পাইকারী ক্রেতারা।
ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, ১৯৩৪ সালে জমিদার হলধর সাহা প্রায় ১১ একর জমির ওপর বাবুরহাট প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। এরপর অল্প দিনের মধ্যেই বাবুরহাট দেশব্যাপী খ্যাতি অর্জন করে ফেলে। ব্যবসা সফল হওয়ায় বর্তমানে এ হাটে পাঁচ হাজারেরও বেশি দোকান চলছে।
যদিও বাজারটিতে এক সময় কেবল রোববারেই হাট বসতো, এখন সপ্তাহে দুইদিন শুক্র ও শনিবার হাট বসে। তবে ঈদ সামনে রেখে সপ্তাহের সাতদিনই চলে বেচাকেনা; এবারও চলছে। এখানে বিক্রি হওয়া থান, পপলিন, ভয়েল, সুতি কাপড়, শাড়ি, লুঙ্গি, থ্রি-পিস, সাটিন কাপড়, বিছানা চাদর ও পর্দার কাপড় থেকে শুরু করে গামছা পর্যন্ত তৈরি হয় স্থানীয় তাঁত ও সহায়ক শিল্প প্রতিষ্ঠান থেকে। একইসঙ্গে দেশের প্রসিদ্ধ টাঙ্গাইলের শাড়ি, জামদানি, কাতানসহ বিভিন্ন প্রকারের কাপড়ের সম্ভার বাবুরহাটের সংগ্রহকে করেছে সমৃদ্ধ।
এই হাট ঘিরে নরসিংদীসহ নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুরে গড়ে উঠেছে কয়েক লাখ তাঁতকল। একইসঙ্গে কয়েকশ’ সহায়ক শিল্প প্রতিষ্ঠান।
প্রায় এক যুগ ধরে বাবুরহাটের পাইকারি কাপড় নিতে আসছেন হবিগঞ্জের ব্যবসায়ী সাজু মিয়া। বাংলানিউজকে তিনি বলেন, নিরাপদ পরিবেশ ও এক স্থানে সব কাপড় পাওয়ায় আমরা এ হাটে আসি। এখান থেকে কাপড় নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে ব্যবসা করছি। এবার ঈদের মৌসুমেও তার ব্যতিক্রম নয়। এখান থেকে রোজার প্রথম দিকে নেওয়া চালানের কাপড় প্রায় শেষ। কিন্তু ঈদের এখনও কয়েকদিন বাকি। তাই আবার কাপড় কিনতে এ হাটে এসেছি।
আরও পড়ুন>> ২১ দেশে নরসিংদীর লুঙ্গি, সপ্তাহে লেনদেন ১০০ কোটি টাকা
ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি সাশ্রয়ী মূল্যে কাপড় কিনতে বাবুরহাটে ভিড় করেন সাধারণ ক্রেতারাও। ঢাকার বাসাবো থেকে আসা গৃহবধূ মেহনাজ বেগম বাংলানিউজকে বলেন, ঈদে নিজের পরিবার ও স্বজনদের জন্য অনেক কাপড়ের প্রয়োজন হয়। গত কয়েক বছর ধরে আমি বাবুরহাটে ঈদের কেনাকাটা করছি। এক স্থানে অনেক প্রকারের কাপড় পাওয়া যাওয়ায় সময় ও অর্থ দুটোই সাশ্রয় হয়। দেশের নামিদামি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ঈদের মৌসুমে বাবুরহাটের ব্যবসায়ীরাও কাপড়ে এনেছেন আধুনিকতার আঙ্গিক। পাকিজা ফেব্রিক্স কালেকশনের এজিএম শংকর সাহা বাংলানিউজকে বলেন, প্রতিটি উৎসবেই আমরা পোশাকে নতুনত্ব আনার চেষ্টা করি। এবারও এনেছি। আমাদের কটন, মিনি, টুনি, পি কে লোন, পাখি, ওয়ান, ফ্লাওয়ার ও ফ্রেশ থ্রি-পিস ৪৫০ থেকে ১২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মা বিপি, এইছ ডি, পাখি ভিপি, কাজল, জারা, জারা গোল্ড, পপকন, নিউ লাইফ ও বনলতা শাড়ি ৪০০ থেকে ৭০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এদিকে, ঈদ উৎসবে অন্যান্য পোশাকের সঙ্গে চাই নতুন লুঙ্গি। তাই অন্যান্য বছরের মতো এবারও ঈদে লুঙ্গির ভালো বিকিকিনি হচ্ছে বাবুরহাটে। বোখারি লুঙ্গি কালেকশনের ব্যবস্থাপক বাদল সরকার বাংলানিউজকে বলেন, ক্রেতাদের চাহিদার সঙ্গে তাল মিলিয়ে আমরা লুঙ্গিতেও নতুনত্ব এনেছি। যা ৩৩০ টাকা থেকে এক হাজার ৮০০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে। এর মধ্যে বাটিক ও হুইপ জ্যাকেট লুঙ্গির ভালো সাড়া পাওয়া গেছে।
শেখেরচর-বাবুরহাট বণিক সমিতির সভাপতি বাকির হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, ঈদ উপলক্ষে বাবুরহাটের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। এছাড়া নিয়মিত এ হাটে ১৫০ থেকে ২০০ কোটি টাকার বেচাকেনা হলেও ঈদ উপলক্ষে এটা বেড়ে দ্বিগুণেরও বেশি হয়ে থাকে।
নরসিংদী চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রেসিডেন্ট আবদুল্লাহ আল মামুন বাংলানিউজকে বলেন, বাবুরহাটই হলো শিল্প এলাকা নরসিংদীর হৃদপিণ্ড। পুরো জেলার ব্যবসায়ীরাই তাকিয়ে রয়েছেন বাবুহাটের ঈদ বেচাকেনার দিকে। কারণ বেচাকেনা ভালো হলেই সুখে থাকবে এই শিল্পের সঙ্গে জড়িত জেলার প্রায় পাঁচ লাখ মানুষ।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৩০ ঘণ্টা, মে ৩১, ২০১৯
টিএ