ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

২১ দেশে নরসিংদীর লুঙ্গি, সপ্তাহে লেনদেন ১০০ কোটি টাকা

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৪০ ঘণ্টা, মে ২৯, ২০১৯
২১ দেশে নরসিংদীর লুঙ্গি, সপ্তাহে লেনদেন ১০০ কোটি টাকা লুঙ্গি দেখাচ্ছেন একজন ব্যবসায়ী। ছবি: বাংলানিউজ

নরসিংদী: আরামদায়ক পোশাক হিসেবে শহর কিংবা গ্রাম- সব জায়গার পুরুষের পছন্দ লুঙ্গি। ঘরের পোশাক তুমুল জনপ্রিয় এই লুঙ্গি এবার বাংলাদেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিশ্বের বহু দেশে যাচ্ছে; ছড়িয়ে পড়েছে। এদেশের লুঙ্গির গুণগত মান টের পেয়েছেন বিদেশিরা। বিশেষ করে নরসিংদীর লুঙ্গি তাদের কাছে চাহিদার শীর্ষে। যদিও মূলত বিদেশে থাকা বাংলাদেশিরাই এর আসল ক্রেতা।

ব্যবসায়ীদের মতে, এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশের লুঙ্গির মান সবচেয়ে ভালো। এ কারণে রফতানিতে অনেক সাড়া পাওয়া যাচ্ছে।

রঙে, ডিজাইনে ও গুণগত মানে ভালো হওয়ায় মালয়েশিয়া, সৌদি আরব, আমেরিকাসহ বিশ্বের ২১টি দেশে নরসিংদীর বিভিন্ন ব্র্যান্ডের লুঙ্গি রফতানি হচ্ছে। বছরে প্রায় সাত কোটি পিস নরসিংদীর লুঙ্গি রফতানি করা হয় বিদেশে। যার বাজার মূল্য প্রায় দুই হাজার কোটি টাকা। এটা সারা বছরের হিসাব। তবে ঈদ মৌসুমের ব্যবসা ভিন্ন। এবারের ঈদ ঘিরে এ বাজারের সাপ্তাহিক লেনদেন ছাড়িয়েছে ১০০ কোটি টাকা।

ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, স্বাধীনতার পর থেকে নরসিংদীর রায়পুরার চরসুবুদ্দি, হাইরমারা, নিলক্ষা, আমিরগঞ্জ, মনিপুরা, সদর উপজেলার হাজিপুর, ঘোড়াদিয়া, করিমপুর, নজরপুর, বাবুরহাট (শেখেরচর), মাধবদী, পৌলানপুর, ভাটপাড়া, ভগীরথপুর এলাকায় হস্তচালিত তাঁতে তৈরি হয় এই লুঙ্গি। লুঙ্গি বিক্রি করছেন ব্যবসায়ীরা।  ছবি: বাংলানিউজআরামদায়ক আর ঢিলেঢালা হওয়ায় লুঙ্গির ব্যবহার বাঙালি পুরুষের কাছে সবকিছুর ঊর্ধ্বে। এছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে লুঙ্গির বাজারের। রঙ ও ডিজাইনের বৈচিত্র্যে লুঙ্গি সবার কাছে আকর্ষণীয় এবং আরামদায়ক পরিধেয় পোশাক। একসময় নামে-বেনামে বিক্রি হওয়া লুঙ্গি এখন পরিচিতি পাচ্ছে নিজস্ব ব্র্যান্ডে।

স্ট্যান্ডার্ড, আমানত শাহ, এটিএম, অনুসন্ধান, পাকিজা, বোখারি, সোনার বাংলা টেক্সটাইল, ডিসেন্ট, ইউনিক, রুহিতপুরী, স্মার্ট, ফজর আলী, অনুসন্ধান-২, জেএম, স্কাই, ওয়েস্ট, রংধনু, অমরসহ ১২৫টি ব্র্যান্ডের লুঙ্গি বাজারে বিক্রি হচ্ছে। উদ্যোক্তাদের অভিমত, এশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে ভালো মানের লুঙ্গি তৈরি হয় বাংলাদেশে। এ কারণে দেশের বাইরে লুঙ্গির চাহিদা দিনদিন বাড়ছে।

পাকিজা লুঙ্গি কালেকশনের ব্যবস্থাপক মেরাজুল হক বাংলানিউজকে বলেন, ঈদ ঘিরে বাজারে প্রচুর পাইকারের আগমন ঘটেছে। ভোক্তারা যাতে সহজেই আমাদের লুঙ্গির দিকে আকৃষ্ট হন, সেটা চিন্তা করেই আমরা কিছু আকর্ষণীয় ডিজাইনের লুঙ্গি বাজারে এনেছি। বাজারে সাড়াও ভালো পাচ্ছি। আশা করছি এবারের ঈদে প্রত্যাশার চেয়ে বেশি বিক্রি হবে।

বোখারি লুঙ্গি কালেকশনের ব্যবস্থাপক বাদল সরকার বাংলানিউজকে বলেন, ঈদকে সামনে রেখে আমরা ৩০০ থেকে দুই হাজার টাকা মূল্যের বিভিন্ন মানের নতুন লুঙ্গি এনেছি। এর মধ্যে এ প্লাস, অজ, লেবেস্ট, স্বপ্নবিলাস, তরঙ্গ, মূল্যায়ন, অন্তর, শোভন ও সানন্দা অন্যতম।

তিনি বলেন, আধুনিকতায় লুঙ্গি ব্যবহারের প্রবণতা কমলেও ঈদকে সামনে রেখে সবাই নতুন লুঙ্গি কেনেন। এছাড়া ঘরের জন্য এটাই বেশি ব্যবহার করা হয়।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে কাপড় কিনতে আসা ব্যবসায়ী আল-আমিন বাংলানিউজকে বলেন, আরাম আয়েশের জন্য এখনও বাসায় লুঙ্গির কোনো বিকল্প নেই। বাবুরহাটে একসঙ্গে বিভিন্ন প্রকারের লুঙ্গি পাওয়া যায়। মান ভালো, দামেও সাশ্রয়। তাই বছরের অন্যান্য সময়ের মতো ঈদে লুঙ্গি কিনতে বাবুরহাটে এসেছি।

দীর্ঘদিন ধরে বাবুরহাটের কাপড় নিয়ে ব্যবসা করছেন চট্টগ্রামের ব্যবসায়ী জহিরুল ইসলাম। বাংলানিউজকে তিনি বলেন, হাট থেকে প্রায় ১০ লাখ টাকার থ্রি-পিস, প্রিন্টের শাড়ি ও ছাপা লুঙ্গি কিনেছি। নরসিংদীর লুঙ্গি মানে ভালো, চাহিদাও বেশি। তাই আমরা ঈদে লুঙ্গি কেনার জন্য বাবুরহাটে এসেছি। লুঙ্গি, ছবি: বাংলানিউজবাংলাদেশ লুঙ্গি ম্যানুফ্যাকচারার্স, এক্সপোর্ট অ্যান্ড ট্রেডার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও আমানত শাহ গ্রুপের চেয়ারম্যান হেলাল মিয়া বাংলানিউজকে বলেন, অতীতে দেশে লুঙ্গির চাহিদা মেটাতে স্থানীয় উৎপাদনের পাশাপাশি পার্শ্ববর্তী ভারত ও মিয়ানমার থেকে এটা আমদানি করা হতো। কিন্তু বর্তমানে দেশের পুরো চাহিদা পূরণ করে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে লুঙ্গি রফতানি করছে স্থানীয় প্রতিষ্ঠানগুলো। প্রতিবছরই ঈদে লুঙ্গির চাহিদা বেড়ে যায় দ্বিগুণ। এই চাহিদা সামাল দিতে ব্যস্ত সময় পার করেন বিক্রেতারা।

তিনি এও বলেন, সরকারি সহযোগিতা পেলে তৈরি পোশাকের পর লুঙ্গি শিল্প দিয়ে বিশ্ববাজারে নতুন জায়গা করে নেওয়া যাবে।

বাংলাদেশ সময়: ০৭৩৯ ঘণ্টা, মে ২৮, ২০১৯
আরএ/টিএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।