ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

শুধু দমনই যথেষ্ট নয়, জঙ্গি নির্মূল করতে হবে 

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৩২ ঘণ্টা, মে ২৬, ২০১৯
শুধু দমনই যথেষ্ট নয়, জঙ্গি নির্মূল করতে হবে  অনুষ্ঠােনে উপস্থিত অতিথিরা। ছবি: শাকিল/বাংলানিউজ

ঢাকা: শুধুমাত্র দমনই যথেষ্ট নয়, জঙ্গিদের রাজনৈতিক ও আদর্শিকভাবে নির্মূল করতে হবে বলে জানিয়েছেন একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির।

রোববার (২৬ মে) রাজধানীর সেগুনবাগিচায় জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘বাংলাদেশে আইএস-এর নতুন হুমকি ও কার্যক্রম: সরকার ও নাগরিক সমাজের করণীয়’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে তিনি একথা বলেন।

লিখিত বক্তব্যে শাহরিয়ার কবির বলেন, জঙ্গি সমস্যা শুধু বাংলাদেশের নয়, জঙ্গি ও মৌলবাদ সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যেসব দেশ যুদ্ধ ঘোষণা করেছে তারা এটিকে মাফিয়াদের মতো নিছক আইন শৃঙ্খলাজনিত সমস্যা মনে করছে, যা কি না শক্তি প্রয়োগ করে নির্মূল করা সম্ভব।

 

তিনি বলেন, ‘জঙ্গিদের আদর্শ নির্মূল না করে শুধু মাঠ পর্যায়ে কিছু খুচরো জঙ্গি হত্যা বা গ্রেফতার করে, কিংবা তাদের আস্তানা ধ্বংস করে নিশ্চিন্ত বোধ করলে ভবিষ্যতে বড় ধরনের বিপর্যয়ের আশঙ্কা থেকে যাবে। আর এ পর্যন্ত ৫৭ ধারায় যাদের গ্রেফতার করা হয়েছে তারা সকলেই লেখক বা ব্লগার। কোনো মোল্লা বা ওয়াজকারী একজনও এ ধারায় গ্রেফতার হয়নি।

বাংলাদেশে অবস্থানকারী রোহিঙ্গা শরণার্থীরা অদূর ভবিষ্যতে এদেশে জঙ্গি ও মৌলবাদ সন্ত্রাসের অন্যতম উৎস হতে পারে-এমন আশঙ্কা করে শাহরিয়ার কবির বলেন, জামায়াতে ইসলাম এবং তাদের সহযোগী জনবিচ্ছিন্ন ও কোণঠাসা হয়ে তাদের বিভিন্ন এনজিওর মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের ভেতরে জিহাদি জজবা সৃষ্টির জন্য বহুমাত্রিক কার্যক্রম চালাচ্ছে।  

‘২০০৫ সালে জামায়াত-বিএনপির জামানায় আমরা বাংলাদেশের ১২৫টি জঙ্গি মৌলবাদ সন্ত্রাসী সংগঠনের তালিকা প্রস্তুত করেছিলাম, যার ভেতর ১৭টি ছিল রোহিঙ্গাদের। ২০১৭ সাল থেকে বিপুল পরিমাণে রোহিঙ্গা শরণার্থীর আগমন ঘটার পর আমরা তদন্ত করে রোহিঙ্গা শিবিরে এ পর্যন্ত ৩৯টি জঙ্গি রোহিঙ্গা সংগঠনের সন্ধান পেয়েছি। ’

সভায় একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির উপদেষ্টা বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক বলেন, ওয়াজ মাহফিলে যারা বিদ্বেষমূলক কথা বলে তাদের আইনের আওতায় আনা উচিৎ। ওয়াজ মাহফিল করার আগে এবং মাহফিলে কি বলা হবে তা জানিয়ে প্রশাসনের অনুমতির নেওয়ার ব্যবস্থা করা যেতে পারে।  

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক, লেখক ও শিক্ষাবিদ মুনতাসীর মামুন বলেন, রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ পদে যদি কেউ নিযুক্ত থাকেন, তার বিরুদ্ধে প্রত্যন্ত গ্রামে কেউ একজন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কিছু লিখলেও তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়। কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ পদে না থাকলে ব্যবস্থা নেওয়া হয় না। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এখনো এমন অনেক কিছুই আছে যা সরানো প্রয়োজন এবং তাদের বলা উচিৎ কি ধরনের পোস্ট গ্রহণ করা হবে না।  

‘আমেরিকাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে যদি পদ্মাসেতু হয়, তবে ফেসবুক-ইউটিউবকে বারবার বলা স্বত্ত্বেও কেন এগুলো বন্ধ হচ্ছে না? সরকারের সময় এসেছে পদক্ষেপ নেওয়ার। এ বিষয়ে আমাদের দুজন মন্ত্রী আছেন, তারা  কী পদক্ষেপ নিচ্ছেন সেটিও আমাদের জানা দরকার। কেননা পরিস্থিতি যা এসেছে, তাতে মনে হয় না খুব দ্রুত মৌলবাদ থেকে আমরা বেরুতে পারবো’

শহীদজায়া শ্যামলী নাসরিন চৌধুরী বলেন, ওয়াজ মাহফিলে বিভিন্ন সময় মেয়েদের সম্পর্কে নানারকম কটূক্তি করা হয়, বিদ্বেষমূলক কথা বলা হয়। এতে সমাজে নারীর প্রতি সহিংসতা বৃদ্ধি পায়। যারা এ ধরনের অপপ্রচার চালায়, তাদের বিরুদ্ধে শাস্তির বিধান করা উচিৎ।

অনুষ্ঠানে জঙ্গি দমনের পাশাপাশি জঙ্গিবাদকে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিকভাবে মোকাবেলা করার জন্য সরকার ও নাগরিকদের সমন্বিতভাবে কাজ করার জন্য আহ্বান জানানো হয়। পাশাপাশি এ বিষয়ে কয়েকটি সুপারিশ তুলে ধরে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি।  

আয়োজনে অন্যদের মধ্যে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সহ-সভপতি সৈয়দ মাহবুবুর করিম, সাধারণ সম্পাদক কাজী মুকুল, শহীদজায়া সালমা হকসহ বিশিষ্টজনেরা উপস্থিত ছিলেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৩৪ ঘণ্টা, মে ২৬, ২০১৯
এইচএমএস/এমএ 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।